সৌরজগতের বেশ রহস্যময় গ্রহ ইউরেনাস। সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইডসমৃদ্ধ কিছু লক্ষণ ইউরেনাসের চাঁদে খুঁজে পাওয়া গেলেও দূরে থাকার কারণে গ্রহটির বিষয়ে এখন পর্যন্ত খুব বেশি তথ্য জানা যায়নি। এবার হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সংগ্রহ করা প্রায় এক দশকের তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউরেনাস গ্রহে কত ঘণ্টায় দিন হয়, তা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ইউরেনাস গ্রহের একটি পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে ১৭ ঘণ্টা, ১৪ মিনিট এবং ৫২ সেকেন্ড সময় প্রয়োজন হয়। এই হিসাবে গ্রহের অরোরা থেকে আসা চৌম্বক ক্ষেত্র ও রেডিও তরঙ্গ পরিমাপ করে জানা গেছে। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী ইউরেনাস গ্রহে ১৭ ঘণ্টা, ১৪ মিনিট এবং ৫২ সেকেন্ডে এক দিন হয়। নিজ অক্ষে এই সময়ে একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করে গ্রহটি। এই তথ্য নাসার ভয়েজার ২ মহাকাশযানের সংগ্রহ করা তথ্যের চেয়ে ২৮ সেকেন্ড বেশি।

আরও পড়ুনইউরেনাসের চাঁদে প্রাণের সম্ভাবনা১৭ নভেম্বর ২০২৪

ফ্রান্সের প্যারিস অবজারভেটরির বিজ্ঞানী লরেন্ট লামির নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী গত ১০ বছরের অরোরা পর্যবেক্ষণের রেকর্ড পরীক্ষা করে ইউরেনাস গ্রহের চৌম্বক মেরুর তথ্য প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘমেয়াদি এ পর্যবেক্ষণের ফলেই গ্রহটির নির্ভুল ঘূর্ণনকাল জানা সম্ভব হয়েছে। গ্যাসীয় এই গ্রহের বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুনঅন্য সব গ্রহে নতুন বছরের হিসাব কেমন৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ইউরেনাস গ্রহের ঘূর্ণনকালের সময় ভয়েজার ২ মহাকাশ যানের সংগ্রহ করা তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রথম অনুমান করা হয় ১৯৮৬ সালে। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ইউরেনাস গ্রহ পৃথিবীর তুলনায় বেশি হেলানো অবস্থায় আবর্তিত হচ্ছে। গ্রহের ঘূর্ণনের কারণে চৌম্বক মেরু একটি বিশাল বৃত্ত তৈরি করেছে। সেই বৃত্তের তথ্য পর্যালোচনা করেই ইউরেনাস গ্রহে কত ঘণ্টায় দিন হয়, তা নতুন করে জানা গেছে।

সূত্র: গ্যাজেটস ৩৬০

আরও পড়ুনবিভিন্ন গ্রহের কক্ষপথ আলাদা কেন২২ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ন হয়

এছাড়াও পড়ুন:

যে গ্রহকে খেয়ে ফেলছে তার নক্ষত্র

মিল্কিওয়ে ছায়াপথে পৃথিবী থেকে প্রায় ১২ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অ্যাকুইলা নক্ষত্রমণ্ডল অবস্থিত। সেখানকার দারুণ এক ঘটনার খোঁজ মিলেছে। ২০২০ সালের মে মাসে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো একটি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করেন। সেই গ্রহকে তার নক্ষত্র খেয়ে ফেলছে। নক্ষত্রটি আসলে তার জীবদ্দশার শেষ দিকে ফুলেফেঁপে লাল দানবে পরিণত হওয়ার সময় গ্রহটিকে গ্রাস করতে শুরু করে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের নতুন পর্যবেক্ষণ সেই ঘটনার ময়নাতদন্ত করছে। দেখা যাচ্ছে, গ্রহটির পতন প্রাথমিকভাবে যা ভাবা হয়েছিল, তার থেকে ভিন্নভাবে ঘটেছে। গবেষকেরা বলেছেন, নক্ষত্র গ্রহের কাছে আসার পরিবর্তে গ্রহটি নক্ষত্রের কাছে ধেয়ে আসতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহকে কক্ষপথ থেকে গ্রাস করতে থাকে।

নক্ষত্রের চারপাশে একটি বলয় তৈরি করা উত্তপ্ত গ্যাসের মাধ্যমে গ্রহটিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলতে দেখা যায়। বিজ্ঞানী রায়ান লাউ বলেন, গ্রহকে যখন গ্রাস করে ফেলে, তখন নক্ষত্রের থেকে প্রচুর পরিমাণে উপাদান নির্গত হয়। ধূলিময় অবশিষ্ট অনেক উপাদান নক্ষত্র থেকে বের হয়ে আসে। নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়ে সামান্য লালচে ও কম উজ্জ্বল। ভর সূর্যের প্রায় ৭০ শতাংশ। আর যে গ্রহকে গ্রাস করেছে, তা হট জুপিটার শ্রেণির বিশাল গ্রহ। নক্ষত্রের খুব কাছে বলে এমন গ্রহ উচ্চ তাপমাত্রার গ্যাসীয় গ্রহ।

হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বিজ্ঞানী মর্গান ম্যাকলিওড বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করছি সম্ভবত একটি বিশাল গ্রহের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতি গ্রহের ভর কয়েক গুণ গ্রহটিকে নক্ষত্র গ্রাস করে নিয়েছে।’

বৃহস্পতি আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ। গবেষকেরা বিশ্বাস করেন, গ্রহটির কক্ষপথ তার নক্ষত্রের সঙ্গে মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়ার কারণে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে যায়। পরে সেই গ্রহকে গ্রাস করে নেয় নক্ষত্র। প্রথম নক্ষত্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে ধ্বংস করে দেয়। নাক্ষত্রিক বায়ুমণ্ডলের মধ্য প্রবেশের মধ্য দিয়ে গ্রহটি দ্রুত নক্ষত্রের মধ্যে পতিত হয়। গ্রহটি ভেতরের দিকে পতিত হয় ও নক্ষত্রের গভীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্যাসীয় বাইরের স্তর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এমন ঘটনা আমাদের সৌরজগতে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। যদিও আমাদের সৌরজগতের কোনো গ্রহ সূর্যের এত কাছে অবস্থিত নয়। আজ থেকে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন বছর পর সূর্য লাল দানব পর্যায়ে বাইরের দিকে প্রসারিত হবে। তখন সম্ভবত বুধ ও শুক্রকে গ্রাস করবে। সেই হিসেবে পৃথিবীকেও গ্রাস করতে পারে।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে গ্রহকে খেয়ে ফেলছে তার নক্ষত্র