মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনে ক্ষোভ, ব্যাখ্যা চান চারুকলার শিক্ষার্থীরা
Published: 13th, April 2025 GMT
নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম মঙ্গল শোভাযাত্রার পরিবর্তে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বর্তমান ও প্রাক্তন একদল শিক্ষার্থী। আয়োজক কমিটিকে নাম পরিবর্তনের যথার্থ কারণ ব্যাখ্যার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ রোববার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে তাঁদের এ অবস্থান তুলে ধরেন। শোভাযাত্রা আয়োজন ঘিরে যে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার দুর্বলতা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। পাশাপাশি এবার অন্যান্য বছরের মতো শিক্ষার্থীদেরকে শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্ব না দেওয়ার সমালোচনা করেছেন তাঁরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা এই শোভাযাত্রা ঘিরে দ্বন্দ্বমুখর পরিস্থিতির সমাধান চাওয়ার পাশাপাশি নববর্ষের আয়োজনের সাফল্য কামনা করে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে চারুকলার প্রিন্ট মেকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহরা নাজিফা বলেন, ‘এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, যা এবার “বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা” নামে পালিত হবে। আমরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি না। চারুকলার শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছাড়াই এ ধরনের সিদ্ধান্তের ওপর প্রশ্ন রাখছি।’
জাহরা নাজিফা বলেন, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটির ‘মঙ্গল’ অংশটি সম্পর্কে হাস্যকর কিছু কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে এ নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জন্য ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়ই আসে ১৯৯৬–এর বৈশাখের তথা এপ্রিলের আরও তিন মাস পরে জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে।
শিক্ষার্থী জাহরা নাজিফা বলেন, যে সিনেট সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে সভায় শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি। এ আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদ জামিল বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্বমুখর পরিস্থিতি তৈরি হলে গত মাসের শেষের দিকে আমরা সবাইকে নিয়ে আলোচনা করি। সেখানে সবাই একমতে আসতে পারি। নামটা নিয়ে সেদিন কথা বলি। সেখানে চারুকলার ডিন বলেছেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন যেন নাম অপরিবর্তিত থাকে। পরে অজুহাত দেখিয়ে নাম পরিবর্তন করা হয়। নাম পরিবর্তনের কোনো যৌক্তিক কারণ তিনি জানাননি।’
চারুকলার সাবেক এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘নাম পরিবর্তনে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা যৌক্তিক কারণ জানতে চাই। ’৯৬ সালের পরিবর্তন অন্যায় হলে এটাও অন্যায়।’
ফ্যাসিবাদের মোটিফে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিচার দাবি করে জাহরা নাজিফা বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদের মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অপরাধীর সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত চাই। যাদের গাফিলতি ছিল, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তাব রাখছি।’
শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘চারুকলার এই আয়োজন ১৯৮৯ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে হয়ে এলেও একটা অসংলগ্ন যুক্তি দেখিয়ে তা শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের সমাধান চেয়ে জাহরা নাজিফা বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের সমাধান চাই। আগামী দিনে প্রতিটি সিদ্ধান্তে প্রধান অংশীজন হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এর জন্য বাহাসের প্রয়োজন হলেও আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত আছি।’
এর আগে গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের কথা জানিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘নববর্ষে শোভাযাত্রা আয়োজন করার চর্চা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। তখন এর নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। সে সময়ের ইতিহাস খুঁজলে দেখতে পাবেন, সবার অংশগ্রহণ আরও স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে এ নাম পরিবর্তন হয়। এবারের বৃহৎ এ আয়োজনে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা আগের নামটি পুনরুদ্ধার করেছি। এটি কোনো পরিবর্তন নয়, বরং পুনরুদ্ধার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগের নামে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো চাপ ছিল না। মঙ্গল শব্দ নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতিবছরই এ নাম নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। মঙ্গলের ব্যানারের আয়োজন নিয়েও বিতর্কের অভাব ছিল না। গত বছরগুলোতে এ নামটাকে খারাপভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ভূখণ্ডে যারা বসবাস করে, তাদেরকে যে নামে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে, আমরা সে নামেই ফিরে এসেছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ র কল র
এছাড়াও পড়ুন:
বৈশাখে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস
বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখের নববর্ষ উদযাপন। নানা আয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে দিনটি। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় পয়লা বৈশাখের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র। রাজধানীর মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, চিড়িয়াখানার প্রধান ফটকের সামনে প্রচণ্ড ভিড়। প্রাণী ও পাখির খাঁচাগুলোর সামনে মানুষের ভিড়। নারায়ণগঞ্জ সদর থেকে বাবা-মা ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, “একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি।পয়লা বৈশাখ ও ঈদে ছুটি পাই। ঈদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। নববর্ষে আজ সবাই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছি।”
আরো পড়ুন:
রঙে-আলোয় উজ্জ্বল বর্ষবরণ
চট্টগ্রামে নববর্ষের পূর্ব নির্ধারিত সব অনুষ্ঠান হবে: জেলা প্রশাসন
কথা হয় দর্শনার্থী মরজিনা আহসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “সকালে ভাই-বোনরা সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছি। সবাইকে নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এলাম।”
সানাউল হক নামের একজন দর্শনার্থী বলেন, “ঈদের সময় বাবা অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাইনি। আজ পয়লা বৈশাখ বের হয়েছি।”
জাতীয় চিড়িয়াখানার তথ্য অনুযায়ী, বাঘ, ভাল্লুক, হরিণ, সিংহ, বানর, জলহস্তী, কুমির, সাপ, ইম্পালা, গয়াল,উট পাখি, লামা, ময়না, টিয়া, ক্যাঙারু, জিরাফ, জেব্রা, হাতি, ময়ূর, উটপাখি, ইমু, শঙ্খচিল, কুড়াবাজ, তিলাবাজ, গন্ডার, হায়েনাসহ ১৩৬ প্রজাতির তিন হাজার ৩৪টি প্রাণী ও পাখি রয়েছে চিড়িয়াখানায়।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় আজ। সরকারি ছুটি হওয়ায় আজ দর্শনার্থীর চাপ বেশি। চিড়িয়াখানার ভেতরে ধুলা যাতে না হয়, সে কারণে নিয়মিত পানি ছিটানো হয়।”
ঢাকা/আসাদ/সাইফ