ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের তীব্র আপত্তির পরও বাড়ল গ্যাসের দাম। নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৩ শতাংশ। প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে তাদের। পুরোনো শিল্পকারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম। প্রতিশ্রুত শিল্প গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে।

আজ সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, দেশের গ্যাস কমার সঙ্গে সঙ্গে এলএনজি আমদানি বাড়তে থাকে। এলএনজির বাড়তি দাম দিতে গিয়ে চাপে পড়ে পেট্রোবাংলা। তারা ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল। তবে গণশুনানিতে বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী দাম বৃদ্ধি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।

দাম বাড়ানো হলেও এর সপক্ষে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বিইআরসি। দাম বৃদ্ধিতে সরকার কত টাকা বাড়তি আয় করবে, তা জানে না কমিশন। সাধারণত কোম্পানিগুলোর রাজস্ব চাহিদা হিসাব করে বিইআরসি। এরপর ঘাটতি পূরণে সরকার ঘোষিত ভর্তুকির ভিত্তিতে মূল্য সমন্বয় করা হয়।

কিসের ভিত্তিতে দাম বাড়ানো হলো— এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব চাহিদা ধরলে দাম অনেক বেশি বাড়াতে হতো। তাই ভোক্তার জন্য সহনীয় রাখতে ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভর্তুকিরও হিসাব করা হয়নি।
রাজস্ব চাহিদা যাচাই ছাড়া এভাবে দাম বৃদ্ধি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে করা হয়েছে কিনা; জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রেসক্রিপশনে করা হয়নি।

নতুন ও পুরোনো শিল্পে আলাদা দাম রেখে যে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে, এটা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে কিনা; এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, বিইআরসির আইনি আওতার মধ্যে থেকেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিনিয়োগ কমার বিষয়টা এখনই বলা যাবে না। নতুন বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে কিনা তা নজরে রাখা হবে। নতুন যারা আসবে, তারা যদি দেখে তাদের পোষাবে, তাহলে তারা আসবে। তারা বিকল্প জ্বালানিও ব‍্যবহার করতে পারে।

দাম ঘোষণার সময় বলা হয়, শুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা করে ‘সিস্টেম লস’ কমাতে বলেছিল। এটা দ্রুত কমানো খুব কঠিন। এ নিয়ে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়ন করা হবে। পেশাদার নিরীক্ষক নিয়োগ করে আয়-ব্যয়ের যথার্থতা যাচাই করা হবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি বাড়াতে বলা হয়েছে।

বিইআরসির আদেশ বলছে, শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (ক্যাপটিভ) ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ছিল ৩১ টাকা ৫০ পয়সা। এটি বেড়ে হয়েছে ৪২ টাকা। আর শিল্প সংযোগে গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪০ টাকা। নতুন এ দাম আজ থেকেই কার্যকর হবে। ১৩ এপ্রিল এর পরে যত গ্যাস সংযোগ অনুমোদন করা হবে, তাদের বাড়তি দাম দিতে হবে। এর আগ পর্যন্ত যেসব সংযোগ আবেদনের চাহিদাপত্র ইস্যু করা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে নতুন দাম। আর পুরোনো শিল্প গ্রাহকেরা অনুমোদিত লোডের বাইরে যতটুকু ব্যবহার করবেন, ততটুকুর নতুন দাম দিতে হবে।

এর আগে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয় শিল্পে গ্যাসের দাম। শিল্প ও ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটের দাম করা হয় ৩০ টাকা। পরে গত বছর ক্যাপটিভে দাম বাড়িয়ে করা হয় ৩১ টাকা ৫০ পয়সা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ইআরস র নত ন দ ম ব যবহ র অন ম দ

এছাড়াও পড়ুন:

শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ল ৩৩ শতাংশ

বিদ্যমান শিল্পে অপরিবর্তিত রেখে বাড়ল নতুন শিল্পের গ্যাসের দাম। শিল্পের বয়লারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটার প্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভে ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সে হিসেবে দেশের শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দাম ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান, সদস্য সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, আব্দুর রাজ্জাক ও শাহীদ সারোয়ার।

নতুন শিল্পের পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা দরে বিল দিতে হবে। নতুন দর চলতি এপ্রিল মাসের বিল থেকেই কার্যকর হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ জানান, শিল্প গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বিল ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম ৩০.৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪২ টাকা করা হয়েছে।

বিদ্যমান গ্রাহকদের দর (শিল্প ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা) অপরিবর্তিত রেখে নতুন ও প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল পেট্রোবাংলা। প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের (ইতোমধ্যে অনুমোদিত) অর্ধেক বিল বিদ্যমান দরে, অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।

অন্যদিকে, নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করা।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ল ৩৩ শতাংশ