রাজবাড়ীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় আ.লীগের ২০ নেতা-কর্মী কারাগারে
Published: 13th, April 2025 GMT
রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে করা মামলার আসামি আওয়ামী লীগের ২০ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে রাজবাড়ী সদর আমলি আদালতের বিচারক মো. তামজিদ আহম্মেদ তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন রাজবাড়ী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুদ্দীন আহম্মেদ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী সাজ্জাদুল কবির, ইব্রাহিম মণ্ডল, দেলোয়ার হোসেন, সোহরাব রিপন মোল্লা, রনি, আমিরুল ইসলাম, আইয়ুব শেখ ও পান্নু সরদার।
রাজবাড়ী দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকলেও তাঁরা শর্ত ভঙ্গ করেছেন। যে কারণে আজ তাঁরা সদর আমলি আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে শিক্ষার্থী রাজীব মোল্লা বাদী হয়ে সদর থানায় ১৭০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টেলিযোগাযোগ নামেই অধিদপ্তর, বাস্তবে ‘ঢাল-তলোয়ারহীন’
টেলিযোগাযোগ–সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় এবং নিরাপদ ইন্টারনেট ও টেকসই টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য–উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয় টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর। তবে যাত্রা শুরুর ১০ বছর পরও উল্লিখিত কোনো কাজেই অধিদপ্তরের তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই, বরং ওই সব কাজের জন্য সরকারের পৃথক সংস্থা রয়েছে। বিটিটিবির কর্মীদের চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষা ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির তেমন কোনো কার্যক্রমের নজির পাওয়া যায় না। যদিও অধিদপ্তরের দাবি, মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট।
বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড (বিটিটিবি) বিলুপ্ত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কয়েক হাজার কর্মীর চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ২০১৫ সালে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর গঠন করে সরকার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন এ অধিদপ্তরের কর্মীদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডে (বিটিসিএল) প্রেষণে কর্মরত। এ ছাড়া টেলিটক, টেশিস, কেব্ল শিল্প সংস্থা, সাবমেরিন কেব্লস কোম্পানিতেও রয়েছেন কিছু কর্মী। প্রেষণে থাকা কর্মীরা অবসরের আগে অধিদপ্তরে এসে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শেষ করেন। টেলিকম ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই এখানে কাজ করেন।
টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের বিষয়ে অবগত আছেন উল্লেখ করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে বলেন, বিটিআরসির সঙ্গে টিম হয়ে কাজ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে অধিদপ্তরকে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। টেলিকম খাতের অপারেটরদের সেবার মান পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের যুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এখানে টেলিকম খাতের মেধাবীরা কাজ করেন এবং তাঁদের এই মেধাকে কাজে লাগাতে না পারলে এটা সংকুচিত হয়ে যাবে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যাঁদের বসানো হয়, তাঁরা চাকরিজীবনের শেষে এখানে যোগ দেন। এ ছাড়া তাঁদের বরাদ্দের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি ব্যয় হয় বেতন–ভাতা বাবদ।বিটিটিবির কর্মীদের ‘পুনর্বাসনকেন্দ্র’
অধিদপ্তরের কার্যক্রম, বিভিন্ন প্রতিবেদন ও তাদের দেওয়া তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি মূলত বিটিটিবির কর্মীদের পুনর্বাসনকেন্দ্র। টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর গঠনের পটভূমি, উদ্দেশ্য ও প্রধান কাজের শুরুতেই রয়েছে বিটিটিবির কর্মীদের চাকরি রক্ষা এবং তাঁদের বদলি, প্রেষণ, পদোন্নতি, অবসর প্রস্তুতি ছুটি, পেনশন ইত্যাদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা।
টেলিযোগাযোগ খাত ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশনসের (ডিওটি) আদলে দেশে একটি সংস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া বিটিটিবির কর্মীদের অনেকে কোম্পানিতে চাকরি করতে চাননি। তাই তাঁদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর হয়। কিন্তু তাঁদের কাজ অন্য সংস্থা করায় অবসরের অপেক্ষা করা ছাড়া উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মীর তেমন কিছু করার থাকে না। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যাঁদের বসানো হয়, তাঁরা চাকরিজীবনের শেষে এখানে যোগ দেন। এ ছাড়া তাঁদের বরাদ্দের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি ব্যয় হয় বেতন–ভাতা বাবদ।
বিটিআরসির সঙ্গে টিম হয়ে কাজ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে অধিদপ্তরকে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। টেলিকম খাতের অপারেটরদের সেবার মান পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের যুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছেফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী‘অপ্রয়োজনীয় বিনিয়োগ’
টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের দুটি প্রকল্পের একটি সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স (সিটিডিআর)। প্রথম পর্যায়ে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল মেয়াদে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এর আওতায় ক্ষতিকর ওয়েবসাইট শনাক্ত ও সেগুলো ব্লক করতে আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও নিক্সে ফায়ারওয়াল ধরনের সরঞ্জাম বসানো হয়।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে ব্যান্ডউইডথ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থাপিত সরঞ্জামের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল মেয়াদে সিটিডিআর প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় হাতে নেওয়া হয়। এতে ব্যয় হয় ৪২ কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয় ও আইআইজি সূত্রে জানা যায়, সিটিডিআর প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক ও ইউটিউবের নির্দিষ্ট কোনো আধেয় (কনটেন্ট) ব্লক করে দেওয়া। কিন্তু প্রযুক্তিগত দিক থেকে তা সম্ভব নয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মাধ্যমগুলোর ওপরই নির্ভর করতে হয়। এ অবস্থায় তারা পুরো ওয়েবসাইট ধরে ব্লক করার কার্যক্রম হাতে নেয়। মূলত পর্নো ও জুয়ার সাইট বন্ধ করে থাকে তারা।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে ব্যান্ডউইডথ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থাপিত সরঞ্জামের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল মেয়াদে সিটিডিআর প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় হাতে নেওয়া হয়। এতে ব্যয় হয় ৪২ কোটি টাকা।আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রথমে এটা শুরু হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সাইট ব্লক করার জন্য যে কাজ, তা আইআইজিগুলোই পারে। এ জন্য এত টাকা খরচ করার প্রয়োজন ছিল না।
দেশে যে পরিমাণ জুয়ার সাইট ও অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে, তাতে তো এই প্রকল্পের বিনিয়োগ অর্থহীন। যেসব সাইট বন্ধ করার কথা বলা হয়, তা ভিপিএন (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) দিয়ে সহজেই ব্যবহার করা যায়। সাইট বন্ধের মতো সেন্সরশিপ না করে বরং সচেতনতা বাড়ানো দরকার ছিলতথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবিরআইআইজি কোম্পানিগুলো জানায়, আইআইজি থেকে আইএসপিতে (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা) ব্যান্ডউইডথ যাওয়ার পথেই অধিদপ্তরের ফায়ারওয়ালগুলো বসানো। অর্থাৎ দেশের গ্রাহকের কাছে যত আধেয় যায়, সেগুলো এর মধ্য দিয়ে যায়। এসব যন্ত্রপাতি বসানোয় বিদ্যুতের ব্যবহারও বেশি হয় এবং ইন্টারনেটের মানও পড়ে যায়।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যে পরিমাণ জুয়ার সাইট ও অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে, তাতে তো এই প্রকল্পের বিনিয়োগ অর্থহীন। যেসব সাইট বন্ধ করার কথা বলা হয়, তা ভিপিএন (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) দিয়ে সহজেই ব্যবহার করা যায়। সাইট বন্ধের মতো সেন্সরশিপ না করে বরং সচেতনতা বাড়ানো দরকার ছিল।