রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ। বাংলা বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানাতে বাঙালি মেতে উঠবে নানা আয়োজনে। বাঙ্গালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্যতম দিনটিকে কেন্দ্র করে সর্বত্রই বইছে উৎসবের আমেজ। জাতি-গোত্র-বর্ণ সব ভেদাভেদ ভুলে সকলে একযোগে দিনটি পালন করবে। বৈশাখের আগমনীকে নতুন সুরে, গানে, তালে বরণ করে নিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগসহ একাধিক বিভাগ নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এখনও ব্যানার, ফেস্টুন তৈরি করা হচ্ছে। শোভাযাত্রায় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান, বাঙালির ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরতে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন মোটিফ। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার আয়োজনের ব্যাপ্তি কিছুটা কমেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা কেউ ব্যস্ত শখের হাড়ির ভাস্কর্য বানাতে, আবার বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে রঙ তুলিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টায় কেউ ব্যস্ত ঝাঁপি রাঙাতে, কেউ কেউ বানাচ্ছে ডাকবাক্স। আবার কেউ ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে ২৪ ফুট লম্বা কলম বানাচ্ছেন। চারুকলা অনুষদ চত্বরে নবীন আঁকিয়েরা গভীর মনোযোগে জলরঙের ছবি আঁকছেন। মাঠজুড়ে বিরাজ করছে বাঁশের ফালি দিয়ে শখের হাঁড়ি ও পালকি তৈরির ব্যস্ততা। আবার কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্যের মানবতার বিপর্যয়কে প্রতীকী করে শলাকা দিয়ে মিসাইল বোমা ও ড্রোন প্লেন বানিয়েছেন।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা দুটি বিষয়কে প্রতীক হিসেবে ধারণ করে এবারের শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে।

এ বিষয়ে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, এবারের আয়োজনে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী চব্বিশের প্রতিফলন থাকছে, যা এবারের বৈশাখে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যেমন মুগ্ধকে স্মরণ করে পানির বোতল থাকছে, ২৪শের চেতনায় ২৪ ফুট কলম থাকছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের মানবতার বিপর্যয়ও তুলে ধরা হবে। বিমান থাকছে। আয়োজনে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ২৪ শের কিছু স্লোগানও। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হবে। প্রথমে উদ্বোধনী গানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ আয়োজন শুরু হবে, দুটো গানের পর নাচ। তারপর উপাচার্য র‌্যালি উদ্বোধন করবেন। র‌্যালি শেষে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে, চলবে সন্ধ্যার পর্যন্ত । বিগত বছরে তিন দিনব্যপী অনুষ্ঠান হলেও এ বছর সীমিত করা হয়েছে। একদিনই আয়োজন হবে। 

এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডীন মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও আয়োজন থাকছে। এবারও শোভাযাত্রা হবে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। তবে আমাদের সকল শিক্ষার্থীরা এখনো এসে পৌঁছায়নি। এটা তো শিক্ষার্থীদের আয়োজন। তাই আয়োজন কিছুটা সীমিত।
 
নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ আয়োজন আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক আয়োজন। এটা সমগ্র বাঙালি জাতির উৎসব। তাই আশা করছি তেমন অপ্রীতিকর কোনো বিষয় হবে না। আয়োজন রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ীই হবে। 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রস ত ত অন ষ ঠ ন চ র কল

এছাড়াও পড়ুন:

পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ উৎসবের একাল-সেকাল

ক্ষণে ক্ষণে ডেকে চলছে বিজু পেক্কো (বিজু পাখি)। বন-পাহাড়ে ফুটেছে বিজু ফুল। পাখির কলতান আর রঙিন ফুলের সৌরভ—এতেই উৎসবের আনন্দধ্বনি ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ে পাহাড়ে। এই জনপদে এখন চলছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর বর্ষবরণ উদ্‌যাপন। ধর্মীয় রীতি ও প্রথা পালনের পাশাপাশি আনন্দ-উদ্‌যাপনেও আয়োজনের কোনো কমতি নেই। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর এই উৎসব এখন ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের ‘বৈসাবি’ হয়েছে আগের চেয়ে আরও বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য। উৎসবে যুক্ত হয়েছে নানা আয়োজন। সময়ের পাটাতনে দাঁড়িয়ে তাই প্রশ্ন জাগে, তাহলে ৩৫ থেকে ৪০ বছর আগে কেমন ছিল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর বর্ষবরণ ও বিদায় উদ্‌যাপন? তখন কীভাবে উদ্‌যাপন করা হতো মারমাদের সাংগ্রাইং, ম্রোদের সাংক্রান, ত্রিপুরাদের বৈসু, চাকমাদের বিজুসহ অন্য জাতিগোষ্ঠীগুলোর এই উৎসব। তখনকার বর্ষবরণের আয়োজন জানার আগ্রহ ও কৌতূহল রয়েছে অনেকের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কী কী পরিবর্তন এসেছে? আগের সে স্বতঃস্ফূর্ততা আছে, নাকি অনুষ্ঠাননির্ভর হয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর এই উৎসব? এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবরণ ও বিদায় আয়োজনের বিবর্তন।

রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি—দেশের এই তিন পার্বত্য জেলায় বসবাস ১১টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর। তাদের মধ্যে আটটি জাতিগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসব হচ্ছে ‘বৈসাবি’। মূলত ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাইয়ের সঙ্গে প্রায় মিল থাকা ম্রোদের চাংক্রান, খেয়াংদের সাংলান, খুমিদের চাংক্রাই ও চাকদের সাংগ্রাই এবং চাকমাদের বিজু ও তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু উৎসবের আদ্যক্ষর থেকে ‘বৈসাবি’ নামের শব্দটি নেওয়া হয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বম, পাংখোয়া ও লুসাইরা খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্‌যাপন করেন।

আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে উৎসব অর্থে বৈসাবি শব্দটি ধীরে ধীরে পরিচিতি লাভ করেছে। এর আগে বিজু, বিষু, বৈসু, সাংগ্রাইং, সাংক্রানসহ আরও বিভিন্ন নামে উৎসব হয়েছে। উৎসবটি সবার অভিন্ন, শুধু নাম ভিন্ন। তবে বেশ কিছু বছর ধরে পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে বৈসাবি শব্দটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেকের মতে, বৈসাবি নামে পাহাড়ে কোনো উৎসব নেই। অন্যরা বলছেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রয়োজনেই বৈসাবি শব্দটি এসেছে।

বৈসাবি নাম আসার সঙ্গে লোকজ উৎসবটির দৃশ্যমান নাগরিক ছোঁয়াও এসেছে। তখন থেকে শোভাযাত্রা, ফুল ভাসানো, মৈত্রী পানিবর্ষণ, ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়াসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। অবশ্য বান্দরবানে ১৯৭০–এর দশকের মাঝামাঝিতে পাশের দেশ মিয়ানমারের অনুকরণে মৈত্রী পানিবর্ষণ শুরু হয়েছিল। অভিন্ন নাম বৈসাবি করার আগে উৎসবের কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না।

প্রবীণদের গোসল করানোর আয়োজন। গতকাল খাগড়াছড়ির আপার পেরাছড়া এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি ড্রোন শো’র মাধ্যমে শ্রদ্ধা
  • ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈষম্যহীন নতুন দেশ গড়ে তুলা সম্ভব হবে’
  • সুরে-গানে-তালে বৈশাখকে বরণ করল রাবি
  • ফ্যাসিস্ট কোনো রাজনীতির অংশ নয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • শোভাযাত্রায় তরমুজের মোটিফ দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি
  • কেউ আসছেন না জেনে, কেউ–বা বর্ষবরণের স্থানটি দেখতে
  • এবারের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • ‘উৎসবের উচ্ছ্বাসে আজ মেতেছে সারা দেশ’
  • পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ উৎসবের একাল-সেকাল