চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জ্বালানি হিসেবে বোতলজাত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে উঁচুনিচু রাস্তায় ঝাঁকি খেয়ে এসব বোতলের রেগুলেটর ঢিলা বা ছিদ্র হয়ে যখন তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মেয়োদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরণেও ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অটোরিকশায় বোতালজাত গ্যাসের ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যাত্রীদের নিরাপত্তায় আগ্নিনির্বাপক যন্ত্র সংরক্ষণেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, জেলায় গত দশ বছর ধরে অল্প ভাড়ায় দ্রুত যাতায়াতের অন্যতম বাহন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কাছের কিংবা দূরের যাত্রায় মানুষের কাছে জনপ্রিয় তিন চাকার এ বাহনটি। তবে পেট্রোলিয়াম গ্যাসে চলা বাহনটিতে নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 

বাহনটির পেছনের অংশে অথবা সিটের নিচে গ্যাসের বোতল রেখেই যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে। এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছেন মানুষজন।

সিএনজি অটোরিকশার চালকরা জানান, নতুন করে বাজারে যেসব সিএনজিচালিত অটোরিকশা উঠছে, সেগুলোয় মানসম্মত গ্যাসের বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এখনও পুরাতন সব গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাসের বোতল। এছাড়া অনেক চালক পুরাতন গ্যাসের বোতলকে রঙ করে অনভিজ্ঞ কারিগরের কাছে গিয়ে স্থায়ীভাবে গ্যাসের চেম্বার বানিয়ে নিচ্ছেন। এতে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজিচালক বলেন, “নতুন করে যেসব গাড়ি এখন রাস্তায় নামছে সেগুলোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। একেবারেই নেই তা বলা যাবে না। কারণ, সেগুলোর সিলিন্ডার অনেক মজবুত। তবে আগের গাড়িগুলোয় এখনও বোতলজাত গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন চালক গ্যাসের বোতল পেছনে রাখছেন। আবার কেউ ঝালাই করে সিটের নিচেই স্থায়ীভাবে বসিয়ে নিচ্ছেন। এতে যাত্রীদের ঝুঁকি আছে ঠিকই, কিন্তু আমাদেরও তো কিছু করে খেতে হবে।”

সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিয়মিত যাতায়াত করা যাত্রীরাও দুর্ঘটনা নিয়ে থাকেন উৎকণ্ঠায়। তবে দ্রুতগামী বাহন আর অল্প ভাড়ায় গন্তব্যে যাওয়া যায় বলে নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা। 

রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, “দেশের বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা শোনা যায়। এসব ভাবলে যে কারোরই ভেতরে ভয় কাজ করবে। তবুও কাজের সুবাদে যাতায়াত করতেই হয়।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেসবাউল হক বলেন, “আমাদের সংগঠনে প্রায় দেড়শ সিএনজি আছে। এছাড়াও জেলায় রয়েছে আরও দুটি সিএনজির সমিতি। সব মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক সিএনজি জেলাজুড়ে যাত্রী পরিষেবা দিয়ে থাকে। এসব অটোরিকশার মধ্যে বেশিরভাগই সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এখনও অনেক গাড়িতে বোতলজাত গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছিলাম। তাদের সচেতনামূলক কথার মাধ্যমেই বোতলজাত গ্যাসের সিএনজির সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। তবে একেবারেই কমে যায়নি। আমারও বৈঠকের মাধ্যমে চালকদের নিয়মিত সচেতন করে থাকি।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো.

শাহজামান হক বলেন, “সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস কিংবা সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বাহনগুলো উঁচু-নিচু, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় ঝাঁকির কারণে এসব বোতলের চাবি (রেগুলেটর) ঢিলা বা ছিদ্র হয়ে যখন-তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে সিএনজিচালক ও যাত্রীদের আরও সচেতন হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “যানবাহনে গ্যাস ব্যবহারের অনুমতি আছে ঠিকই। কিন্তু গ্যাসের সিলিন্ডার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তন করতে হয়। পরিবর্তন না করলে মেয়াদোত্তীর্ণ বোতল ব্যবহারে রয়েছে আরও ঝুঁকি।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, “যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্যাসের সিলিন্ডার মেয়দোত্তীর্ণ হলে বা জোড়াতালি দেওয়া হলে অথবা এতে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জামের (গ্যাস ভাল্ব, হোসপাইপ, রেগুলেটরসহ নানা ইকুইপমেন্ট) দুর্বলতার কারণে বিস্ফোরিত হতে পারে। এক্ষেত্রে চালকরা যাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র সংরক্ষণ করতে পারেন।”

ঢাকা/শিয়ামি/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ য স ব যবহ র কর ব তলজ ত গ য স প ইনব বগঞ জ য ত য় ত কর দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে কৃষকের জন্য বরাদ্দ সার বিক্রির চেষ্টা

ফরিদপুরে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বরাদ্দ করা সরকারি সার বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে আটক করলে চেয়াম্যানের এক সহযোগী ও ভ্যানচালক সার ফেলে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও কৃষি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে ৩ বস্তা ইউরিয়া সার ও ৩ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করে নিয়ে যায়।

সোমবার দুপুর ৩টার দিকে ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের কানাইপুর বাজারের খুচরা সার বিক্রেতা মনোরমা এন্টারপ্রাইজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই দোকানে সারগুলো বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছিল।

স্থানীয় বাবু সরদার নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ইউনুস নামে এক ব্যক্তি ভ্যানে করে সারগুলো নিয়ে আসেন। তিনি মনোরমা এন্টারপ্রাইজের সন্টুর দোকানে বিক্রির চেষ্টা করেন। এ সময় দোকানদার সার কিনতে অস্বীকার করলে আমি গিয়ে দেখি সরকারি সার। এ সময় ইউনুস দৌড়ে পালিয়ে যান। আমি পুলিশকে খবর দিই। পরে পুলিশ ও কৃষি কর্মকর্তারা সার নিয়ে যান।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা পাট অধিদপ্তর কর্তৃক প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে কানাইপুর ইউনিয়নে ২৪০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণের তালিকা করা হয়। সম্প্রতি বরাদ্দকৃত সার ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়। তবে এসব সার বিতরণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লতিফা আক্তার। 

এসব সার বিতরণের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জেলা পাট অধিদপ্তরের উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম দাবি করেন, ৬ এপ্রিল কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২৪০ জনের মধ্যে ২০০ জনের মাঝে সার বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষকের মাঝে ৬ কেজি ইউরিয়া, ৩ টিএসপি, ৩ কেজি ডিএপি সার বিতরণ করা হয়। এছাড়া বাকি ৪০ জন কৃষক না আসায় সারগুলো পরিষদে রাখা হয়। পরবর্তীতে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার কথা রয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আলতাভ হুসাইন বলেন, আজ বন্ধের দিন থাকায় বলা যাচ্ছে না, আমার পরিষদের সার কিনা। কারণ, চাবি রয়েছে সচিবের কাছে। পরিষদ খুললে গোডাউন দেখে বলতে পারব। 

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে কৃষি কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে পাঠানো হয়েছে। তারা সারগুলো জব্দ করে নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ