যশোরে মৃত ডিলারের নামে তুলে নেওয়া হচ্ছে সার
Published: 13th, April 2025 GMT
যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ডিলার ছিলেন কে এম শরিফুল ইসলাম। গত ৩০ জানুয়ারি তিনি মারা যান। এরপরও ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে শরিফুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন করপোরেশনের নামে সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের সার উত্তোলনও করা হয়েছে। তবে চলতি এপ্রিল মাসে বরাদ্দ দেওয়া হলেও পরে সেটি বাতিল হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি মাসে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা সার চাহিদানুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি জেলার বিসিআইসি ও বিএডিসির ডিলারের নামে চাহিদামতো মাসিক উপবরাদ্দ দেয়।
সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণসংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯–এর ৯ ধারার ৫ উপধারায় বলা হয়, ইউনিয়ন বা পৌরসভার চাহিদানুযায়ী সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত এবং ডিলার ব্যতীত উত্তোলিত সার অন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার বিষয়টি কঠোরভাবে রোধ করতে ডিলারদের অনুকূলে বরাদ্দ সার ডিলার নিজেই উত্তোলন করবেন অথবা তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্য থেকে একজনকে উত্তোলনের ক্ষমতা দেবেন। সে ক্ষেত্রে ডিলার মনোনীত প্রতিনিধির ছবি প্রত্যয়নপূর্বক লিখিতভাবে জানাতে হবে।
উপধারা ১০-এ বলা হয়, ইউনিয়ন অথবা পৌরসভার ডিলারের মৃত্যু অথবা অন্য কোনো কারণে ডিলারশিপ শূন্য হলে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সাময়িকভাবে পাশের ইউনিয়ন অথবা পৌরসভার ডিলারকে বরাদ্দের সার উত্তোলন ও বিতরণের ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি বিসিআইসি ডিলার শরিফুল মারা যান। ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম মৃত্যুসনদ সংযুক্ত করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। গত ১৩ মার্চ উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সভার রেজল্যুশন জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির কাছে পাঠানো হয়। রেজল্যুশনে সাময়িকভাবে পাশের ইউনিয়নের ডিলারকে ওই ইউনিয়নের বরাদ্দের সার উত্তোলন ও বিতরণের ক্ষমতা দিতে সুপারিশ করা হয়। এরপরও ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বরাদ্দের সার মেসার্স আমিন করপোরেশনের নামে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের সার ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক তুলে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন।
সূত্র জানায়, মেসার্স আমিন করপোরেশনের নামে ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), ৩৫ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন ডিএপি (ডাই–অ্যামোনিয়াম ফসফেট), ২৮ দশমিক ২০ মেট্রিক টন এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) এবং ১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার; মার্চ মাসে ৭ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন টিএসপি, ১২ দশমিক ২০ মেট্রিক টন ডিএপি, ১১ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন এমওপি ও ২৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার এবং এপ্রিল মাসে ৫ দশমিক ৭০ মেট্রিক টন টিএসপি, ১৪ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন ডিএপি, ৮ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন এমওপি ও ৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে এপ্রিল মাসের বরাদ্দ বাতিল করে উপজেলার সব ডিলারের নামে ওই সার সমানভাবে বণ্টন করা হয়।
জানতে চাইলে ফেরদৌসী ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী বিসিআইসির ডিলারশিপ পরিচালনা করতেন। তিনি ৩০ জানুয়ারি মারা যান। আমি কৃষি অফিসে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। স্বামীর মৃত্যুর পর আমরা সার উত্তোলন করছি না। এখন কে তুলছে, তা জানি না।’
তবে মেসার্স আমিন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সোহেল রানা বলেন, ‘মৃত্যুর আগে মালিক আমাকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে প্রত্যয়ন দিয়ে সার উত্তোলনের ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। ওই সময় বোরোর সিজন ছিল। এ জন্য আমি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বরাদ্দের সার উত্তোলন করেছি। সমুদয় সার সঠিকভাবে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসে আমাদের সার বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক এবং জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্যসচিব মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ভুল করে এপ্রিল মাসের সারের উপবরাদ্দ মেসার্স আমিন করপোরেশনে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানার পর উপবরাদ্দ বাতিল করা হয়। উপজেলার সব ডিলারকে ওই সার সমানভাবে বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র বর দ দ কর মকর ত কম ট র স ব স আইস র ক ষমত ওই স র দশম ক ব তরণ ব ষয়ট ইসল ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে কৃষকের জন্য বরাদ্দ সার বিক্রির চেষ্টা
ফরিদপুরে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বরাদ্দ করা সরকারি সার বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে আটক করলে চেয়াম্যানের এক সহযোগী ও ভ্যানচালক সার ফেলে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও কৃষি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে ৩ বস্তা ইউরিয়া সার ও ৩ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করে নিয়ে যায়।
সোমবার দুপুর ৩টার দিকে ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের কানাইপুর বাজারের খুচরা সার বিক্রেতা মনোরমা এন্টারপ্রাইজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই দোকানে সারগুলো বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছিল।
স্থানীয় বাবু সরদার নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ইউনুস নামে এক ব্যক্তি ভ্যানে করে সারগুলো নিয়ে আসেন। তিনি মনোরমা এন্টারপ্রাইজের সন্টুর দোকানে বিক্রির চেষ্টা করেন। এ সময় দোকানদার সার কিনতে অস্বীকার করলে আমি গিয়ে দেখি সরকারি সার। এ সময় ইউনুস দৌড়ে পালিয়ে যান। আমি পুলিশকে খবর দিই। পরে পুলিশ ও কৃষি কর্মকর্তারা সার নিয়ে যান।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা পাট অধিদপ্তর কর্তৃক প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে কানাইপুর ইউনিয়নে ২৪০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণের তালিকা করা হয়। সম্প্রতি বরাদ্দকৃত সার ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়। তবে এসব সার বিতরণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লতিফা আক্তার।
এসব সার বিতরণের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জেলা পাট অধিদপ্তরের উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম দাবি করেন, ৬ এপ্রিল কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২৪০ জনের মধ্যে ২০০ জনের মাঝে সার বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষকের মাঝে ৬ কেজি ইউরিয়া, ৩ টিএসপি, ৩ কেজি ডিএপি সার বিতরণ করা হয়। এছাড়া বাকি ৪০ জন কৃষক না আসায় সারগুলো পরিষদে রাখা হয়। পরবর্তীতে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আলতাভ হুসাইন বলেন, আজ বন্ধের দিন থাকায় বলা যাচ্ছে না, আমার পরিষদের সার কিনা। কারণ, চাবি রয়েছে সচিবের কাছে। পরিষদ খুললে গোডাউন দেখে বলতে পারব।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে কৃষি কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে পাঠানো হয়েছে। তারা সারগুলো জব্দ করে নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।