বাংলাদেশ ব্যাংকের আলোচিত রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে তৎকালীন সরকারের সময়ে সীমাহীন গাফিলতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি এখন এই রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটি এ ঘটনায় কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

আজ রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আসিফ নজরুল এ কথাগুলো বলেন। এর আগে আজ পর্যালোচনা কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথম বৈঠকে বসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় গত মাসে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে সরকার। পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা হলেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।

এই কমিটির কাজের পরিধি হিসেবে রয়েছে, কমিটি ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকাজের অগ্রগতি ও এ-সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে। তিন মাসের মধ্যে কমিটিকে তাদের সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে বিভিন্ন সময় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়। কিন্তু এখনো ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার ৩৯ দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

পর্যালোচনা কমিটির সিদ্ধান্ত

আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুই বিলিয়ন ডলার চুরি বা লুট করার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত পেরেছে ৮৮ মিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন ডলার এখনো উদ্ধার করা যায়নি। বাকি টাকা উদ্ধার হয়েছে। পর্যালোচনা কমিটির প্রধান হিসেবে তাঁর কাছে মনে হয়েছে, এটি আসলে পুরো বাংলাদেশ লুট করার একটি পরিকল্পনা ছিল। দুই বিলিয়ন ডলার যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চলে যেত আজকে দুর্ভিক্ষ বা প্রায় দুর্ভিক্ষ অবস্থায় পড়তে হতো।

আরও পড়ুনরিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে কমিটি১২ মার্চ ২০২৫

গাফিলতির প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, সিআইডিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের যাঁরা জড়িত আছেন, তাঁদের নাম অভিযোগপত্রে না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনকে ভালো উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, সেই প্রতিবেদনের পর্যালোচনাও শুনেছেন। কমিটি নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশা করেন আইন উপদেষ্টা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জ র ভ চ র র ঘটন আইন উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট কম ট র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে কৃষকের জন্য বরাদ্দ সার বিক্রির চেষ্টা

ফরিদপুরে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বরাদ্দ করা সরকারি সার বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে আটক করলে চেয়াম্যানের এক সহযোগী ও ভ্যানচালক সার ফেলে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও কৃষি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে ৩ বস্তা ইউরিয়া সার ও ৩ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করে নিয়ে যায়।

সোমবার দুপুর ৩টার দিকে ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের কানাইপুর বাজারের খুচরা সার বিক্রেতা মনোরমা এন্টারপ্রাইজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই দোকানে সারগুলো বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছিল।

স্থানীয় বাবু সরদার নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ইউনুস নামে এক ব্যক্তি ভ্যানে করে সারগুলো নিয়ে আসেন। তিনি মনোরমা এন্টারপ্রাইজের সন্টুর দোকানে বিক্রির চেষ্টা করেন। এ সময় দোকানদার সার কিনতে অস্বীকার করলে আমি গিয়ে দেখি সরকারি সার। এ সময় ইউনুস দৌড়ে পালিয়ে যান। আমি পুলিশকে খবর দিই। পরে পুলিশ ও কৃষি কর্মকর্তারা সার নিয়ে যান।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা পাট অধিদপ্তর কর্তৃক প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে কানাইপুর ইউনিয়নে ২৪০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণের তালিকা করা হয়। সম্প্রতি বরাদ্দকৃত সার ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়। তবে এসব সার বিতরণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লতিফা আক্তার। 

এসব সার বিতরণের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জেলা পাট অধিদপ্তরের উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম দাবি করেন, ৬ এপ্রিল কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২৪০ জনের মধ্যে ২০০ জনের মাঝে সার বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষকের মাঝে ৬ কেজি ইউরিয়া, ৩ টিএসপি, ৩ কেজি ডিএপি সার বিতরণ করা হয়। এছাড়া বাকি ৪০ জন কৃষক না আসায় সারগুলো পরিষদে রাখা হয়। পরবর্তীতে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার কথা রয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আলতাভ হুসাইন বলেন, আজ বন্ধের দিন থাকায় বলা যাচ্ছে না, আমার পরিষদের সার কিনা। কারণ, চাবি রয়েছে সচিবের কাছে। পরিষদ খুললে গোডাউন দেখে বলতে পারব। 

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে কৃষি কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে পাঠানো হয়েছে। তারা সারগুলো জব্দ করে নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ