শ্রীপুরে জমজমাট চৈতালি মেলায় বৈশাখীর হাতছানি
Published: 13th, April 2025 GMT
ছোট ছোট শিশুদের হাতে রঙিন বেলুন, বাঁশি আর রকমারি খাবার। দুলছে নাগরদোলা। সেখানে রঙিন পোশাকে শিশু ও কিশোর-কিশোরীর ভিড়। তৈরি হচ্ছে জিলাপি, সন্দেশ ও নানা পিঠাপুলি। জমজমাট এই দৃশ্য শতবর্ষী একটি চৈতালি মেলার। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া গ্রামের সাতআনী বাজারে শনিবার দিনভর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার বিকেলে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বাজারের ভেতরে খোলা জায়গায় বসেছে চৈতালি মেলা। কী নেই সেখানে! মুড়িমুড়কির দোকান থেকে শুরু করে শরবত, পেঁয়াজু, বাদাম, জিলাপি, পিঠাপুলি, হালিম, চটপটি ও চানাচুর ভাজার পসরা সাজানো। বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে মাটির তৈজসপত্র, প্লাস্টিকের খেলনাসহ নানা পণ্য। বড় নৌকার আদলে বানানো নাগরদোলা চালানো হচ্ছে ডিজেল ইঞ্জিনে। সেটিতে চড়তে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন বয়সী লোকজন। পাশেই বিশাল আকারের উঁচু স্লিপার। সেখানে উৎফুল্ল শিশুরা যে যার মতো পিছলে নিচে নামছে। পুরো মেলাপ্রাঙ্গণ শিশুদের কলকাকলিতে মুখর।
মেলায় স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই ম ল
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় দেড় যুগ পর বর্ষবরণে বিএনপির জমজমাট আয়োজন
দীর্ঘ ১৮ বছর পর বগুড়ায় এবার পয়লা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করাসহ জমজমাট আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদ্যাপন করছে বিএনপি ও এর সহযোগী অঙ্গ–সংগঠন। বর্ষবরণে আনন্দ শোভাযাত্রা ছাড়াও তারা সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে। শোভাযাত্রায় ছিল হাতি, ঘোড়া, টমটম, পালকিসহ আবহমান বাংলার চিরায়ত নানা লোকজ ঐতিহ্য। ঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচেগেয়ে তারা বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানায়।
বর্ষবরণে সকালে বগুড়া জেলা প্রশাসন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ আলাদাভাবে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। অন্যবার জেলা প্রশাসনের ব্যানারে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ লেখা থাকলেও এবার লেখা ছিল ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা এবং পুলিশ সুপার জিদান আল মুসা এ শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের পর বাংলা বর্ষবরণে কোনো আয়োজন ছিল না বগুড়া বিএনপির। এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিজাতীয় সংস্কৃতি ঠেকাতে দেশীয় সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে জমজমাট আয়োজনে বর্ষবরণ করা হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, বাংলা বর্ষবরণে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র রেজাউল করিম বাদশা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে বর্ষবরণ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, ছাত্রদল, মহিলা দল ছাড়াও জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) ব্যানার নিয়ে নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রায় যোগ দেন। শোভাযাত্রাটি সাতমাথা-ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ থেকে শহর প্রদক্ষিণ করে।
ঢোলের তালে, বাঁশির সুরে হাতি, ঘোড়া, গরুর গাড়ি, পালকি, ঢেঁকি, মাছ ধরার জাল, পলো, কাস্তে, কোদাল, মাথালসহ লোকজ বাংলার হারিয়ে যাওয়া নানা তৈজসপত্র নিয়ে শোভাযাত্রায় নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার লোকজ ঐতিহ্য তুলে ধরায় মুগ্ধ শহরবাসী। শোভাযাত্রার বাংলার লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ, গ্রামীণ জীবনের অনুষঙ্গ, পশু–পাখি, ফুল, হাতি, ঘোড়া, মাছ, পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, মোরগের লড়াই, প্যাঁচা—এসবের প্রতীক ও রকমারি মুখোশ বহন করা হয়। রঙিন পাঞ্জাবি, ফতুয়া, লুঙিতে সাজে পুরুষ এবং কিশোর তরুণেরা। নারী আর কিশোরীদের পরনের রঙিন শাড়িতে শোভাযাত্রা আরও রঙিন হয়ে ওঠে। শহরের এডওয়ার্ড পৌর পার্কে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে জাসাস।
সকালে বেলুন উড়িয়ে এ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা এবং পুলিশ সুপার জিদান আল মুসা। এ সময় অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোকজ সংস্কৃতি রক্ষায় ৪৩ বছর ধরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বগুড়া পৌরসভা, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহযোগিতায় বগুড়া পৌর পার্কে বাংলা বর্ষবরণের বৈশাখী মেলার আয়োজন করে আসছে বগুড়া থিয়েটার। বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের মামলায় আসামি হয়ে আত্মগোপনে থাকায় এবার বগুড়া থিয়েটার বৈশাখী মেলা আয়োজন করেনি। বগুড়া থিয়েটারের বদলে এবার বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে জাসাস।
সাত দিনের এ বৈশাখী মেলায় বাউল সংগীত, লোকজ নৃত্য, লাঠিখেলা, পালাগান, মোরগ লড়াই, নাগরদোলা, চরকি, বানর খেলা, সাপের খেলা ছাড়াও নানা লোকজ আয়োজন রয়েছে। বৈশাখী মেলায় লোকজ ঐতিহ্যের নানা স্টল বসেছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, চরকি, ট্রেন, নৌকাসহ নানা আয়োজন। মেলায় কদমা, খাজা, গজা, মোয়া, মুড়কি, বাতাসা, নিমকিসহ হরেক লোকজ মিঠাই ছাড়াও শিশুদের খেলনার পসরা নিয়ে বসেছেন।
এদিকে শহরের সাতমাথায় বর্ষবরণ উৎসব পালন করছে ‘দিনবদলের মঞ্চ’। বগুড়া ইয়ুথ কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা তৌফিকুল আলম সকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। পুলিশ প্রথমে দিনবদলের মঞ্চের এ আয়োজনে বাধা দেয়। এ ছাড়া দিনবদলের মঞ্চের আয়োজন থেকে ঢালাওভাবে ইসলামবিদ্বেষী কোনো উসকানি না ছড়ানোর জন্য সকালে বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদের পেশ ইমামের নেতৃত্বে তৌহিদি জনতা দিনবদলের মঞ্চে এসে আয়োজকদের সতর্ক করে দেন।