চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীর মহিলা সমিতি মিলনায়তনে টানা দুই দিন নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নাট্যকর্মীরা অপেক্ষায় ছিলেন মঞ্চে ওঠার। কিন্তু ‘তৌহিদি জনতার’ হুমকির চিঠি পেয়ে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী বাতিল করা হয়েছে। প্রদর্শনী বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহিলা সমিতি মিলনায়তন কর্তৃপক্ষ। নাটক বন্ধের প্রতিবাদে আজ রোববার মহিলা সমিতির সামনে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নাট্যকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
হুমকির ওই চিঠিতে বলা হয়, এ নাটকের প্রদর্শনীর সময় মহিলা সমিতিতে ভাঙচুর হলে এর দায় ‘তৌহিদি জনতা’ নেবে না। আর ওই চিঠি পেয়ে ‘নিরাপত্তার’ কথা বিবেচনায় প্রাঙ্গণেমোরকে দেওয়া মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি নিয়ে মহিলা সমিতির নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শারমিন আরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে অফিসে এসেই আমরা একটা চিঠি পেয়েছি “তৌহিদি জনতা” নামে। এরপরই আমরা নাটকের প্রদর্শনী বাতিল করি। মহিলা সমিতিতে নাটক ছাড়াও স্কুল, স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাই আমরা ঝুঁকি নিতে চাইনি। নিরাপত্তার কথা ভেবে মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাস থেকে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন অনন্ত হীরা এবং নির্দেশনা দিয়েছেন নূনা আফরোজ। এটি দলের ষষ্ঠ প্রযোজনা। অনন্ত হিরা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মহিলা সমিতি আজ সকাল ১০টায় ফোন করে জানাল, তৌহিদী জনতা তাদের চিঠি দিয়েছে, মহিলা সমিতিতে যেন কোনো প্রদর্শনী করতে দেওয়া না হয়। আজ চৈত্রসংক্রান্তি এবং আগামীকাল পয়লা বৈশাখ আমাদের ‘‘শেষের কবিতা’’ নাটকের প্রদর্শনী হওয়ার কথা। আমরা মহিলা সমিতিকে দুই দিনের হল ভাড়া দিয়েছি। প্রচার, প্রকাশনায় সকল খরচ করা হয়ে গেছে। আমাদের সকল প্রস্তুতি, সকল আয়োজন সম্পন্ন। আয়োজনের প্রতিটি সেক্টরে খরচ করা হয়ে গেছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে এত দিন ধরে।’
অনন্ত হিরা আরও লিখেছেন, ‘আমরা মহিলা সমিতিকে বলেছি, আপনারা প্রশাসনের সাহায্য নেন প্রশাসন অপারগতা প্রকাশ করলে না হয় আমরা প্রদর্শনী নাইবা করলাম। মহিলা সমিতি জানাল, কত কিছুই তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, প্রশাসন তো বন্ধ করতে পারছে না। প্রশাসন কি সহযোগিতা করবেন আমাদের।’

মহিলা সমিতির সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ নিয়ে অনন্ত হিরা লিখেছেন, ‘আমরা আমাদের নাটক বন্ধের প্রতিবাদে আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বেইলি রোড এ প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করছি। সে সকল নাট্যবন্ধু, দর্শকবন্ধু, সাংবাদিকবন্ধু আমাদের পাশে থাকতে চান, তাঁদের সবাইকে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বেইলি রোডে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মহিলা সমিতি মিলনায়তনে একদল ব্যক্তির হুমকির মুখে স্থগিত হয়েছিল ‘ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব’।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অনন ত হ র ব ত ল কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে: টিউলিপ

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিক জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি ও ও সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনারা বুঝবেন যে, এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারকে কোনো প্রসঙ্গ বা মন্তব্যের মাধ্যমে আমি বিশেষ গুরুত্ব দিতে পারি না। এটা পুরোপুরি আমাকে হয়রানি করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে আমি ভুল কিছু করেছি।’ খবর-বিবিসি

বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে সোমবার লন্ডনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষগুলোর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পুরোটা সময় তারা মিডিয়া ট্রায়াল চালিয়েছে। আমার আইনজীবীরা উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তারা কখনও এর জবাব দেয়নি।’

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে করা তিনটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পৃথক তিন মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে রোববার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব। আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল কিনা, সে-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। ১০ কাঠা প্লট নেওয়ার অন্য অভিযোগে শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের একজন সহকারী পরিচালক। মামলায় শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। 

এর আগে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্কের বিষয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠায় টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

সম্প্রতি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠে। এরপর নিজের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগকে তদন্তের আহ্বান জানান টিউলিপ। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস।

টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি। কেয়ার স্টারমার অফিসিয়াল চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিককে বলেন, ‘আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার সময় এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করেছেন- তিনি আপনার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি এবং আর্থিক অসঙ্গতির কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ