চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রামীণ সংস্কৃতি ও কৃষিতে খনার বচনের তাৎপর্য তুলে ধরতে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় চলছে খনার মেলা। আজ রোববার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার আঙ্গারোয়া গ্রামে স্থানীয় কৃষক ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। স্থানীয় সংগঠন মঙ্গলঘর পরিসরের উদ্যোগে মেলায় কথা ও গানে গানে খনার বচন তুলে ধরা হয়।

আগামীকাল সোমবার পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এলাকাবাসীর সহায়তায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মিডিয়া কমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান ‘কুল এক্সপোজার’ এ মেলার আয়োজন করেছে। সকাল থেকে গ্রামীণ সংস্কৃতির পালাগান, কবিতা, বাউলগান ও কিচ্ছাপালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আয়োজকেরা জানান, অনুষ্ঠানে সংগীতের বিভিন্ন ধারা, শ্লোক, খনার কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, জীবন ও জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে বিশেষ আলোচনা রয়েছে। সন্ধ্যায় সংগীত পরিবেশন করবেন প্রখ্যাত বাউলশিল্পী সুনীল কর্মকার, সংগঠন সমগীত, ব্যান্ড সহজিয়া, চিৎকার, মুসা কলিম মুকুল, ফকির সাহেব, কুয়াশা মূর্খ, নূপুর সুলতানা, মঙ্গলঘরের শিল্পী কৃষক দুদু কাঞ্চন, দুলাল চিশতিসহ অনেকে।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় কৃষক ছাড়াও মেলায় দেশ-বিদেশের শিল্পী ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। মেলায় কুলা, পাইল্লা, ধুছন, দাঁড়িপাল্লা, ধারি, মাটির কলস, মটকি, সানকি ছাড়াও পাট দিয়ে তৈরি করা নানা চিত্রপটসহ কৃষির নানা উপকরণের প্রদর্শনী হচ্ছে। কৃষকেরা নিজেদের মধ্যে দেশি বীজ বিনিময় করছেন। পরিবেশের কথা ভেবে মেলা প্রাঙ্গণে প্লাস্টিকসামগ্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মেলায় গান পরিবেশন করেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মৌসুমী ভৌমিক, প্রবীণ কৃষক বাউল মিয়া হোসেন, শিল্পী কফিল আহমেদ, কৃষ্ণকলি ও তাঁর দল, শিল্পী আদিত্য ভৌমিক।

সকালে অনুষ্ঠান শুরুর পর খনার ওপর বিশেষ আলোচনা পর্ব ‘জল ভালা ভাসা, মানুষ ভালা চাষা’ নিয়ে কথা বলেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলনের সংগঠক দেলোয়ার জাহান, কবি আহমেদ নকিব, লেখক ও সংস্কৃতি সংগঠক বাকি বিল্লাহ, শিল্পী ও সংস্কৃতি সংগঠক বীথি ঘোষ, কবি আসমা বীথি, সংস্কৃতি সংগঠক আবুল কালাম আল আজাদ, লোকসাহিত্য গবেষক রাখাল বিশ্বাস, মঙ্গলঘর পরিসরের প্রধান সংগঠক বদরুন নূর চৌধুরী প্রমুখ।

সংগঠক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছর থেকে আঙ্গারোয়া গ্রামে তাঁরা এই মেলা শুরু করেছেন। মেলার আয়োজন করতে পেরে তাঁদের মধ্যে একধরনের নতুন অনুভূতি হচ্ছে। জনজীবনের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, আচার-অনুষ্ঠান, কৃষি-সংস্কৃতি, সমাজের সংস্কার ও বিশ্বাস নিয়ে খনা বচন রচনা করেছেন। এসব বচনের মধ্য দিয়ে লোকায়ত বাংলার স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে।

লেখক পাভেল পার্থ বলেন, ‘খনা আমাদের সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রবাদ-প্রবচনের মাধ্যমে। এসব বচনের সঙ্গে কৃষি–সংস্কৃতি ও প্রাণ-প্রকৃতির একটা সম্পর্ক আছে। আমরা আজ যে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলছি, খনা তা হাজার বছর আগেই বলে গেছেন।’

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার কর্ণপুর গ্রাম থেকে মেলায় এসেছেন কৃষক কামাল হোসেন। তিনি বলেন, গত বছর মেলা হলেও আসা হয়নি। এবার আসতে পেরে ভালো লাগছে। খনার মেলার ধারণাটি আকর্ষণীয়। আর্থসামাজিক যে সত্যগুলো মানুষের জীবনের সঙ্গে, খাবারের সঙ্গে, আবহাওয়ার সঙ্গে জড়িত, সেগুলো খনা বলতেন।
মেলায় আসা সদর উপজেলার দুধকুড়া গ্রামের কৃষক লিমন মিয়া বলেন, ‘এই মেলায় এসে আমি খনার বচনে কৃষির অনেক নতুন বিষয় জানতে পেরেছি। খনার বচন প্রকৃতি সম্পর্কে কৃষককে অনেক ধারণা দিতে পারে। এ রকম মেলার আয়োজন বিভিন্ন স্থানে আরও হওয়া উচিত।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন পর ব শ স গঠক

এছাড়াও পড়ুন:

চৈত্রসংক্রান্তিতে নেত্রকোনায় খনার মেলা, কথা-গানে খনার বচন

চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রামীণ সংস্কৃতি ও কৃষিতে খনার বচনের তাৎপর্য তুলে ধরতে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় চলছে খনার মেলা। আজ রোববার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার আঙ্গারোয়া গ্রামে স্থানীয় কৃষক ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। স্থানীয় সংগঠন মঙ্গলঘর পরিসরের উদ্যোগে মেলায় কথা ও গানে গানে খনার বচন তুলে ধরা হয়।

আগামীকাল সোমবার পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এলাকাবাসীর সহায়তায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মিডিয়া কমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান ‘কুল এক্সপোজার’ এ মেলার আয়োজন করেছে। সকাল থেকে গ্রামীণ সংস্কৃতির পালাগান, কবিতা, বাউলগান ও কিচ্ছাপালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আয়োজকেরা জানান, অনুষ্ঠানে সংগীতের বিভিন্ন ধারা, শ্লোক, খনার কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, জীবন ও জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে বিশেষ আলোচনা রয়েছে। সন্ধ্যায় সংগীত পরিবেশন করবেন প্রখ্যাত বাউলশিল্পী সুনীল কর্মকার, সংগঠন সমগীত, ব্যান্ড সহজিয়া, চিৎকার, মুসা কলিম মুকুল, ফকির সাহেব, কুয়াশা মূর্খ, নূপুর সুলতানা, মঙ্গলঘরের শিল্পী কৃষক দুদু কাঞ্চন, দুলাল চিশতিসহ অনেকে।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় কৃষক ছাড়াও মেলায় দেশ-বিদেশের শিল্পী ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। মেলায় কুলা, পাইল্লা, ধুছন, দাঁড়িপাল্লা, ধারি, মাটির কলস, মটকি, সানকি ছাড়াও পাট দিয়ে তৈরি করা নানা চিত্রপটসহ কৃষির নানা উপকরণের প্রদর্শনী হচ্ছে। কৃষকেরা নিজেদের মধ্যে দেশি বীজ বিনিময় করছেন। পরিবেশের কথা ভেবে মেলা প্রাঙ্গণে প্লাস্টিকসামগ্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মেলায় গান পরিবেশন করেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মৌসুমী ভৌমিক, প্রবীণ কৃষক বাউল মিয়া হোসেন, শিল্পী কফিল আহমেদ, কৃষ্ণকলি ও তাঁর দল, শিল্পী আদিত্য ভৌমিক।

সকালে অনুষ্ঠান শুরুর পর খনার ওপর বিশেষ আলোচনা পর্ব ‘জল ভালা ভাসা, মানুষ ভালা চাষা’ নিয়ে কথা বলেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলনের সংগঠক দেলোয়ার জাহান, কবি আহমেদ নকিব, লেখক ও সংস্কৃতি সংগঠক বাকি বিল্লাহ, শিল্পী ও সংস্কৃতি সংগঠক বীথি ঘোষ, কবি আসমা বীথি, সংস্কৃতি সংগঠক আবুল কালাম আল আজাদ, লোকসাহিত্য গবেষক রাখাল বিশ্বাস, মঙ্গলঘর পরিসরের প্রধান সংগঠক বদরুন নূর চৌধুরী প্রমুখ।

সংগঠক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছর থেকে আঙ্গারোয়া গ্রামে তাঁরা এই মেলা শুরু করেছেন। মেলার আয়োজন করতে পেরে তাঁদের মধ্যে একধরনের নতুন অনুভূতি হচ্ছে। জনজীবনের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, আচার-অনুষ্ঠান, কৃষি-সংস্কৃতি, সমাজের সংস্কার ও বিশ্বাস নিয়ে খনা বচন রচনা করেছেন। এসব বচনের মধ্য দিয়ে লোকায়ত বাংলার স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে।

লেখক পাভেল পার্থ বলেন, ‘খনা আমাদের সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রবাদ-প্রবচনের মাধ্যমে। এসব বচনের সঙ্গে কৃষি–সংস্কৃতি ও প্রাণ-প্রকৃতির একটা সম্পর্ক আছে। আমরা আজ যে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলছি, খনা তা হাজার বছর আগেই বলে গেছেন।’

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার কর্ণপুর গ্রাম থেকে মেলায় এসেছেন কৃষক কামাল হোসেন। তিনি বলেন, গত বছর মেলা হলেও আসা হয়নি। এবার আসতে পেরে ভালো লাগছে। খনার মেলার ধারণাটি আকর্ষণীয়। আর্থসামাজিক যে সত্যগুলো মানুষের জীবনের সঙ্গে, খাবারের সঙ্গে, আবহাওয়ার সঙ্গে জড়িত, সেগুলো খনা বলতেন।
মেলায় আসা সদর উপজেলার দুধকুড়া গ্রামের কৃষক লিমন মিয়া বলেন, ‘এই মেলায় এসে আমি খনার বচনে কৃষির অনেক নতুন বিষয় জানতে পেরেছি। খনার বচন প্রকৃতি সম্পর্কে কৃষককে অনেক ধারণা দিতে পারে। এ রকম মেলার আয়োজন বিভিন্ন স্থানে আরও হওয়া উচিত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ