মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি থমথমে, টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী
Published: 13th, April 2025 GMT
ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইন বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুর্শিদাবাদের দুটি প্রশাসনিক ব্লকের (সুতি ও সামসেরগঞ্জ) কয়েকটি এলাকায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল শনিবার রাত থেকে এই টহল শুরু হয়।
সামসেরগঞ্জের ধুলিয়ানের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি বেশ থমথমে। অনেক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধানত গ্রামাঞ্চলে এই গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো ঘটেছে, যেখানে মুসলমানরা বসবাস করেন। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। ভয়ে বাড়ির পুরুষেরা অন্যত্র চলে গেছেন।
গতকাল রাত থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে অন্তত ১৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গিপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জনকে।
ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইন বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে মুসলমানপ্রধান মুর্শিদাবাদ জেলায় গত শুক্রবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় শুক্রবার দুপুরের দিকে।
এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে গতকাল সকালে সামসেরগঞ্জের ধুলিয়ান পৌর অঞ্চলের অন্তর্গত জাফরাবাদ থেকে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংঘাতের খবর আসে।
যে দুই ব্যক্তি লাশ উদ্ধার হয়েছে, তাঁরা হলেন হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস। তাঁরা বাবা–ছেলে। তাঁরা ছাগলের ব্যবসা করতেন।
আগের দিন শুক্রবার সুতি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় ১৭ বছরের কিশোর ইজাজ আহমেদ। সে গতকাল বিকেলে মারা যায়। এ খবরেও উত্তেজনা বাড়ে।
পরিস্থিতি রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী কলকাতা হাইকোর্টে যান। তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আরজি জানান। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট সুতি ও সামসেরগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদের জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে ৬৬ শতাংশ সংখ্যালঘু। এই জেলায় প্রায় একচেটিয়াভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি-এমএলএ রয়েছেন। এ ছাড়া জেলার আটটির মধ্যে সাতটি পৌরসভাই তৃণমূলের দখলে। এরপরও এই ঘটনা কীভাবে ঘটল, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আপনজন নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক জায়দুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের, এত বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। প্রশাসনের তরফে আবেদন করা হয়েছিল, যাতে কেউ কোনো প্ররোচনায় পা না দেন, অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা না করেন। তারপরও কী করে এ ঘটনা ঘটল, তা তদন্তের দাবি রাখে।
সামসেরগঞ্জের ধুলিয়ানের সমাজকর্মী জিম নওয়াজ কিছুদিন আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পরে ওয়াক্ফ নিয়ে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। ধুলিয়ান বাজারে দোকানপাট খুলেছিল। কিন্তু এরপর মুসলমানদের কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। তিনি যত দূর জানেন, পুলিশকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। এখানে এ প্রশ্ন করা প্রাসঙ্গিক যে কীভাবে এই সহিংসতা ছড়াতে দেওয়া হলো।
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ১৬ এপ্রিল তিনি রাজ্যের ইমাম, মুয়াজ্জিন, বুদ্ধিজীবী, আলেম-উলামাদের সঙ্গে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে একটি সভা করবেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের পৌর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
অন্যদিকে মুর্শিদাবাদে বড় ধরনের আন্দোলনের কথা ভাবছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। রাজ্য বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী আজ সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করেছে, ধুলিয়ান থেকে ৪০০ জনের বেশি হিন্দুকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাঁরা অন্যত্র গিয়ে রয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত শ ক রব র এল ক য় গতক ল কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
দর্শককে আশাহত না করে সুন্দর সিনেমা দেওয়া উচিত: নিশো
অভিনেতা আফরান নিশো। রাজধানীর সিনেপ্লেক্সসহ দেশের আরও কিছু প্রেক্ষাগৃহে চলছে এই তার নতুন সিনেমা ‘দাগি’। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সিনেমা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুক্তির দিন এ সিনেমা দেখতে দর্শকের ভিড় দেখা গেছে। সম্প্রতি এ সিনেমাসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।
‘দাগি’ মুক্তির দিন থেকে এ সিনেমা দেখতে দর্শকের ভিড় দেখা গেছে। দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন লক্ষ্য করছেন...
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি খুব একটা সরব না। তারপরও সিনেমার রিভিউ অনেক চোখে পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে আমি অনেকগুলো সিনেমা হলে গিয়েছি। তখন সরাসরি দর্শকের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। সিনেমাটি মানুষ দারুণ পছন্দ করেছে। নিজের কাজ দর্শকের কাছে প্রশংসিত হলে, মনে অনেক আনন্দ জাগে। নিজের ছবি নিয়ে একটা তো ইমোশন কাজ করে। সে জায়গা থেকে সবার প্রশংসা আমার কাছে উৎসাহ বলে মনে করি।
‘দাগি’ সিনেমায় নিজেকে ও অন্য শিল্পীদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
‘দাগি’ সিনেমার সব চরিত্র ভীষণ জটিল এবং কঠিন। এ চরিত্রগুলো যদি ভালোভাবে উপস্থাপন না হতো তাহলে নিশান (আমার) চরিত্রটা আসতই না। সব চরিত্রের ওপর দিয়ে নিশান চরিত্রের যাত্রা। ফলে নিশান চরিত্রটা দর্শক ভালোভাবে নিয়েছে। এ ছাড়া তমা মির্জা, সুনেরাহ বিনতে কামাল, রাশেদ মামুন অপু যা করেছেন, তাদের অভিনয় মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। এখানে তমা মির্জা, সুনেরাহসহ যারা অভিনয়ে ছিলেন তাদের সবাইকে আমি একেকটি পিলার বলব। এর মধ্যে একটা পিলার যদি পড়ে যেত তাহলে এ সিনেমার কিছু থাকত না।
এর আগে একটি টিভি নাটকের জন্য গান করেছিলেন। এবার নিজের সিনেমার জন্য গাইলেন...
দাগির টাইটেল ট্র্যাক নিয়ে প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি একদিন আমাকে গানটির একটা ডেমো ভার্সন শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কেমন লেগেছে। আমি বললাম, ক্যাচি অ্যান্ড পাওয়ারফুল। গানটা নিয়ে কী করা যায়? এটি ভাবতে ভাবতে একসময় আমাকে জানানো হয়, গানটিতে আমি কণ্ঠ দিলে কেমন হয়? এটি তাঁর জন্য একরকম সারপ্রাইজ ছিল। এরপর নিধি [আরাফাত মহসীন] আমাকে ফোন করে স্টুডিওতে ডাকে। কিছু সংযোজন-বিয়োজনের পর গানটিতে ভয়েস দিই। নিধি সব ঠিকঠাক করে ৪৫-৪৫ মিনিটের মধ্যে গানটি রেডি করে আমাকে দিয়েছে। ফলে এ গানের পুরো কৃতিত্ব নিধির।
‘সুড়ঙ্গ’ ও ‘দাগি’ গল্পনির্ভর সিনেমা। এ ধারাতেই এগিয়ে যাবেন?
আপনি যদি টেলিভিশনে আমার কাজগুলো দেখেন, তাহলে দেখবেন, শুরু থেকেই আমি ভালো গল্পের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি সবসময়। সেই সূত্র ধরে আমার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘সড়ঙ্গ’তে কাজ করেছি। এরপর গল্পের কারণে দুই বছর পর ‘দাগি’ করলাম। আমি সব সময় চাই, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে সিনেমায় অভিনয় করতে, যেখানে গল্পটিও একটি চরিত্র হবে। সেই দিক থেকে ‘দাগি’র গল্প খুব ভালো লেগেছে। সামনে আমি কমেডি, অ্যাকশন আর রোমান্টিক যে ঘরানার কাজ করি না কেন, সেখানেও একই চিন্তা থাকবে।
এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এখন থেকে নিয়মিত সিনেমায় কাজ করবেন। তা বছরে কয়টি সিনেমায় অভিনয়ের পরিকল্পনা আছে?
দেখুন, আমাদের দেশে দর্শক অনুপাতে কিন্তু ভালো সিনেমা নেই। একেক জনের তিনটি করে সিনেমা হলে ভালো সিনেমার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০-এর ঘরে। দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী সিনেমা বানানো উচিত। দর্শক ঈদের মধ্যে ভালো সিনেমা দেখছে। পুরো বছর সিনেমা না থাকলে দর্শক দেখবে কী! দর্শককে আশাহত না করে সুন্দর সিনেমা দেওয়া উচিত। সেই জায়গা থেকে আমি চিন্তা করেছি ঈদসহ বছরে তিনটি সিনেমায় অভিনয় করব। শুধু একা বেঁচে লাভ নেই। আমাদের সবার বাঁচতে হবে।
নাটক-ওটিটিতে আপনাকে আর দেখা যাবে না?
নাটক দিয়ে আমার অভিনয়ে যাত্রা শুরু। নাটক আমার শিকড়। এটি আমি কখনোই ভুলি না, ভুলবোও না। মাঝে ওটিটিতে কিছু কাজ করেছি। বড়পর্দায় কাজ করতে গেলে ছোটপর্দায় সময় বের করাটা অনেক কঠিন। আমার পক্ষ থেকে কোনো মাধ্যমে না নেই। সময় সুযোগ এলে সব মাধ্যমে কাজ করব।