তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: মারধরের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনে চলছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
Published: 13th, April 2025 GMT
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। এতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। গতকাল শনিবার থেকে চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।
থানায় দেওয়া ভুক্তভোগী চিকিৎসকের লিখিত অভিযোগ ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাধারানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান (৩০) ওই রোগীকে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হন। এ সময় সেখানে রোগী আতাউর রহমানের ছেলে তাহমিদ সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তারাগঞ্জের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আরও চার থেকে পাঁচজন মিলে চিকিৎসক সাবরিনাকে গালি দেন এবং শরীরে আঘাত করেন। পরে শুক্রবার রাতে তাহমিদ সরকারসহ অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তারাগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন সাবরিনা মুসরাত জাহান।
এ ছাড়া গতকাল সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
তবে চিকিৎসককে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করে তাহমিদ সরকার বলেন, ‘আমার বাবা হাসপাতালে ব্যথায় কাতরাচ্ছিল। ওই চিকিৎসককে বাবাকে দেখার জন্য অনুরোধ করছিলাম। তিনি না শুনে উল্টো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে একটু কথা–কাটাকাটি হয়েছে।’
‘এ্যালাও ডাক্তার দেখিল না, ওষুধ পানু না’
আজ রোববার সকাল ১০টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে পুলিশি পাহারা। হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ব্যানার টাঙানো। বহির্বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ। হাসপাতাল চত্বর, বহির্বিভাগের সামনে ও বারান্দায় রোগীদের জটলা। বেলা একটা পর্যন্ত সেখানে থেকে দেখা যায়, অনেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসছেন, কেউ কেউ চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
বহির্বিভাগের সামনে বসে হাঁসফাঁস করছিলেন দৌলতপুর গ্রামের বৃদ্ধা পাতিনা বেগম (৬৫)। তিনি বলেন, ‘স্বামী–সন্তান নাই, ভিক্ষা করি খাও। প্রেশার মাথাত উঠছে। সকাল ৯টায় ২০ টাকা ভাড়া দিয়া হাসপাতালোত আসছু। এ্যালাও ডাক্তার দেখিল না, ওষুধ পানু না।’
দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর চিকিৎসক দেখাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নুর হোসেনের স্ত্রী হাসিনা বেগম (৬০)। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘পায়োত খোঁচা ঢুকছে। ব্যথাতে সারা রাত ঘুমার পাও নাই। সকাল ৯টায় হাসপাতালো চিকিৎসা নিবার আলছুং। কিন্তু দুই ঘণ্টা বসি থাকি কোনো চিকিৎসা পানু না। বাড়ি ফেরত যাওছু।’
দাঁতের ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন মেনানগর গ্রামের তহমিনা বেগম। হাসপাতালে এসে চিকিৎসক দেখাতে পারেননি তিনি। তহমিনা বেগম বলেন, ‘চিকিৎসা বন্ধ থুইয়া ধর্মঘট করলে হামরা বাঁচমু কেমন করি। হামার রোগ সারবে কেমন করি। ব্যথাতে বাঁচুছি না। কিন্তু হাসপাতালোত চিকিৎসক দেখছে না। হামরা যামু কোনঠে কন?’
শুধু বহির্বিভাগে নয়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীরাও পড়েছেন দুর্ভোগে। সেখানেও চিকিৎসাসেবা বন্ধ আছে। হাসপাতালে ভর্তি কাংলাচড়া গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘হাত ফাটি গেছে। এক দিন এক রাত হওছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার, কিন্তু কোনো ডাক্তার দেখিল না।’
ভর্তি আরেক রোগী মেনানগর গ্রামের আবদুর রহমান (৬০) বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে ভর্তি হছি। কিন্তু গত দুই দিনে ডাক্তার আসেনি। বাড়ি থাকা হাসপাতালোত থাকা সমান কথা হইচে।’
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা অনির্বাণ মল্লিক মুঠোফোনে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আসামি গ্রেপ্তার হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসকদের পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে খুব শিগগির এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স চ ক ৎসকদ র চ ক ৎসক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ওষুধ চুরির অভিযোগে দুজন আটক
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে চোরাই ওষুধসহ দুজনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। এ সময় ওষুধ চুরিতে সহায়তার অভিযোগে এক চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
আজ শনিবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। তাঁরা হলেন জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকার হামিদুল হক ও সদর উপজেলার পাটেশ্বরী এলাকার হামিদা বেগম।
অভিযানে হাসপাতাল থেকে ৫০টি স্লিপের মাধ্যমে নেওয়া ১৪ ধরনের ৯৬৫টি বড়ি জব্দ করা হয়। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে স্লিপ দেওয়ার অভিযোগে হাসপাতালের (ইউনানি) চিকিৎসক ওবায়দুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ক্যাম্পে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর কুড়িগ্রাম ক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন সাফায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গোপনে অভিযান চালানোর সময় হাসপাতাল চত্বর থেকে সরকারি ওষুধসহ এক পুরুষ ও এক নারীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের কাছে হাসপাতালের বিভিন্ন ধরনের ৯৬৫টি বড়িসহ ওষুধ নেওয়ার ৫০টি স্লিপ জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের সদর থানার পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। আর এক চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, জনবলসংকটের কারণে হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় হাসপাতালের কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।