Prothomalo:
2025-04-14@16:53:17 GMT

শিশুদের জন্মগত হৃদ্‌রোগ

Published: 13th, April 2025 GMT

শিশুদের হৃদ্‌রোগ বা জন্মগত হৃদ্‌রোগকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ। সাধারণ মানুষের কাছে এটি ‘হার্টের ছিদ্র’ নামে বেশি পরিচিত। বিশ্বে প্রতি হাজার নবজাতকের ৮–১২টি এ রোগ নিয়ে জন্মায়।

জন্মগত হৃদ্‌রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে এতে বংশগত প্রভাব রয়েছে। পরিবারে কারও জন্মগত হৃদ্‌রোগ থাকলে শিশুর ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস, রুবেলা ভাইরাস সংক্রমণ, কিছু ওষুধ সেবন, ধূমপান বা মাদক সেবনও শিশুর হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

একটি সুস্থ হৃৎপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ বা চেম্বার থাকে। এগুলো হলো ডান অলিন্দ ও নিলয়, বাঁ অলিন্দ ও নিলয়। হৃৎপিণ্ডের ডান পাশ দূষিত রক্ত ফুসফুসে পাঠায়, যেখানে রক্ত পরিশোধিত হয়ে বাঁ পাশ দিয়ে সারা শরীরে প্রবাহিত হয়। জন্মগত হৃদ্‌রোগে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক গঠন ও কাজ বিঘ্নিত হয়।

প্রকারভেদ

জন্মগত হৃদ্‌রোগকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়—

১.

সায়ানোটিক হার্ট ডিজিজ

২. এসায়ানোটিক হার্ট ডিজিজ

সায়ানোটিক হার্ট ডিজিজে কার্বন ডাই–অক্সাইডযুক্ত দূষিত রক্ত হৃৎপিণ্ডের ছিদ্র দিয়ে বিশুদ্ধ রক্তে মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রোগীর ত্বক, ঠোঁট, নখ ও জিহ্বা নীলচে হয়ে যায়। এসব শিশু বুকের দুধ খাওয়ার সময় বা কান্নাকাটি করলে নীলাভ ভাব বৃদ্ধি পায়।

এসায়ানোটিক হার্ট ডিজিজের ক্ষেত্রে রোগীর ত্বকের রং স্বাভাবিক থাকে। কারণ, বিশুদ্ধ রক্ত দূষিত রক্তে মিশে ফুসফুসে ফিরে যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এসায়ানোটিক হৃদ্‌রোগ সায়ানোটিকে রূপ নিতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাকে জটিল করে তোলে।

লক্ষণ

হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক দ্রুত বা ধীর হওয়া।

দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস।

ঘন ঘন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (সর্দি-কাশি লেগে থাকা)।

বয়স অনুযায়ী ওজন না বাড়া।

অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি বা খেলায় অনীহা।

বুকের দুধ খেতে কষ্ট হওয়া বা খাওয়ার সময় ঘামা।

ঠোঁট, জিহ্বা বা নখ নীল হয়ে যাওয়া।

কান্নার সময় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

রোগনির্ণয়

বর্তমানে দেশে আন্তর্জাতিক মানের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা–সুবিধা রয়েছে। জন্মগত হৃদ্‌রোগ শনাক্ত করতে সাধারণত বুকের এক্স-রে, ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়। এই তিন পরীক্ষার মাধ্যমে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় সম্ভব। তবে ইকোকার্ডিওগ্রাফি একজন অভিজ্ঞ জন্মগত হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করানো উচিত।

চিকিৎসা কী

কিছু হৃদ্‌রোগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় অস্ত্রোপচারের। অস্ত্রোপচার ছাড়াও ক্যাথেটারভিত্তিক চিকিৎসা, যেমন সেপ্টাল অক্লুডার ব্যবহার করে ছিদ্র বন্ধ করা সম্ভব।

জন্মগত হৃদ্‌রোগ জটিল শারীরিক সমস্যা হলেও সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসায় অধিকাংশ শিশুই সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. সিয়াম আল ইসলাম, জন্মগত হৃদ্‌রোগবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিবাদ ভুলে বেরোবি শিক্ষার্থীদের মুখে বাঙালির নবজাগরণ

উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—চারপাশ জুড়ে বাজছে নতুন গানের সুর। আজ বাংলাভাষীদের স্বপ্ন দেখার দিন। পুরনো যত জরা, হতাশা আর গ্লানি—সব ভুলে সামনে তাকাবার সময় এখন। এ দিনটি শুধু ক্যালেন্ডারের নতুন পৃষ্ঠা নয়, এটি প্রকৃতির এক অনবদ্য রূপ, এক নব বার্তা। এটি শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন। এ সময়টাতেই বাঙালির মধ্যে এক অন্যরকম আবেশ কাজ করে।

পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখার অনন্য সুযোগ তৈরি হয় এই দিনটিতে।  চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে উল্লাসের রঙ। হালখাতা, মিষ্টি বিনিময়—এসব শুধু রীতি নয়, এক নিঃশব্দ অঙ্গীকার। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার প্রতীক। ব্যবসা, সম্পর্ক, জীবন—সবই যেন নতুন করে শুরু হয়।

তবে অতীত ছিল উজ্জ্বল নয়। গত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী শাসনের ছায়ায় মানুষ ছিল দমবন্ধ পরিবেশে। প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল সীমিত, উৎসবের আনন্দ ছিল নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু সময় বদলেছে। এবারের বর্ষবরণ সেই পরিবর্তনের বার্তা নিয়েই এসেছে। ফ্যাসিবাদ পরবতী নববর্ষ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা।

বর্ষবরণ হোক নতুন এক নবজাগরণ

এবারের বর্ষবরণ যেন এক নবজাগরণ। এতদিন যেভাবে অন্ধকারে ঢাকা ছিল আমাদের স্বদেশ, তা আজ এক নতুন রূপে উদ্ভাসিত। ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসন শুধু কণ্ঠরোধ করেনি, আমাদের স্বপ্নগুলোকেও মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, এই দেশের তারুণ্য থেমে থাকে না। আজকের পহেলা বৈশাখ নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এক উজ্জ্বল আগামীর দিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
(লেখক: জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টি, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ)

আর নিপীড়নের বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চাই না

বাংলা নববর্ষ আমাদের আত্মপরিচয়ের উৎসব। এই দিনে আমরা ফিরে যাই আমাদের শিকড়ে, গাই ঐক্যের গান। বৈচিত্র্যের মাঝে একতার গল্প বলি, সংস্কৃতির ছায়ায় গড়ে তুলি সহনশীল, আনন্দময় এক বাংলাদেশ। চলো, ১৪৩২ সালকে বানাই ভালোবাসার, সহমর্মিতার আর সংস্কৃতির মিলনমেলা।

আমরা আর নিপীড়নের বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চাই না। আমরা চাই এক নতুন বাংলাদেশ—যেখানে থাকবে মত প্রকাশের অধিকার, থাকবে স্বাধীনভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা, থাকবে মৌলিক অধিকার আর সমতা। যেখানে রাষ্ট্র হবে জনগণের জন্য, নিপীড়নের জন্য নয়।
(লেখক: ফাত্তাহান আলী, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ)

শোভাযাত্রা হোক সবার

পহেলা বৈশাখ কেবল একটি উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এটি আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি আর আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ফ্যাসিস্ট শাসনামলে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে ব্যবহার করা হয়েছিল বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে। আজ আমরা চাই, এই শোভাযাত্রা হোক সবার, হোক অন্তর্ভুক্তিমূলক। যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজেকে দেখতে পায় আনন্দ আর একতার আয়নায়।
(লেখক: জাহিদ হাসান, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, লোকপ্রশাসন বিভাগ)

ফ্যাসিবাদ আর না আসুক এ মাটিতে

নতুন সময়ে বাঙালীর সবার অধিকার নিশ্চিত হোক। আমরা চাই এক নতুন বাংলাদেশ—যেখানে থাকবে মত প্রকাশের অধিকার, থাকবে স্বাধীনভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা, থাকবে মৌলিক অধিকার আর সমতা। বাঙালি নববর্ষে এটাই হোক সবার চাওয়া- ফ্যাসিবাদ আর না আসুক এ মাটিতে।
(লেখক: আজিজুর রহমান, শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট বিভাগ)
 

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ