তানজানিয়ার প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে নিষিদ্ধ
Published: 13th, April 2025 GMT
তানজানিয়ার প্রধান বিরোধী দল চাদেমাকে এই বছরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলটির নেতা টুন্ডু লিসুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনার কয়েকদিন পর, এবার দলটিকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হলো।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
তানজানিয়ার স্বাধীন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালক রামাধনি কাইলিমা বলেছেন, চাদেমা শনিবার (১২ এপ্রিল) নির্ধারিত তারিখে নির্বাচনী আচরণবিধির নথিতে স্বাক্ষর করেনি, যার অর্থ দলটিকে অক্টোবরের নির্বাচন থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে, দক্ষিণ তানজানিয়ায় একটি সমাবেশে নির্বাচনী সংস্কারের আহ্বান জানানোর পর চাদেমার নেতা টুন্ডু লিসুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আনা হয়েছে।
১৯৭৭ সাল থেকে তানজানিয়ার শাসন ক্ষমতায় রয়েছে সিসিএম। সর্বশেষ এসব ঘটনার পরে দলটি ক্ষমতা ধরে রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার (১২ এপ্রিল), জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালক রামাধনি কাইলিমা বলেন, “যেকোনো দল নির্বাচনী আচরণবিধিতে স্বাক্ষর করেনি, তারা সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। চাদেমাকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কোনো উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকেও নিষিদ্ধ করা হবে।”
শনিবারের আগে, প্রধান বিরোধী দল চাদেমা এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ভোট সংস্কারের দাবিতে তাদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটি আচরণবিধি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না।
দেশটিতে আগামী অক্টোবর মাসে সংসদীয় এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসু বর্তমান প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানকে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবেন বলে মনে করা হচ্ছিল।
পূর্বসূরী জন মাগুফুলির মৃত্যুর পর, ২০২১ সালে সামিয়া সুলুহু হাসান যখন প্রথম তানজানিয়ার ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি বিরোধী দল ও গণমাধ্যমের ওপর পূর্বসূরি জন মাগুফুলি যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন, তা শিথিল করার জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন।
তবে সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটি ক্রমবর্ধমানভাবে তার বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান তার পূর্বসূরীর দমনমূলক কৌশলে ফিরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে লিসুর চাদেমা দল।
আফ্রিকার দীর্ঘতম শাসনকারী দলগুলোর মধ্যে একটি সিসিএম (চামা চা মাপিন্দুজি), দলটি পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তানজানিয়া শাসন করছে।
গত সপ্তাহে বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসু ‘কোনো সংস্কার নেই, কোনো নির্বাচন নেই’ স্লোগানের অধীনে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, তানজানিয়ায় নির্বাচন পরিচালনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন না করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
লিসু দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের গঠন পরিবর্তন করা দরকার এবং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সরাসরি নিযুক্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়।
তানজানিয়ার হাসান সরকার লিসুর বিরুদ্ধে নির্বাচন ব্যাহত করার এবং বিদ্রোহ প্ররোচনার অভিযোগ এনেছে।
বিরোধী দলীয় নেতাকে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) অর্থনৈতিক রাজধানী দার এস সালামের একটি আদালতে তোলা হয় এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়, যা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। তাকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং তার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
লিসুর আইনজীবী রুগেমেলেজা এনশালা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, অভিযোগগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি আরো বলেন, “আপনি এই অভিযোগগুলোকে রাজনীতি থেকে আলাদা করতে পারবেন না।”
তানজানিয়ার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা অসংখ্যবার গ্রেপ্তারের মুখোমুখে হয়েছেন। ২০১৭ সালে একটি হত্যা প্রচেষ্টা থেকে তিনি প্রাণে বেঁচে যান, তার গাড়িতে ১৬ বার গুলি চালানো হয়েছিল।
এরপর তিনি নির্বাসনে যান, ২০২০ সালে সেই বছরের নির্বাচনে মাগুফুলির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কিছুদিনের জন্য ফিরে আসেন। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর তিনি অনিয়মের অভিযোগ তুলে চলে যান।
এরপর তিনি ২০২৩ সালে আবার ফিরে আসেন, সেসময় ক্ষমতাসীন হাসান সরকার বিরোধীদের স্বাধীনতা প্রদানের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে’ বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসুকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তানজানিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
দর্শককে আশাহত না করে সুন্দর সিনেমা দেওয়া উচিত: নিশো
অভিনেতা আফরান নিশো। রাজধানীর সিনেপ্লেক্সসহ দেশের আরও কিছু প্রেক্ষাগৃহে চলছে এই তার নতুন সিনেমা ‘দাগি’। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সিনেমা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুক্তির দিন এ সিনেমা দেখতে দর্শকের ভিড় দেখা গেছে। সম্প্রতি এ সিনেমাসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।
‘দাগি’ মুক্তির দিন থেকে এ সিনেমা দেখতে দর্শকের ভিড় দেখা গেছে। দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন লক্ষ্য করছেন...
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি খুব একটা সরব না। তারপরও সিনেমার রিভিউ অনেক চোখে পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে আমি অনেকগুলো সিনেমা হলে গিয়েছি। তখন সরাসরি দর্শকের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। সিনেমাটি মানুষ দারুণ পছন্দ করেছে। নিজের কাজ দর্শকের কাছে প্রশংসিত হলে, মনে অনেক আনন্দ জাগে। নিজের ছবি নিয়ে একটা তো ইমোশন কাজ করে। সে জায়গা থেকে সবার প্রশংসা আমার কাছে উৎসাহ বলে মনে করি।
‘দাগি’ সিনেমায় নিজেকে ও অন্য শিল্পীদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
‘দাগি’ সিনেমার সব চরিত্র ভীষণ জটিল এবং কঠিন। এ চরিত্রগুলো যদি ভালোভাবে উপস্থাপন না হতো তাহলে নিশান (আমার) চরিত্রটা আসতই না। সব চরিত্রের ওপর দিয়ে নিশান চরিত্রের যাত্রা। ফলে নিশান চরিত্রটা দর্শক ভালোভাবে নিয়েছে। এ ছাড়া তমা মির্জা, সুনেরাহ বিনতে কামাল, রাশেদ মামুন অপু যা করেছেন, তাদের অভিনয় মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। এখানে তমা মির্জা, সুনেরাহসহ যারা অভিনয়ে ছিলেন তাদের সবাইকে আমি একেকটি পিলার বলব। এর মধ্যে একটা পিলার যদি পড়ে যেত তাহলে এ সিনেমার কিছু থাকত না।
এর আগে একটি টিভি নাটকের জন্য গান করেছিলেন। এবার নিজের সিনেমার জন্য গাইলেন...
দাগির টাইটেল ট্র্যাক নিয়ে প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি একদিন আমাকে গানটির একটা ডেমো ভার্সন শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কেমন লেগেছে। আমি বললাম, ক্যাচি অ্যান্ড পাওয়ারফুল। গানটা নিয়ে কী করা যায়? এটি ভাবতে ভাবতে একসময় আমাকে জানানো হয়, গানটিতে আমি কণ্ঠ দিলে কেমন হয়? এটি তাঁর জন্য একরকম সারপ্রাইজ ছিল। এরপর নিধি [আরাফাত মহসীন] আমাকে ফোন করে স্টুডিওতে ডাকে। কিছু সংযোজন-বিয়োজনের পর গানটিতে ভয়েস দিই। নিধি সব ঠিকঠাক করে ৪৫-৪৫ মিনিটের মধ্যে গানটি রেডি করে আমাকে দিয়েছে। ফলে এ গানের পুরো কৃতিত্ব নিধির।
‘সুড়ঙ্গ’ ও ‘দাগি’ গল্পনির্ভর সিনেমা। এ ধারাতেই এগিয়ে যাবেন?
আপনি যদি টেলিভিশনে আমার কাজগুলো দেখেন, তাহলে দেখবেন, শুরু থেকেই আমি ভালো গল্পের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি সবসময়। সেই সূত্র ধরে আমার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘সড়ঙ্গ’তে কাজ করেছি। এরপর গল্পের কারণে দুই বছর পর ‘দাগি’ করলাম। আমি সব সময় চাই, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে সিনেমায় অভিনয় করতে, যেখানে গল্পটিও একটি চরিত্র হবে। সেই দিক থেকে ‘দাগি’র গল্প খুব ভালো লেগেছে। সামনে আমি কমেডি, অ্যাকশন আর রোমান্টিক যে ঘরানার কাজ করি না কেন, সেখানেও একই চিন্তা থাকবে।
এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এখন থেকে নিয়মিত সিনেমায় কাজ করবেন। তা বছরে কয়টি সিনেমায় অভিনয়ের পরিকল্পনা আছে?
দেখুন, আমাদের দেশে দর্শক অনুপাতে কিন্তু ভালো সিনেমা নেই। একেক জনের তিনটি করে সিনেমা হলে ভালো সিনেমার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০-এর ঘরে। দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী সিনেমা বানানো উচিত। দর্শক ঈদের মধ্যে ভালো সিনেমা দেখছে। পুরো বছর সিনেমা না থাকলে দর্শক দেখবে কী! দর্শককে আশাহত না করে সুন্দর সিনেমা দেওয়া উচিত। সেই জায়গা থেকে আমি চিন্তা করেছি ঈদসহ বছরে তিনটি সিনেমায় অভিনয় করব। শুধু একা বেঁচে লাভ নেই। আমাদের সবার বাঁচতে হবে।
নাটক-ওটিটিতে আপনাকে আর দেখা যাবে না?
নাটক দিয়ে আমার অভিনয়ে যাত্রা শুরু। নাটক আমার শিকড়। এটি আমি কখনোই ভুলি না, ভুলবোও না। মাঝে ওটিটিতে কিছু কাজ করেছি। বড়পর্দায় কাজ করতে গেলে ছোটপর্দায় সময় বের করাটা অনেক কঠিন। আমার পক্ষ থেকে কোনো মাধ্যমে না নেই। সময় সুযোগ এলে সব মাধ্যমে কাজ করব।