কুড়িগ্রামে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে নারীর মৃত্যু
Published: 13th, April 2025 GMT
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরের ওপর পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার রাত ৩টার দিকে উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ফকিরপাড়া জকুরটল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত নারীর নাম ছকিলা বেগম (৫২)। তিনি ওই গ্রামের গোলাম হোসেনের স্ত্রী।
নিহতের বোন ছবিয়া বেগম জানান, ছকিনার স্বামী বাড়ীতে না থাকায় আমরা দুই বোন এক ঘরে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩টার দিকে প্রচণ্ড বেগে কালবৈশাখী ঝড় উঠলে আমি নিরাপদে যাওয়ার জন্য বোনকে বলেছি। তড়িঘরি করে আমি ঘর থেকে বের হলেও সে বের হতে পারেনি। এ অবস্থায় ঘরের পাশে থাকা বিশাল আকৃতির একটি ভেল্লিগাছ ছকিলা বেগমের ঘরের ওপর পড়ে। এতে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় তিনি গাছের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। ঝড় থেমে যাওয়ার পরে পরিবারের লোকজন উঠে ঘরের ওপর গাছ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করি। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে গাছ সরিয়ে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বেলীর অভাবের ঘরে আলো হয়ে এলো ফুটফুটে ছেলে
স্বামী বাকপ্রতিবন্ধী, তাই কাজে নিতে চাননা কেউ। কখনও কাজ মেলে কখনও মেলে না। বেলী আক্তারের সংসারে তাই অভাব। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়। এই অভাবের সংসারে নববর্ষের ভোরে তার ঘরে আলো হয়ে এসেছে এক নতুন মুখ। ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন তিনি। আনন্দের এই সময়ও বেলীর দুশ্চিন্তা! স্বামী সোহেল রানা কাজের সন্ধানে তখন অনেক দূরে, সিলেটে। অন্যদিকে, গত সোমবার মারা গেছেন বেলীর মা।
সোমবার ভোর ৫টায় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ছেলে সন্তান জন্ম দেন বেলী। হাসপাতালে তখন চিকিৎসক ছিলেন না। আয়াদের চেষ্টায় তার নরমাল ডেলিভারি হয়।
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে সোহেল ও বেলীর বিয়ে হয়। সোহেলের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কিসমত চামেশ্বরী গ্রামে। আর বেলীর বাড়ি একই উপজেলার রাজগাঁও গ্রামে।
রোববার রাত ২ টার দিকে বেলীর প্রসব ব্যথা ওঠে। দ্রুত তাকে ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নেন স্বজনরা। স্বজনরা জানান, হাসপাতালে তখন চিকিৎসক ছিলেন না। আয়াদের চেষ্টায় তার নরমাল ডেলিভারি হয়। এটি তার প্রথম সন্তান।
‘সোহেল রানা কথা বলতে পারে না। অভাবের কারণে টাকার জন্য দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান তিনি। এমনকি প্রথম সন্তানের বাবা হয়েও স্ত্রী-সন্তানের পাশে থাকার সৌভাগ্য হয়নি তার। কাজের খোঁজে সিলেটে আছেন তিনি। তবে অন্যের মোবাইলে ভিডিও কলে তার ছেলে সন্তানের মুখ দেখে অনেক খুশি হয়েছেন। খুশিতে কান্না করে ফেলেছে সোহেল, বলেন সোহেলের ছোটভাই মিন্টু।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেলীর মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। গম্ভীর হয়ে রয়েছেন। মুখে হাসি নেই। শারীরের অবস্থাও তেমন ভালো না।
বেলী জানান, এই সময় স্বামী পাশে না থাকায় খারাপ লাগছে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে তার মা মারা গেছেন। কষ্ট লাগছে, নাতির মুখ তিনি দেখে যেতে পারলেন না।
বেলী বলেন, 'কিছু খেতে মন চাইলেও টাকার অভাবে খেতে পারিনি। দুই বেলা ভাতই ঠিকমতো জোটে না!'
তবে বাচ্চাকে অভাব বুঝতে দেবেন না বলে জানান তিনি। বেলী বলেন, 'ছেলেকে পড়ালেখা করাব, ডাক্তার বানাবো। আমার অভাবের সংসারে সেই এখন আলো।’
সোহেল রানার বাবা খাদেমুল ইসলাম বলেন, 'জন্মের পর থেকে সোহেল কথা বলতে পারে না। সংসারে অভাব থাকায় ছোট থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করত। এলাকায় কাজ না থাকলে অন্য জেলায় যেত।'
তিনি বলেন, 'বছরের প্রথম দিনে নাতিকে কোলে নিয়ে আনন্দ লাগছে। সোহেল ভিডিও কলে ছেলেকে দেখেছে। বাড়িতে থাকলে অনেক খুশি হতো।'
নাতির জন্য সবার কাছে দোয়া চান সোহেলের মা সালেহা বেগম।
বেলীর দাদী ফাতেমা বেওয়া বলেন, ‘চার ভাই-বোনের মধ্যে বেলী সবার ছোট। আমার নাতনির ছেলে হওয়ায় আমরা খুব খুশি। কয়েকদিন আগে বেলীর মা মারা যাওয়ায় আমি এখন তার বাড়িতে আছি। তাদের দেখাশুনা করছি।’
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রকিবুল আলম চয়ন জানান, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বেলী আক্তার ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'বাংলা বছরের প্রথম দিন সন্তানের মা হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। মা-সন্তান সুস্থ্ রয়েছে।'