দলমত নির্বিশেষে আমরা সবাই এক পরিবার: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 13th, April 2025 GMT
দেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি বরাবরই বলে এসেছি, নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এদেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠী—সবমিলিয়ে এদেশের মানুষের বিচিত্র ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য।
আরো পড়ুন:
বৌদ্ধ বিহারে সম্প্রীতি ভবনের ফলক উন্মোচন প্রধান উপদেষ্টার
সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার
সবাইকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল পহেলা বৈশাখ, আমাদের এই সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক। প্রত্যেকে নিজ নিজ উপায়ে, নিজেদের রীতি অনুযায়ী আগামীকালকে উদযাপন করবেন। সার্বজনীন এ উৎসবে অংশ নেবেন।
উপমহাদেশের শিক্ষার প্রসারে বৌদ্ধ বিহারগুলোর গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতি প্রাচীন সময় থেকেই এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল এখানকার বৌদ্ধ বিহারগুলো। এগুলো আমাদের ঐতিহ্য ও সভ্যতার নির্দশন।
তিনি বলেন, পৃথিবীর দূর-দূরান্ত থেকে ভিক্ষু ও ছাত্ররা এ বিহারগুলোতে আসতেন। মহামানব বুদ্ধের শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী বিশ্বে ছড়িয়ে দিতেন। শুধু ধর্মীয় আচার ও শিক্ষা নয়, সমাজে জনকল্যাণকর কর্মসূচিরও কেন্দ্র ছিল এদেশের বৌদ্ধ বিহারগুলো।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহামানব গৌতম বুদ্ধ বিশ্বমানবতার কল্যাণে সম্প্রীতি ও সাম্যের বাণী প্রচার করেন। বৌদ্ধধর্ম জীবজগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনা করেন। মহামানব বুদ্ধ বলেছেন, শান্তি, সুখ থেকে আমরা কাউকে বঞ্চিত করতে পারি না; এমনকি ক্ষুদ্র জীবকেও না।
তিনি বলেন, এদেশের বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববরেণ্য একজন মহাপণ্ডিত। মহামানব বুদ্ধের বাণী তিনি বহন করে নিয়েছিলেন সেই মহাচীনের তিব্বতে। চীনে এখনো তাকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় শ্রদ্ধা জানানো হয়। বৌদ্ধ ধর্মের নির্দশন, স্থাপনা, ঐতিহ্য ও পণ্ডিতগণ মানব সভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই আন্তজার্তিক বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অন্যতম নিদর্শন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীসহ বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও সাম্যের বাণীর প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, গৌতম বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং কারিগরি শিক্ষাসহ বিভিন্ন জনকল্যাণকর কর্মসূচি পালন করে আসছে এ বৌদ্ধ বিহার। আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের ‘সম্প্রীতি ভবন’ বাংলাদেশের সম্প্রীতি ও মানবতার ঐতিহ্যকে ধারণ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গৌরবময় ভূমিকা রাখবে এই আমার প্রত্যাশা।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধের জয় হোক। বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক।
ঢাকা/হাসান/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের নামে ‘জনগণতন্ত্রী’ বা ‘নাগরিকতন্ত্র’ নয়, ‘জনকল্যাণ’ শব্দ চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
দেশের নামে পরিবর্তন নয়, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে থাকা প্রজাতন্ত্র শব্দের পরিবর্তে জনকল্যাণ শব্দ যোগ করার প্রস্তাব করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে দলটি।
দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বিবৃতিতে বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে দেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’-এর পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী’ অথবা ‘নাগরিকতন্ত্র’ শব্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর দল কমিশনের প্রস্তাবের বিপরীতে ‘জনকল্যাণ’ শব্দ যোগ করার পাল্টা প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন একমত পোষণ করেছে। তবে গণমাধ্যমে তার দলকে জড়িয়ে যে ধরনের সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, তা বিভ্রান্তিকর; বরং রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নামের পরিবর্তনের প্রস্তাব সংবিধান সংস্কার কমিশনই দিয়েছে।
রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম রাষ্ট্রের চরিত্র বহন করে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবিধানিক নাম তাদের নীতি ও চরিত্রকে প্রকাশ করে।
বিকল্প নামের ক্ষেত্রে জনগণতন্ত্র বা নাগরিকতন্ত্র শব্দকে ইসলামী আন্দোলন যথার্থ মনে করে না জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তন্ত্র’ কী হবে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তাই রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক নামের মধ্যেই জনকল্যাণ যুক্ত হলে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত লক্ষ্য বাস্তবায়ন সর্বদা সবার মনে জাগ্রত থাকবে।
সংস্কার কমিশনের কাছে ভবিতব্য স্বৈরতন্ত্র রোধে দলটি বেশ কিছু প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে উল্লেখ করে যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। কারণ, তাতেই আগামীর বাংলাদেশের পথ সুগম হবে।