ময়মনসিংহের সবচেয়ে বড় মাছের আড়ৎ মেছুয়া বাজারে তিন পুরুষ ধরে ব্যবসা করেন পুলক রায়। বৈশাখের আগে ইলিশের বিক্রি নিয়ে তিনি জানান, ময়মনসিংহে মূলত দুটি আড়তে ইলিশ বিক্রি হয়। একটি মেছোয়া বাজার, আরেকটি বাইপাস মাছের আড়ৎ। দুই আড়ৎ মিলিয়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ মন মাছ বিক্রি হয়। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ আসলে বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। দাম কম হলেও বৈশাখ উপলক্ষ্যে ইলিশের চাহিদা বাড়েনি এবার।

সমকালকে তিনি বলেন, গত দুই তিন বছর ধইরা পহেলা বৈশাখ হইছে রমজান আর ঈদের দিন। তাও মোটামুটি ভালাই বেচাকিনা অইছে। এইবার অনেক বছর পর বৈশাখ আইলো ঈদের পর। ভাবছিলাম বেচা বিক্রি বাড়বো, কিন্তু তা অইলো কই। প্রতিবার বৈশাখে ইলিশের দাম ডাবল হইয়্যা যাইতো, তাও ভালাই বেচতে পারতাম। পইলা বৈশাখের আর একদিন (আগামীকাল) বাকি। আমার আরত থেইকা মোটামুটি সবাই মাছ নিয়া বেচে। এইবারের বৈশাখে দাম খুব একটা বাড়ে নাই। তাও বাজারে কাস্টমার কম। মমিসিং সব আড়তে একই অবস্থা। যারা ইলিশ কিনত তারা এখন এলাকায় নাই তাই বেচাবিক্রিও কম। 

ময়মনসিংহে ইলিশের বাজার ঘুরে দেখা যায়,  ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা কেজি। ৫৫০ থেকে ৬৫০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি। এগুলো মূলত টাটকা বা কাচা ইলিশ হিসেবে বাজারে বিক্রি হয়। এক কেজির ওপরে ওজনের ইলিশ গুলো কোল্ড স্টোরেজের ইলিশ হিসেবে বিক্রি হয়।  

বাজারে ১২০০ থেকে ১৩০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি। আর ১৪০০ গ্রাম বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা কেজি। তবে আড়তদাররা বলছেন, এসব মাছ পাইকারি মোকাম থেকে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা কমে বিক্রি হয়। বরফের কিছুটা ঘাটতি মিটিয়ে খুচরা বিক্রেতারা কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা লাভে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন। 

গত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে ময়মনসিংহে ইলিশের বাজারদর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে দাম খুব একটা বাড়েনি। এ দুমাসে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি। ৫৫০ থেকে ৬৫০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি। এছাড়াও কেজির উপরের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি।

মেছুয়া বাজারের মতো একই চিত্র দেখা গেছে ময়মনসিংহের বাইপাস মাছের আড়তে নয়ন চন্দ্র বর্মনের দোকানে। প্রতিদিন তার আড়তে বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ মণ ইলিশ। এবারের পহেলা বৈশাখে বিক্রির পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বিক্রি না হওয়ায় তিনিও দুষছেন দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে।

তিনি জানান, আগে শহরের নতুন বাজার, মিন্টু কলেজ বাজার, মেছুয়া বাজার, সানকিপাড়া বাজারে পহেলা বৈশাখের সময় টানা ৩-৪ দিন ইলিশের বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যেত। দেশের পরিবর্তিত প্রক্ষাপটকে বিক্রি কম হওয়ার জন্য দায়ী করছেন তিনি। 

নতুন বাজার মাছের আড়তে বিগত ১৫ বছর যাবত খুচরা পর্যায়ে ইলিশ মাছ বিক্রি করেন ইনসান মিয়া। তিনি জানান, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে এক থেকে দেড় লাখ টাকার বিক্রি হতো প্রতিদিন। কিন্তু এবারে পহেলা বৈশাখের এক দিন আগেও বিশ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারিনি।

গত ৩-৪ মাস ধরে দৈনন্দিন তার ইলিশ বিক্রির পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, এবারে পহেলা বৈশাখে ভেবেছিলাম সব মিলিয়ে দুই তিন লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু বাজারের যে অবস্থা তাতে ৫০-৬০ হাজার টাকা বিক্রি হয় কিনা সন্দেহ আছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছাড়াও ঈদের ঠিক পরেই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হওয়ায় মানুষের পকেটে ইলিশ কেনার বাজেট নেই বলে মনে করছেন এ খুচরা বিক্রেতা।

মিন্টু কলেজ রেলগেইট বাজারে ইলিশ কিনতে আসা মোসতাক আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে আমি ৩-৪ কেজি ইলিশ কিনলেও এবারে কিনেছি মাত্র ১ কেজি। ইদের পর পরই বৈশাখ আশায় পকেটের অবস্থা খুব একটা ভালো না। বাচ্চাদের আবদার মেটাতেই কোনোরকম একটা মাছ কিনলাম। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দাম কেজিপ্রতি একটু বেশি মনে হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ব একট পর ম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

‘কাল বৈশাখ, তাও বাজারে কাস্টমার কম’

ময়মনসিংহের সবচেয়ে বড় মাছের আড়ৎ মেছুয়া বাজারে তিন পুরুষ ধরে ব্যবসা করেন পুলক রায়। বৈশাখের আগে ইলিশের বিক্রি নিয়ে তিনি জানান, ময়মনসিংহে মূলত দুটি আড়তে ইলিশ বিক্রি হয়। একটি মেছোয়া বাজার, আরেকটি বাইপাস মাছের আড়ৎ। দুই আড়ৎ মিলিয়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ মন মাছ বিক্রি হয়। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ আসলে বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। দাম কম হলেও বৈশাখ উপলক্ষ্যে ইলিশের চাহিদা বাড়েনি এবার।

সমকালকে তিনি বলেন, গত দুই তিন বছর ধইরা পহেলা বৈশাখ হইছে রমজান আর ঈদের দিন। তাও মোটামুটি ভালাই বেচাকিনা অইছে। এইবার অনেক বছর পর বৈশাখ আইলো ঈদের পর। ভাবছিলাম বেচা বিক্রি বাড়বো, কিন্তু তা অইলো কই। প্রতিবার বৈশাখে ইলিশের দাম ডাবল হইয়্যা যাইতো, তাও ভালাই বেচতে পারতাম। পইলা বৈশাখের আর একদিন (আগামীকাল) বাকি। আমার আরত থেইকা মোটামুটি সবাই মাছ নিয়া বেচে। এইবারের বৈশাখে দাম খুব একটা বাড়ে নাই। তাও বাজারে কাস্টমার কম। মমিসিং সব আড়তে একই অবস্থা। যারা ইলিশ কিনত তারা এখন এলাকায় নাই তাই বেচাবিক্রিও কম। 

ময়মনসিংহে ইলিশের বাজার ঘুরে দেখা যায়,  ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা কেজি। ৫৫০ থেকে ৬৫০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি। এগুলো মূলত টাটকা বা কাচা ইলিশ হিসেবে বাজারে বিক্রি হয়। এক কেজির ওপরে ওজনের ইলিশ গুলো কোল্ড স্টোরেজের ইলিশ হিসেবে বিক্রি হয়।  

বাজারে ১২০০ থেকে ১৩০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি। আর ১৪০০ গ্রাম বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা কেজি। তবে আড়তদাররা বলছেন, এসব মাছ পাইকারি মোকাম থেকে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা কমে বিক্রি হয়। বরফের কিছুটা ঘাটতি মিটিয়ে খুচরা বিক্রেতারা কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা লাভে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন। 

গত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে ময়মনসিংহে ইলিশের বাজারদর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে দাম খুব একটা বাড়েনি। এ দুমাসে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি। ৫৫০ থেকে ৬৫০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি। এছাড়াও কেজির উপরের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি।

মেছুয়া বাজারের মতো একই চিত্র দেখা গেছে ময়মনসিংহের বাইপাস মাছের আড়তে নয়ন চন্দ্র বর্মনের দোকানে। প্রতিদিন তার আড়তে বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ মণ ইলিশ। এবারের পহেলা বৈশাখে বিক্রির পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বিক্রি না হওয়ায় তিনিও দুষছেন দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে।

তিনি জানান, আগে শহরের নতুন বাজার, মিন্টু কলেজ বাজার, মেছুয়া বাজার, সানকিপাড়া বাজারে পহেলা বৈশাখের সময় টানা ৩-৪ দিন ইলিশের বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যেত। দেশের পরিবর্তিত প্রক্ষাপটকে বিক্রি কম হওয়ার জন্য দায়ী করছেন তিনি। 

নতুন বাজার মাছের আড়তে বিগত ১৫ বছর যাবত খুচরা পর্যায়ে ইলিশ মাছ বিক্রি করেন ইনসান মিয়া। তিনি জানান, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে এক থেকে দেড় লাখ টাকার বিক্রি হতো প্রতিদিন। কিন্তু এবারে পহেলা বৈশাখের এক দিন আগেও বিশ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারিনি।

গত ৩-৪ মাস ধরে দৈনন্দিন তার ইলিশ বিক্রির পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, এবারে পহেলা বৈশাখে ভেবেছিলাম সব মিলিয়ে দুই তিন লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু বাজারের যে অবস্থা তাতে ৫০-৬০ হাজার টাকা বিক্রি হয় কিনা সন্দেহ আছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছাড়াও ঈদের ঠিক পরেই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হওয়ায় মানুষের পকেটে ইলিশ কেনার বাজেট নেই বলে মনে করছেন এ খুচরা বিক্রেতা।

মিন্টু কলেজ রেলগেইট বাজারে ইলিশ কিনতে আসা মোসতাক আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে আমি ৩-৪ কেজি ইলিশ কিনলেও এবারে কিনেছি মাত্র ১ কেজি। ইদের পর পরই বৈশাখ আশায় পকেটের অবস্থা খুব একটা ভালো না। বাচ্চাদের আবদার মেটাতেই কোনোরকম একটা মাছ কিনলাম। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দাম কেজিপ্রতি একটু বেশি মনে হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ