বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে। নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে র‌্যাবের ব্যাটালিয়নগুলোসহ সারাদেশে ২২৪টি পিকআপ টহল, ১২২টি মোটরসাইকেল টহলসহ ৩৪৬টি টহল ও সাদা পোশাকে ৪১৩ জনসহ মোট ২ হাজার ৪৪৯ জন র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া অনুষ্ঠানস্থল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আসা মহিলাদের উত্ত্যক্ত, ইভটিজিং, যৌন হয়রানি রোধে মোবাইল কোর্টসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। 

এতে বলা হয়েছে, নববর্ষের অনুষ্ঠানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো উগ্রবাদী গোষ্ঠী, অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠন এবং রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী মহল যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। টিএসসি, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাতিরঝিল, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, শিশু একাডেমি, রমনা বটমূলসহ রাজধানীর যেসব স্থানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সেসব স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব পর্যাপ্ত পরীক্ষণ চেকপোস্ট, টহল ও অবজারভেশন পোস্ট স্থাপনসহ বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র‌্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সুইপিং পরিচালনার পাশাপাশি র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। সারাদেশে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য থাকবে র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম, পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, চেকপোস্ট ও সিসিটিভি মনিটরিং কাজ করবে। এছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ থাকবে। 

যেকোনো নাশকতা বা হামলা মোকাবিলায় র‌্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নাশকতাসহ যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক টহল মোতায়েন ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর মাধ্যমে নাশকতাসহ যেকোনো ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। ব্যাটালিয়নগুলোতে নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবে। র‌্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার মনিটরিংসহ অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বাড়ানোর মাধ্যমে নাশকতাকারীদের যেকোনো ধরনের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত র‌্যাব। ভার্চুয়াল জগতে নববর্ষকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের গুজব, উসকানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য র‌্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রাখছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ল নববর ষ নজরদ র ত পর স থ ত অন ষ ঠ ন ব যবস থ নববর ষ নজরদ র দ র কর ধরন র ন শকত

এছাড়াও পড়ুন:

‘মেয়েকে প্রথম বুকে নিয়ে কথা বলতে পারিনি কিছুক্ষণ’

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। চারপাশে উৎসবের রঙে রাঙানো, বৈশাখী আমেজে মাতোয়ারা জনজীবন। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে একদিকে নওগাঁয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি, ঘোড়া, পালকি, মাটির তৈরি বাসনসহ বিভিন্ন বর্ণের বেলুন ফেষ্টুন উড়িয়ে, মাথাল মাথায় দিয়ে যখন হাজারো মানুষ উল্লাস করছে। অন্যদিকে সামান্য অদূরেই ২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতালে সকাল ৮.৫০মিনিটে রকিবুল হাসান (২৪) ও খাদিজা আক্তার(১৯) দম্পতির কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় রিজুয়ানা হাসান। জীবনে প্রথমবার বাবা-মা হওয়ার আনন্দে উচ্ছ্বসিত রকিবুল-খাদিজা দম্পতি।

রকিবুলের বাড়ি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দনগর ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামে। পেশায় সফটওয়ার ডেভলপার। কোরআনের হাফেজা খাদিজা আক্তারের বাড়ি জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সুরান্দপুর গ্রামে। ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের দেড় বছর পরে রিজুয়ানা হাসানের জন্ম। এটি তাদের প্রথম সন্তান।

সদ্যজাত কন্যাকে নার্সের কাছ থেকে কোলে তুলে নেন বাবা রকিবুল হাসান। এসময় আপ্লুত হয়ে পড়েন রকিবুল। কোলে নিয়েই শিশুর কানে আজান দিতে থাকেন। পাশেই শিশুটির নানি শেফালী বেগম ও দাদি রহিমা বিবি আনন্দে অশ্রুপাত করেন।

বৈশাখের প্রথম দিনে সন্তান জন্মগ্রহণ করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন রকিবুল হাসান এবং খাদিজা আক্তার। রকিবুল বলেন, বৈশাখের প্রথম দিনে আমি প্রথম কন্যার সন্তানের জনক হয়েছি এতে আমি ভীষণ খুশি। সন্তান জন্মের পর পরই আমি কোলে নিয়েছি এ এক অন্যরকম অনুভূতি যা বলে বোঝাতে পারবো না। আমি নিজেই আমার মেয়ের কানে আজান দিয়েছি। বাসায় গিয়ে সবার আগে মেয়ের নামে আকিকা দিয়ে আমার সন্তানের নাম রাখা হবে রিজুয়ানা হাসান। আমার নামের শেষ অংশ হাসান যুক্ত করে আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে এই নাম রেখেছি। মেয়েটিকে মাদরাসায় পড়াশোনা করাবো। আলেম বা হাফেজা বানাবো। আমার এ সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

তিনি বলেন, স্ত্রীকে ৭মাসের সাতোসা খাওয়ানোর মতো কুসংস্কার এবং বাসায় রেখে ডেলিভারীতে বাধ্য করানোর মতো কুসংস্কারে আমি বিশ্বাসী নই। আমরা এযুগের আধুনিক চিন্তার মানুষ। তাই কোন কুসংস্কারে বিশ্বাস করিনা। আমার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে মহাদেবপুর সদরের কাজীর মাস্টার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. কামরুন্নাহারের কাছে নিয়মিত চেকআপ করিয়েছি। তার পরামর্শেই স্ত্রীকে আমার কাছে নওগাঁ শহরের বাসায় রেখেছিলাম।

নওগাঁ ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা ফারুক তন্দ্রা বলেন, এটি নরমাল ডেলিভারি। জন্মের সময় সন্তানের ওজন তিন কেজি হয়। 

তিনি বলেন, সন্তান জন্মের ২দিন আগে থেকে সন্তানের মা ব্যাথা অনুভব করায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। শেষের দিকে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছিল। পরিস্থিতি ক্রমশ ঝুঁকির দিকে গিয়েছিল। সিজারের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য নরমালেই হয়েছে।

এখন সন্তান এবং মা দু’জনেই সুস্থ আছেন ভালো আছেন বলে জানান তিনি। 
 
সন্তানের মা খাদিজা আক্তার বলেন, পহেলা বৈশাখে যে তার সন্তান ভূমিষ্ট হবে-এমনটা আগেই জানা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পেইন এবং পানিশূন্যতার জন্য মনে হয়েছে হয়তো দু’একদিন আগেই হবে। এক পর্যায়ে ব্যথা সহ্য সীমার বাইরে চলে যায়। বাধ্য হয়ে দু’দিন আগেই হাসপাতালে ভর্তি হই। বাকিটা আলহামদুলিল্লাহ। প্রথম ওকে যখন আমার বুকের ওপর রাখা হয় তখন আমি অনুভূতিহীন হয়ে পড়ি। কথা বলতে পারিনি কিছুক্ষণ।

তিনি বলেন, রকিবুলের নীল রঙ খুব পছন্দের। তাই আমার অধিকাংশ কাপড় নীল রঙের। আমাদের মেয়ে জন্মের কয়েক ঘণ্টা পরেই রকিবুল মেয়ের জন্য এক জোড়া নীল রংয়ের জামা কিনে এনেছে। তিনি হাসতে হাসতে বলেন জামা দুটিই মেয়ের বড় হয়েছে।

রকিবুলের বাবা আব্দুল মোত্তালেব জানান, গর্ভবর্তী হওয়ার পর থেকেই স্ত্রীর প্রতি ছিল রকিবুলের বিশেষ যত্ম। ভারী কাজ করতে দিতো না। ডাক্তারি চেকআপ করাতো নিয়মিত। গ্রামের বাড়ি নিয়ামতপুর থেকে তার বৌমাকে ছেলে নওগাঁ শহরে নিজের কাছেই রেখেছে। 

শিশুর নানী শেফালী বেগম বলেন, চিকিৎসক আর নার্সের আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাচ্চাটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে টাওয়াল দিয়ে জড়িয়ে দেন নার্স। পরে ওর বাবার কোলে দেওয়া হয়। এরপর আমি কোলে নেই। এ সময় ডাক্তার ও নার্সরা শিশুটিকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানায়।

শিশুর দাদী রহিমা বিবি বলেন বলেন, আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। আমার ছেলের ঘরে সিজার ছাড়াই আল্লাহ একটি কন্যা দিয়েছে। সেটাও আবার পয়লা বৈশাখের দিন। তারিখটা মনে রাখার মতো।

নওগাঁ ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. আবু জার গাফ্ফার বলেন, পহেলা বৈশাখে প্রথম সন্তান রকিবুল-খাদিজা দম্পতির। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বাব-মা ও মেয়েকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এ দিন আরো কয়েকজন শিশুর জন্ম হয়েছে। প্রত্যেককেই আমরা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোপালগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী চড়ক ঘুল্লী অনুষ্ঠিত
  • ‘মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলবো’
  • মানুষের মত মানুষ হিসেবে বড় করে তুলবো
  • ‘নববর্ষে আসা মেয়েটি ঘুরিয়ে দিতে পারে ভাগ্যের চাকা’ 
  • ‘এই নিন আপনার পহেলা বৈশাখ’
  • হা-ডু-ডু খেলে দর্শক মাতালেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা
  • মেয়েকে হাফেজ বানাতে চান বাবা
  • বৈশাখের প্রথম প্রহরে সন্তানের মুখ দর্শন যেন সারা বছরের সুখ
  • নববর্ষের সঙ্গে মিল রেখে সন্তানের নাম রাখা হবে
  • ‘মেয়েকে প্রথম বুকে নিয়ে কথা বলতে পারিনি কিছুক্ষণ’