সুদানে আধা সামরিক বাহিনীর হামলায় অন্তত ১০০ জন নিহত
Published: 13th, April 2025 GMT
সুদানের দারফুর অঞ্চলের দুর্ভিক্ষকবলিত শরণার্থীশিবিরে আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) টানা দুই দিন হামলা চালিয়েছে। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জন শিশু ও ৯ জন ত্রাণকর্মী।
জাতিসংঘের সুদানে নিযুক্ত মানবিক সমন্বয়কারী ক্লেমেনটাইন এনকুয়েটা-সালামি জানান, আরএসএফ এবং তাদের মিত্র মিলিশিয়ারা উত্তর দারফুরের প্রাদেশিক রাজধানী এল-ফাশের এবং তার আশপাশের জমজম ও আবু শোরুক শিবিরে হামলা চালায়। খবর আল জাজিরার।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, শরণার্থীশিবির দুটিতে সাত লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষের বসবাস। ওই অঞ্চলে অতীতের সংঘাতগুলোতে বাস্তুচ্যুত হয়ে তারা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এনকুয়েতা-সালামি বলেন, গত শুক্রবার ও শনিবার দুই দিন এই হামলা চলে। জমজম শিবিরে হাতে গোনা কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটিতে কাজ করার সময় ৯ জন ত্রাণকর্মী নিহত হন। তাদের মধ্যে রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার কর্মীরাও আছেন।
তিনি আরও বলেন, যারা এ ধরনের কাজ করছেন, আমি তাদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাই—অবিলম্বে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করুন।
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা নিহত ত্রাণকর্মীদের নাম উল্লেখ করেননি। তবে সুদানের ডক্টরস ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে জানায়, রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার ছয় চিকিৎসাকর্মী শুক্রবার জমজমে তাদের হাসপাতালে আরএসএফের হামলায় নিহত হন।
সংগঠনটি জানায়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক মাহমুদ বাবাকার ইদরিস এবং সংস্থাটির আঞ্চলিক প্রধান আদম বাবাকার আবদুল্লাহ। সংগঠনটি এই হামলাকে ‘অপরাধমূলক ও বর্বর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং এর জন্য আরএসএফকে দায়ী করেছে।
সেনাবাহিনী গত মাসে জাতীয় রাজধানী খার্তুম পুনর্দখল করার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরএসএফ এল-ফাশের শহরে হামলা জোরদার করেছে। এটি দারফুরে একমাত্র প্রাদেশিক রাজধানী, যা এখনো আরএসএফের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
এই মাসের শুরুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আরএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে তারা নারী ও কিশোরীদের ওপর ‘ভয়াবহ’ যৌন সহিংসতা ও গণধর্ষণ চালিয়েছে, যা সুদানের গৃহযুদ্ধে তাদের কৌশলের অংশ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শ্রম আইন সংশোধনের দাবি আইবিসির
শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শ্রম আইন সংশোধন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)। সেই সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সহজ করা, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের তালিকা প্রকাশ ও পুনর্বাসন, সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সম্পাদিত ১৮ দফা সমঝোতা চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে পদক্ষেপের দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি।
দাবি আদায়ে পয়লা মে শ্রমিক দিবসে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে আইবিসি।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) নেতারা গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইবিসির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি তৌহিদুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন স্বপন, শাহাদাত হোসেন, কামরুল হাসান, নুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও চায়না রহমান প্রমুখ।
বাবুল আখতার বলেন, সরকার ঘোষিত ৯ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি এখনো অধিকাংশ কারখানায় কার্যকর হয়নি। ঈদ সামনে রেখে সরকারের নির্দেশনা ছিল মার্চ মাসের ১৫ দিনের মধ্যে মজুরি ও উৎসব ভাতা পরিশোধের। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশনা অমান্য করে।
সংগঠনটির নেতারা আরও বলেন, ‘ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের শ্রম ভবনের সামনে আন্দোলন করতে দেখেছি। জীবিকা না থাকলে তারা কোথায় যাবে।’ তাঁরা আরও জানান, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএয়ের কাছে সব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের তথ্য আছে। তারা চাইলেই কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে এবং কোন শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন, সে তথ্য প্রকাশ করতে পারে। শ্রমিকের জীবিকার ওপর এই আঘাতের দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা আরও বলেন, গত ৮ থেকে ৯ মাসে প্রায় ৮০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন। তাঁদের বেশির ভাগেরই এখনো তালিকা ও পুনর্বাসন করা হয়নি। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও শ্রমিকেরা মজুরি, অন্যান্য সুবিধা, ইনক্রিমেন্ট, চাকরি রক্ষা ইত্যাদি দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামছেন।
সংগঠনটির সভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। এখনো ৫০ টির বেশি ট্রেড ইউনিয়নের আসন অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। শ্রমিক ফেডারেশনগুলো দলীয়করণ হচ্ছে। ফেডারেশনগুলোর কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিতে নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে কমিটি গঠন করতে হবে। এ সময় শ্রম আইনের সমালোচনা করে নেতারা বলেন, শ্রম আইন ও নীতি বর্তমান সময়ের সঙ্গে যুগোপযোগী নয়। আশুলিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানে আইনের কিছুটা বাস্তবায়ন দেখা গেলেও নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের এখনো সব আইন বাস্তবায়িত হয়নি।
শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের ওপর দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে পারে, তাহলে শ্রমিক নেতাদের মামলা কেন প্রত্যাহার করতে পারছে না।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়ে সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রশংসা করে নেতারা বলেন, পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হলেও এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে আরও কৌশলী ও জোরালো ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করেন নেতারা।