এক মাস পরই চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা। আমার এখন পড়াশোনায় মগ্ন থাকার কথা। আপ্রাণ সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। কিন্তু আমার মন তো পড়ে আছে গাজায়। চাইলেও তাই পড়ার টেবিলে মন বসাতে পারছি না। গাজায় আমাদের বাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্বজনদেরও কারও বাড়ির অস্তিত্ব নেই। প্রায় ছয় মাস ধরে ক্যাম্পে অবস্থান করছে আমার পরিবার। মা-বাবা আর পরিবারের সদস্যদের জন্য সব সময় দুশ্চিন্তা হয়। প্রতিদিন কথা বলারও সুযোগ হয় না। এর মধ্যেই খবর পেয়েছি, গত সপ্তাহে আমার পরিবার যে ক্যাম্পে অবস্থান করছিল, সেখানে কামান দিয়ে গোলা ছুড়েছে ইসরায়েলিরা। আমার পরিবারের সদস্যরা প্রাণে বেঁচে গেলেও চারজন আহত হয়েছেন। তাঁরা এখন অনেকটা সুস্থ। হামলার পর অন্য আরেকটা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।

গাজায় প্রায় সব পরিবারের গল্পই এখন এ রকম। আমার বন্ধু কিংবা আত্মীয়স্বজন সবার বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে তো পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন। আল্লাহর রহমতে আমার পরিবারের সবাই নিরাপদে আছেন, এটাই এখন মন্দের ভালো খবর। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে প্রায় ২০ জন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। সবাই এখন পরিবারের লোকজনের কথা ভেবে চিন্তিত। গাজায় তো দীর্ঘদিন ধরে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাই আমরা যেন দুঃসংবাদের সঙ্গে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছি। তবে গেল কয়েক দিনের অবস্থা বর্ণনা করার মতো নয়। এত খারাপ অবস্থা আগে হয়নি, এতটুকু বলতে পারি।

ফেসবুক বা যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলেই আমার ভাইবোনদের করুণ পরিস্থিতি দেখতে হচ্ছে। মৃত্যুর খবর সামনে চলে আসছে। এসব থেকে দূরে থাকতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও কম ব্যবহার করছি। আমাদের যেহেতু সামনে পরীক্ষা, তাই পড়াশোনার মধ্যে নিজেদের ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি।

তবে ফিলিস্তিনে পরিস্থিতির অবনতির পর থেকেই আমাদের বাংলাদেশি বন্ধু, সহপাঠী, শিক্ষকেরা সবাই নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। ক্লাসে গেলেই আমাদের বাড়ির খবর জানতে চায় বন্ধুরা। আমাদের শিক্ষকেরা সব সময় দেশি-বিদেশি সব শিক্ষার্থীকেই সমান চোখে দেখেন। এখন তাঁরা যেন এটি আরও বেশি করে চর্চা করছেন। যেন আমরা মাথা থেকে দুশ্চিন্তা সরিয়ে অন্য সবার মতো পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারি। আমরাও যথাসম্ভব পড়াশোনায় ব্যস্ত থেকে নিজেদের স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।

আমার মেডিকেল কলেজের সহপাঠীসহ বাংলাদেশের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি জানি, এ দেশের সব মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে। ৬ এপ্রিল ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। আমার মেডিকেল কলেজের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও ওই দিন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, ইসরায়েলিদের বর্বরতার প্রতিবাদ করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন একদিন মুক্ত হবে। বাংলাদেশি বন্ধুদের নিয়ে একদিন মুক্ত-স্বাধীন ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াব।

আরও পড়ুনযে ফিলিস্তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম১৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র আম দ র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৭, আহত ২৯

ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ রবিবার (১৩) রাতের হামলায় ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২৯ জন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

সোমবার (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। 

সানার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রবিবার রাতে রাজধানীর কাছে একটি সিরামিক কারখানায় বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে ৭ জন নিহত এবং আরো অন্তত ২৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পাঁচজন শিশু এবং একজন নারী রয়েছেন। নিহতরা কারখানার শ্রমিক এবং এর পাশের বাড়ির বাসিন্দা।

আরো পড়ুন:

ইউক্রেনে সুমি শহরে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৩৪, ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বললেন ট্রাম্প

মার্কিন দূতাবাসের কড়া বার্তা
যে কারণে কখনো যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারবেন না

এদিকে হুতিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, হাজ্জাহ গভর্নরেটের আকাশসীমায় একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। 
 
হুতিদের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, হাজ্জাহ গভর্নরেটের আকাশসীমায় এমকিউ-৯ মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী গত ১৫ মার্চ থেকে হুতিদের ওপর বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে।  লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে হুতিদের আক্রমণ বন্ধ করার লক্ষ্যে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে এই অভিযান বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এদিকে হুতি গোষ্ঠী বলেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা লোহিত সাগরের জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে এবং তাদের বাহিনী হামলার জবাব দেবে।

এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে ইরান সমর্থিত হুতিরা। ইয়েমেনের অধিকাংশ অঞ্চলই এখন তাদের দখলে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে এর প্রতিবাদে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে তারা ১০০ এর বেশি হামলা চালিয়েছে।

এরপর হুতিদের থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে হামলা শুরু হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তাই নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে আবারো হুতিদের ওপর হামলা জোরদার করার নির্দেশ দেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ