গাজার বেশির ভাগ অংশে জোরালো হামলা শুরুর ঘোষণা ইসরায়েলের
Published: 13th, April 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ ঘোষণা করেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ অংশে শিগগিরই তাদের সামরিক অভিযান ‘জোরালোভাবে’ সম্প্রসারিত করা হবে।
ইসরায়েল কার্তজ আরও বলেন, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকার দক্ষিণে একটি ‘নিরাপত্তা অঞ্চলের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এটা রাফা ও খান ইউনিস শহরকে পৃথক করেছে।
এরই মধ্যে খান ইউনিস ও আশপাশের এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে আকাশপথে হামলার কড়া জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও হামাস কোনো হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
টানা দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় হামাসের ওপর আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে তারা গাজায় আরও বড় এলাকা দখল করেছে। হাজারো গাজাবাসীকে নতুন করে বাস্তুচ্যুত করেছে।
গতকাল শনিবার ইসরায়েল কার্তজ বলেন, রাফা ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী সাবেক ইহুদি বসতি ‘মোরাগ এক্সিস’ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্পন্ন করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এর মধ্য দিয়ে গাজার খান ইউনিস থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাজা উপত্যকার প্রায় এক–পঞ্চমাংশ ভূমিজুড়ে রয়েছে রাফা।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে দেন, শিগগির গাজার আরও বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হামলা জোরদার করবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এসব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে মানুষদের সরিয়ে নিতে হবে। হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের মুক্ত করে আনা এবং যুদ্ধের অবসানের এটাই শেষ মুহূর্ত।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিতে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করে গাজায় আনা হয় ২৫১ জনকে। ইসরায়েলের সরকারি তথ্য এটা।
এর জবাবে ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, যা এখনো চলছে। নির্বিচার হামলায় উপত্যকাটিতে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গড় ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর নিহত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ জন।
গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাযুদ্ধবিরতি ভাঙার পর গাজায় ৫০০ শিশু হত্যা করেছে ইসরায়েলগাজা যুদ্ধের নিন্দা জানানো সেনাদের চাকরিচ্যুত করবে ইসরায়েলযে ফিলিস্তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামইসরায়েলের অন্তত ৩৬ বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন শুধুই নারী ও শিশুরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: খ ন ইউন স ইসর য় ল র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ঢালাইকার থেকে প্রথম মানুষ হিসেবে যেভাবে মহাকাশে পা রাখলেন গ্যাগারিন
দিনটি ছিল ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল। কাজাখস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত মহাকাশ বন্দর বাইকোনুর কসমোড্রমে শীতের চাদর ভেদ করে ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয়েছে প্রকৌশলীদের দৌড়ঝাঁপ। প্রতিটি যন্ত্র, প্রতিটি সংযোগ—দ্বিগুণ সতর্কতায় পরীক্ষা চলছে। লঞ্চপ্যাডে (যে স্থান থেকে রকেট উৎক্ষেপণ হয়) তখন উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। এর মধ্যে সেখানে অপেক্ষমাণ ভস্তক–১ রকেটের ককপিটে গিয়ে বসলেন এক তরুণ। গায়ে চাপানো কমলা রঙের স্পেস স্যুট আর চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক।
সেই ঐতিহাসিক সকালে ২৭ বছর বয়সী ওই তরুণকে নিয়ে ছোট্ট মহাকাশ যানটি ছুটে গেল অসীম অজানার উদ্দেশ্যে। সামনে সীমাহীন অনিশ্চয়তা। আর কখনো চেনা ডেরায় ফিরতে পারবেন কি না, জানা নেই। যে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে চলেছেন সেখানে পৌঁছাতে পারবেন কি না, তার ঠিক নেই। যাত্রাপথে উনিশ-বিশ হলে নেই বেঁচে ফেরার একরত্তি সম্ভাবনা। এরপরও এক অদম্য নেশায় পাড়ি দিলেন পৃথিবী নামক গ্রহের চৌহদ্দি। আর ফিরলেন ইতিহাসের খোলনলচে বদলে দিয়ে। মহাকাশে যাওয়া প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পা রাখলেন পৃথিবীর বুকে।
ইউরি গাগারিনের ছেলেবেলা কেটেছে সোভিয়েত রাশিয়ার স্মোলেনস্কক অঞ্চলের ক্লুশিনো গ্রামে, জন্মও সেখানেই। বাবা-মা দুজনই ছিলেন কৃষক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁদের পরিবার নাৎসিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। যুদ্ধের প্রভাব সংসারে এসে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব সংসারের হাল ধরার তাড়না অনুভত করেন তিনি। ১৯৪৯ সালে বয়স যখন ১৫, ঠিক করলেন মাধ্যমিক স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়বেন।বলছি বিখ্যাত সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের কথা। কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া গ্যাগারিন কৈশোরে ছিলেন ঢালাইকার। আকাশে ওড়ার অদম্য নেশা তাঁকে ঢালাই কারখানা থেকে নিয়ে গেছে উড়োজাহাজের ককপিট পর্যন্ত। সময়ের আবর্তে সেই স্বপ্ন আকাশ ছাড়িয়ে ছুঁয়েছে মহাকাশের গণ্ডি। ইউরি গ্যাগারিনের দুঃসাহসী অভিযান খুলে দিয়েছে মহাকাশ গবেষণা নিয়ে অপার সম্ভাবনার দুয়ার।
প্রথম মানব হিসেবে এই তরুণের মহাকাশে পা রাখার ঘটনা সে সময় বিশ্বের বুকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিশ্বদরবারে রাতারাতি তারকা বনে যান ইউরি গ্যাগারিন। তাঁকে দেওয়া হয় জাতীয় বীরের খেতাব। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতর-বাহির থেকে তাঁর ঝুলিতে যোগ হতে থাকে একের পর এক পুরস্কার-সম্মাননা।
সংসারের হাল ধরতে ঢালাইকারের চাকরি
ইউরি গ্যাগারিনের ছেলেবেলা কেটেছে সোভিয়েত রাশিয়ার স্মোলেনস্কক অঞ্চলের ক্লুশিনো গ্রামে, জন্মও সেখানেই। বাবা-মা দুজনই ছিলেন কৃষক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁদের পরিবার নাৎসিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। যুদ্ধের প্রভাব সংসারে এসে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব সংসারের হাল ধরার তাড়না অনুভব করেন তিনি।
১৯৪৯ সালে বয়স যখন ১৫, ঠিক করলেন মাধ্যমিক স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়বেন। বাবা-মা ছাড়তে না চাইলেও সিদ্ধান্তে অনড়, চলে গেলেন মস্কোয় চাচার কাছে। তাঁর পরামর্শে মস্কোর উপকণ্ঠে ল্যুবের্তস্কি শহরের কৃষিযন্ত্র বৃত্তি বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। তরুণ শ্রমিকদের সন্ধ্যাকালীন বিদ্যালয়ে তার ভবিষ্যৎ পেশা নির্ধারিত হলো ঢালাই কলঘরের ঢালাইকার।
—‘পৃথিবী দেখছি’ শিরোনামে নিজের লেখা বইয়ে ইউরি গ্যাগারিন বলেছেন, ‘পেশাটা সহজ নয়। তাতে শুধু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নয়, রীতিমতো দৈহিক শক্তিও দরকার।’
আকাশে ওড়ার নেশা