বান্দরবানে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে সাংগ্রাই শুরু
Published: 13th, April 2025 GMT
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বসবাসরত ১১টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অন্যতম প্রাণবন্ত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর ‘সাংগ্রাই’ উৎসব শুরু হয়েছে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৮ টার দিকে বান্দরবানের রাজার মাঠ থেকে শোভাযাত্রাটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
উৎসব উদ্বোধন করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি। তিনি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে শুভ সূচনা করেন।
বান্দরবানে বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, ম্রো, খিয়াং, খুমি, বমসহ ১১টি জাতিগোষ্ঠী এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সারিবদ্ধভাবে হাতে ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে, গানের সুর ও তালের সঙ্গে আনন্দঘন পরিবেশে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে শোভাযাত্রাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়।
এই উৎসবটি প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী নিজ নিজ নামে উদযাপন করে থাকে। মারমারা একে বলে সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, আর অন্যান্যরা চাংক্রান নামে অভিহিত করে। বান্দরবানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির অনন্য প্রতীক এই উৎসব পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনে এনে দেয় নতুন আনন্দ, মিলন ও আশাবাদের বার্তা।
বান্দরবান জেলা উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে এ সাংগ্রাই উৎসব ১৩ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচী রয়েছে। সাংগ্রাই বর্ণাঢ্য র্যালি, বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা, বুদ্ধস্নান, পাড়া ভিত্তিক পিঠা উৎসব, ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা, তৈলাক্ত বাঁশে আরোহণ, সর্বশেষ টানা তিনদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মৈত্রীয় পানি বর্ষণ বা জলকেলি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
উৎসব উদযাপন পরিষদের কমিটির সভাপতি চনুংমং মার্মা বলেন, বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় উৎসব সাংগ্রাই। আজ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে আজ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাইসহ অনেকেই উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
ঢাকা/চাই মং/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন দরব ন বর ণ ঢ য ই উৎসব
এছাড়াও পড়ুন:
শাল-গজারি বনে রং ছড়িয়ে বিদায় নিচ্ছে বসন্ত
প্রকৃতি থেকে বসন্ত বিদায় নিচ্ছে। আসছে গ্রীষ্ম। বসন্তের বিদায়বেলায় বিস্তৃত সবুজ শাল-গজারি বনে বাসন্তী রং ছড়াচ্ছে হলদে শাল-গজারি ফুল। গাজীপুরের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে এখন বসন্তের এই রং উৎসব চলছে। বিশেষ করে শ্রীপুর, গাজীপুর সদরের একাংশ, কাপাসিয়ার একাংশ ও কালিয়াকৈর উপজেলার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে চলছে এই রঙের উৎসব।
শ্রীপুরের কর্ণপুর থেকে বরমী কিংবা হায়াতখার চালা থেকে গোসিংগা আঞ্চলিক সড়কের মতো অনেকগুলো সড়ক ভ্রমণ এখন যে কাউকে এক ব্যতিক্রমী বসন্তের অভিজ্ঞতা দেবে। বিশেষ করে এ সময় মাওনা থেকে কালিয়াকৈর উপজেলায় যাতায়াতের সড়কপথের পুরোটাই ফুলে ছেয়ে থাকে। এসব সড়কে ভ্রমণ করলে দেখা যায়, দুই পাশে শুকনা পাতার ওপর ছড়িয়ে আছে কাঁচা হলুদ রঙের শাল-গজারি ফুল। সঙ্গে আছে মোহনীয় গন্ধ।
শাল-গজারি বনের কোনো একটি গাছের মাথায় উঠে চারদিকে তাকালে মনে হবে, বনের গাছপালার ওপর কেউ যেন হলুদ রঙের মাদুর বিছিয়ে রেখেছে। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছিসহ নানা কীটপতঙ্গ। পাখিদের ওড়াউড়িতে বনজুড়ে যেন এক মহোৎসব চলছে। পাখির ডানা ঝাপটানো কিংবা হঠাৎ একটু দমকা বাতাসে গাছ থেকে নিচে ঝরে পড়ে হলুদ শাল-গজারি ফুল। বসন্তে গাছের সব পাতা ঝরে যাওয়ার পর গাছে থাকা হলুদ ফুলগুলো এক অনন্য সৌন্দর্য ছড়ায়।
প্রতিবছর বসন্তের মাঝামাঝি থেকে শাল-গজারিগাছে ফুল ফুটতে শুরু করে। এরপর গাছ থেকে অপরিণত অবস্থায় বেশির ভাগ ফুল নিচে ঝরে পড়ে। থেকে যাওয়া ফুলগুলো বড় হয়। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এসব ফুল পরিণত হয়ে যায়। তখন এর রং হয় কিছুটা বাদামি।
পরিণত ফুলের আবার অন্য রকম সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য আছে। এসব ফুলের এক পাশে থাকে বীজ। আর অন্য পাশে ফুলের পাপড়ির মতো ছড়ানো বড় বড় পাতলা পাপড়ি। একসময় গাছ থেকে বীজসহ এসব ফুল ঝরে পড়ে। তখন বীজের এক পাশে থাকা পাপড়ির মতো অংশ বাতাসে ঘুরতে ঘুরতে এলোমেলোভাবে দূরদূরান্তে বীজগুলোকে ছড়িয়ে দেয়।
বসন্তের এ সময় শাল-গজারি বনে বিভিন্ন ফুল ফোটে। এগুলোর মধ্যে আছে কনকচাঁপা, জারুল, শিমুল, শেফালি, শিরীষ, মান্দার, কামিনী, অতসী, দাঁতরাঙা, কাঞ্চন, বেলি, শটি, রঙ্গনসহ নানা ফুল।
শাল-গজারি বনের বর্ণিল বিভা বসন্তের সৌন্দর্যে যোগ করে নতুন মাত্রা