যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিকে সম্পূরক শুল্কের আওতা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। চীন থেকে এসব পণ্য আমদানিতে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।

ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার পেট্রোল এক নোটিশে বলেছে, বেশিরভাগ দেশের ওপর ট্রাম্প যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, সেই শুল্ক এবং চীনের ওপর আরোপিত উচ্চ হারের সম্পূরক শুল্কের আওতার বাইরে থাকবে এসব পণ্য।

বিবিসি লিখেছে, এ সিদ্ধান্তকে চীনের ওপর ট্রাম্পের শুল্কের প্রথম উল্লেখযোগ্য ছাড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। একজন বাণিজ্য বিশ্লেষক একে ‘গেইম-চেঞ্জার পরিস্থিতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

শনিবার রাতে মিয়ামি সফরের সময় ট্রাম্প বলেন, আগামী সপ্তাহের শুরুতে তিনি ছাড়ের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানাবেন।

এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা খুব নির্দিষ্ট করে জানাব। কিন্তু আমরা অনেক টাকা নিচ্ছি। দেশ হিসেবে আমরা অনেক টাকা নিচ্ছি।

নতুন শুল্কনীতির কারণে বিভিন্ন গ্যাজেটের দাম আকাশচুম্বী হতে পারে বলে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো উদ্বেগ প্রকাশের পর এই পদক্ষেপ নিল ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ এসব গ্যাজেটের বেশিরভাগই তৈরি হয় চীনে।

৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া এই ছাড়ের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর, সোলার সেল, মেমোরি কার্ডসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং উপাদানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের প্রযুক্তি গবেষণার বৈশ্বিক প্রধান ড্যান আইভস এক্স পোস্টে বলেছেন, প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্ক ছাড় হচ্ছে স্বপ্নের মত। চীনা শুল্কের ক্ষেত্রে স্মার্টফোন, চিপ বাদ দেওয়া একটি গেইম-চেঞ্জার পরিস্থিতি।

অ্যাপল, এনভিডিয়া, মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং বিশাল প্রযুক্তি খাত এই সপ্তাহান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, আইফোনের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে গত বছর অ্যাপলের অর্ধেকের বেশি স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করা অ্যাপলের ৮০ শতাংশ আইফোন চীনে তৈরি, বাকি ২০ শতাংশ তৈরি ভারতে।

সহযোগী স্মার্টফোন জায়ান্ট স্যামসাংয়ের মত অ্যাপল চীনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এড়াতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরবরাহ চেইনে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। নতুন উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে এগিয়ে রয়েছে ভারত ও ভিয়েতনাম।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র অ য পল

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ