ঘুড়ি উৎসব, লাঠিখেলা, সাপখেলা, নাগরদোলা, পুতুলনাচ—এমন নানা আয়োজনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজানো হচ্ছে চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা বর্ষবরণ উৎসব। গ্রামীণ ঐহিত্য আর খুলনার আঞ্চলিক বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আয়োজিত ওই উৎসব হচ্ছে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর। ২০১৯ সালে সর্বশেষ এমন পরিপূর্ণ আয়োজন করতে পেরেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে এবার নিরাপত্তার কারণে ক্যাম্পাসের বাইরে শোভাযাত্রা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ভিন্নধর্মী বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী উৎসব উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে। ১৩ এপ্রিল (বাংলা ৩০ চৈত্র) উদ্‌যাপন করা হয় চৈত্রসংক্রান্তি আর পরের দিনে বাংলা বর্ষবরণ। রকমারি গ্রামীণ খেলাধুলা ও উৎসবের মধ্য দিয়ে দিন দুটি উদ্‌যাপন করা হয়। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া কোভিড এবং পরে পয়লা বৈশাখের সময় রোজা, ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে গত পাঁচ বছর বাংলা বর্ষবরণে বড় কোনো আয়োজন ছিল না। কোনো রকম একটা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হতো। তবে এবার আয়োজনে পরিপূর্ণতা রয়েছে। প্রায় সব ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব শুরু হবে আজ রোববার বিকেল ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হবে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা, ঘুড়ি উৎসব ও আলপনা উৎসব। সন্ধা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পুতুলনাচ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরদিন পয়লা বৈশাখে সকাল সোয়া ৭টায় বর্ষ আবাহন, সকাল ৯টায় খেলার মাঠে মেলার উদ্বোধন, ১০টায় আনন্দ শোভাযাত্রা ও বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া দিনব্যাপী থাকবে লাঠিখেলা, জাদু প্রদর্শনী, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী ওই উৎসবের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। আর্থিক সহায়তা করে বিশ্ববিদ্যালয়। শোভাযাত্রার আয়োজন করার দায়িত্ব থাকে চারুকলা স্কুলের (অনুষদ) ওপর। পবিত্র রোজা ও ঈদের ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে ৬ এপ্রিল। ৭ এপ্রিল ইসরায়েলবিরোধী সমাবেশের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এরপর সিদ্ধান্ত নিয়ে উৎসব আয়োজনের কাজ শুরু করা হয়েছে।

গত শনিবার দুপুরের দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চারুকলা স্কুল (অনুষদ) চত্বরে হরিণ, মুখোশসহ বিভিন্ন কিছু বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। শেষ মুহূর্তে হাতের ছোঁয়া বুলিয়ে আরও সুন্দর করার চেষ্টা চলছে সবকিছুতে।

সেখানে কাগজের মণ্ডের মুখোশ বানানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন ভাস্কয ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার হোসেন ও তৃতীয় বর্ষের সংগীত পাল। আবরার হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর রোজা ও ঈদের ছুটির কারণে বড় কোনো অনুষ্ঠান করা যায়নি। ২০১৯ সালের পর এবারই বর্ষবরণের যে উৎসব, সেটি পরিপূর্ণভাবে উদ্‌যাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবার অবশ্য ঢাকার সঙ্গে সংগতি রেখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নাম পরিবর্তন করে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে। কোনো কিছু পরিবর্তন করে যদি ভালোকিছু হয়, তাহলে সেটাই সবাই গ্রহণ করবে। নাম দিয়ে আসলে তেমন কিছু হয় না, উদ্‌যাপনে উৎসবটা থাকলেই হলো।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে তৈরি করা হচ্ছে শোভাযাত্রার মাসকট সুন্দরবনের ঐতিহ্য হরিণ.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অনেক আয়োজন বন্ধে ম্লান বর্ষবরণ উৎসব

বরিশালে বাংলা বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় আয়োজন হতো নগরে কালীবাড়ি সড়কে বিএম স্কুল মাঠে। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের সকালে সেখানে প্রভাতি অনুষ্ঠান শেষে বের হতো বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। মাঠে তিন দিনব্যাপী হতো বৈশাখী মেলা ও লোকজ সংস্কৃতি উৎসব। উৎসবপ্রিয় মানুষের স্রোত যেতে বিএম স্কুলের দিকে। চার দশকের সেই উৎসব রেওয়াজ এবারের বর্ষবরণে ম্লান হয়ে গেছে। শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা দুটিই অনিশ্চিত। মেলা ও শোভাযাত্রা হবে কিনা, তা আয়োজকরা গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সমকালকে নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিওবা হয়, সেটা হবে অনেকটা প্রতীকী আয়োজনের মতো।  
এ দুটি আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রশাসন নিরাপত্তার অজুহাত দেখাচ্ছে। তা ছাড়া কয়েক দশক ধরে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করা আরও কয়েকটি সংগঠন এ বছরের আয়োজন থেকে বিরত রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন বেলস পার্ক মাঠে সাত দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করছে।

৪৩ বছর ধরে মেলা ও লোকজ সংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করে আসছে উদীচী বরিশাল শাখা। চারুকলার উদ্যোগে হতো মঙ্গল শোভাযাত্রা। তাদের এ আয়োজন শুরু হয় ৩৩ বছর আগে। সকালে বিএম স্কুল প্রাঙ্গণে প্রভাতী অনুষ্ঠান শেষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগর প্রদক্ষিণ করত। নারী-পুরুষ-শিশুরা বর্ণিল সাজে এতে অংশ নিত। 
উদীচী বরিশাল শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট বিশ্বনাথ মুন্সী। তিনি জানান, সংগঠনের বৈশাখী মেলা ৪৩ বছর আগে প্রথম শুরু হয়েছিল কালীবাড়ি সড়কের জগদীশ সারস্বত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। পরে সেটি একই সড়কের বিএম স্কুলের বড় মাঠে স্থানান্তর হয়। প্রতিবছরই পরিসর বড় হতে থাকে। এক দিনের মেলা উন্নীত হয় তিন দিনে। এটি নগরীতে বর্ষবরণের প্রধান উৎসব কেন্দ্রে পরিণত হয়। মেলা শুরুর ১০ বছর পর চারুকলা একই স্থান থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু করে। উদীচীও যার অংশীদার হয়।
এবারের আয়োজনের বিষয়ে অ্যাডভোকেট মুন্সী বলেন, প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে অনুমতি নেওয়ার জন্য। যেহেতু ৪৩ বছর ধরে উদীচী লিখিত অনুমতি নেয়নি, এবারও নেবে না। মেলা হবে কিনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকালে প্রভাতী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তখন কেউ পসরা নিয়ে বসে পড়লে সেটাই মেলায় পরিণত হবে। 
শোভাযাত্রা করার জন্য ছোট পরিসরে আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে চারুকলার সংগঠক সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, তবে শোভাযাত্রা হবে কিনা সেটা পহেলা বৈশাখ সকালে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। 
চারুকলা বরিশালের সভাপতি দীপংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রশাসন যদি করতে না দেয়, তাহলে কিছু করার নেই।’ 

প্রতিবছর ৩০ চৈত্র বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরের প্রাণকেন্দ্র অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে লোকজ সংগীত পরিবেশন করত গণশিল্পী সংস্থা। সংগঠনটির জেলা সাধারণ সম্পাদক সাঈদ পান্থ জানান, তারা ২৫ বছর ধরে এ অনুষ্ঠান করছেন। আজ ৩০ চৈত্র তাদের এ আয়োজন নেই। কেন করেননি– এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। 
৪০ বছর ধরে পহেলা বৈশাখ সকালে অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে প্রভাতী অনুষ্ঠান করে আসছে শিশু সংগঠন খেলাঘর। এ বছর এ অনুষ্ঠান হবে না। এ বিষয়ে খেলাঘরের সংগঠক শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, অশ্বিনী কুমার হলে জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠান থাকায় তারা স্থান বরাদ্দ পাননি। তবে ২ মে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান একসঙ্গে হবে। 
নগরের আমানতগঞ্জে তিন দিনব্যাপী আরেকটি বৈশাখী মেলার আয়োজন করত চাঁদের হাট। সংগঠনের জেলা সদস্য আরিফুর রহমান বাবু বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় এ বছর মেলা হবে না।
নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাউকে মেলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে এ বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের বৈশাখী শোভাযাত্রায় সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেলস পার্কে সাত দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সার্কিট হাউস থেকে বের হবে জেলা প্রশাসনের শোভাযাত্রা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবারের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • ‘উৎসবের উচ্ছ্বাসে আজ মেতেছে সারা দেশ’
  • পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ উৎসবের একাল-সেকাল
  • রাঙামাটিতে ঘরে ঘরে পাঁজন আপ্যায়ন
  • অনেক আয়োজন বন্ধে ম্লান বর্ষবরণ উৎসব
  • ট্রাম্প-পুতিন দুজনই জেলেনস্কির বিদায় চান, তা কি সম্ভব
  • আইনিভাবে তৃতীয় বিয়ের ইতি টানলেন শ্রাবন্তী
  • শ্রাবন্তীর সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদের পর যা বললেন রোশন
  • শ্রাবন্তীর সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদের পর যা বললেন রোশন সিং