এক যুগ পর পান্তা-ইলিশে পহেলা বৈশাখ উৎযাপন করতে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পাঁচ হাজার বন্দী। শুধু পান্তা-ইলিশই নয়, সঙ্গে পাবেন পান-সুপারি। বৈশাখের আনন্দ আয়োজনের ষোলকলা পূরণ করতে বাদ যাবে না মিষ্টিও। বৈশাখ ঘিরে কারাগারের ভেতর বন্দীদের বিনোদন দিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। কারাবন্দী শিল্পীদের পাশাপাশি বাইরের সঙ্গীত শিল্পীর পরিবেশনার পরিকল্পনা রয়েছে কারা কর্তাদের। এরই মধ্যে পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন সমকালকে বলেন, কারাবন্দী সকল কয়েদি ও হাজতিকে পহেলা বৈশাখের দিন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের সকল প্রস্তুতি চলছে। কারাগারে ঠিকাদারের মাধ্যমে ইলিশ মাছ সংগ্রহ করা হচ্ছে। কারাগারের ভেতর বন্দীদের বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। বন্দীদের নিজস্ব একটি শিল্পী দল আছে- তারা গান গাইবেন। বাইরে থেকেও শিল্পী আনার চেষ্টা চলছে। 

চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার মাসুদ হাসান জুয়েল বলেন, কারাগারে প্রায় এক যুগ আগে বন্দীদের পান্তা-ইলিশ খাওয়ানোর মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ বরণ করা হয়েছিল। তারপর বন্দীদের পান্তা-ইলিশ দেওয়া হয়নি। তবে প্রতি বছর বৈশাখের বিশেষ দিনে উন্নতমানের খাবার দেওয়া হতো। এবারও পান্তা-ইলিশের পাশাপাশি উন্নতমানের খাবার পরিবেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ হাজার বন্দীর জন্য সকালে পান্তা-ইলিশের পাশাপাশি দুপুরে পোলাও, মুরগির মাংস ও ডালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৈশাখের বাঙালিয়ানার আমেজ বন্দীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পান, সুপারি ও মিষ্টি খাবারের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে কারাগারের চার দেওয়ালের ভেতর উৎসবমুখর পরিবেশে বন্দীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে দিনভর। 

সার্মথ্য ও সুবিধা অনুযায়ী আঞ্চলিক পিঠা, হাওয়াই মিঠাইসহ নানা খাবারের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ করছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাবন্দিদের মতো কারা কর্মকর্তা কর্মচারীরা পহেলা বৈশাখের দিন বিশেষ খাবার পাচ্ছেন। প্রত্যেকের জন্য ৫০ টাকা করে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পৃথকভাবে কারাগারের বাইরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ক ত ক অন ষ ঠ ন র বন দ দ র

এছাড়াও পড়ুন:

চুরির অপবাদ দেওয়ায় শরীরে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা, দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে

কুমিল্লার চান্দিনায় চুরির অপবাদ দেওয়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার এক চালক শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চান্দিনা উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতালসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মো. সবুজ নামের ওই চালককে চান্দিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, আগুনে সুবজের শরীরের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সবুজ চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চান্দিনা উপজেলা সদরের বেলাশহর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চান্দিনা সদরের হাসপাতাল সড়কের ইউনুছ মিয়ার অটোরিকশা গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে সবুজসহ তিনজন ওই গ্যারেজে তাঁদের অটোরিকশা রাখেন। পালাক্রমে তাঁরা তিনজন পাহারাও দেন। প্রায় চার মাস আগে এক রাতে পাহারার দায়িত্ব ছিলেন সবুজ। ওই দিন রাত আনুমানিক দুইটার দিকে গ্যারেজে তালা দিয়ে সবুজ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যান। ওই সময় চোরচক্র দুটি অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন ওই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মানিক নামের একজনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। সেদিন রাতেই পুলিশ মানিককে ছেড়ে দেয়। পরে স্থানীয় কয়েকজন মাতবর সবুজকে চোর আখ্যা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু সবুজ জানান, তিনি ওই রায় মানেন না এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর নেই।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় কয়েকজন মাতবরের প্ররোচনায় সালাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি সবুজকে আটক করে তাঁর অটোরিকশা নিয়ে যান। এ সময় তাঁকে চোর আখ্যা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সে প্রকাশ্যে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

সুবজের স্ত্রী খুশি আক্তার বলেন, ‘মাতবররা চোর ধরে ছেড়ে দিছে আর আমার স্বামীরে চুরির অপবাদ দিয়ে জরিমানা করেছে। আমার স্বামী চোর আখ্যা দেওয়ার এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। গরিবের জন্য আইন নাই, বিচার নাই। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

গতকাল রাতে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ উল ইসলাম বলেন, ‘অটোরিকশা চুরির ঘটনায় সময় মানিক, সাইফুল ও নাজমুল নামের তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা হয়। ওই চুরির ঘটনায় সবুজকে দায়ী করে চাপ সৃষ্টি করলে সে অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জেনেছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ