ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর ব্যাংকঋণে অনিয়ম, কর ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে সরকার গঠিত ১১টি তদন্ত দল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও পাচার করা অর্থের খোঁজ মিলেছে এস আলম গ্রুপের। এসব ঘটনায় ইতিমধ্যে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির কাজ চলছে। অর্থ উদ্ধারে কোন ধরনের বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নির্ধারণের কাজ চলছে। এতে সহায়তা দিচ্ছেন বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত পাচার করা অর্থ উদ্ধার বিশেষজ্ঞরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এই বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এর পর থেকে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বয়ে যৌথ তদন্ত দল। সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশেষ নিরাপত্তাবিশিষ্ট কক্ষে চলছে তদন্তের নথিপত্র প্রস্তুতের কাজ।

শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠী নিয়ে তদন্ত চলছে, সেগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ। এসব গ্রুপের পাশাপাশি গ্রুপের প্রধান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।

১১টি পরিবার ও গ্রুপের অনিয়মের তদন্ত নিয়ে প্রতি মাসে সভা করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ১৬ এপ্রিল আবারও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ–সংক্রান্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে আজ রোববার পাচারের অর্থ ফেরতসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

গভর্নর গত শুক্রবার চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সব মিলিয়ে আমার ধারণা, আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে বড় শিল্প গ্রুপ ও তাদের পরিবারও রয়েছে। বেক্সিমকোর পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। ছয় মাসের মধ্যে বিদেশে পাচার করা সম্পদের বড় একটি অংশ জব্দ করা হবে। এ জন্য আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলছি। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে চিঠি দিচ্ছি। বিদেশি আইনি সংস্থা বা ফার্মের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, এ কাজে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।’

তদন্তে অগ্রগতি কত দূর

জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নিজে ও বিভিন্ন দেশের এফআইইউগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, এসব টাকার গতিপথ, বাইরের কোন দেশে কোথায় কত সম্পদ গড়ে তুলেছেন ও বাইরের ব্যাংকে কত অর্থ জমা আছে। এ ছাড়া ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতির তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন এসব লেনদেনে কোথায় কর ফাঁকি হয়েছে, কোথায় অর্থ পাচার হয়েছে—এসব অনিয়ম কোন আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য, তা নির্ধারণ করছে দুদক, এনবিআর ও সিআইডি। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। আরও মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ১১টি তদন্তের মধ্যে ৯টি গ্রুপেরই বিদেশে সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এসব সম্পদের সবই পাচার করা অর্থে গড়ে উঠেছে। এখন দেশে মামলার মাধ্যমে এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হচ্ছে। তবে বিদেশে সম্পদ প্রকৃত অর্থে জব্দ করতে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা করা হবে। এরপর সে দেশ থেকে রায় হলে সম্পদ জব্দ হবে।

কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির কাজ চলছে। অধ্যাদেশ তৈরি হলে এর আলোকে বিদেশে চিহ্নিত হওয়া সম্পদ জব্দ ও তা আইনি পদ্ধতিতে ফেরত আনতে বিভিন্ন আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হবে। কমিশন ভিত্তিতে এই কাজ পাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এরপর অর্থ ফেরত আনতে কয়েক বছর সময় লাগবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে কাউকে সম্পদ কেনার জন্য বিদেশে অর্থ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে যাঁরা সম্পদ গড়েছেন, সবাই অপরাধ করেছেন। পাচার করা অর্থ চিহ্নিত ও ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়ায় নতুন করে পাচার কমে গেছে। এর ফলে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এটাই বর্তমান সরকারের বড় সফলতা।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, যারা অর্থ পাচার করেছে, তাদের জীবন কঠিন করে ফেলা হবে; যাতে ভবিষ্যতে কেউ অর্থ পাচার না করে।

যেসব তথ্য পেয়েছে

তদন্ত সংস্থাগুলোর কাছে এখন পর্যন্ত যত তথ্য এসেছে, তাতে এস আলম গ্রুপের সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও পাচারের তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে। গ্রুপটি ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, এসআইবিএল, গ্লোবাল, ইউনিয়ন, জনতা, এক্সিমসহ ১১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এসব অর্থের একটা অংশ দেশের বাইরে চলে গেছে। এখন পর্যন্ত ৬টি দেশে গ্রুপটির একাধিক তারকা হোটেল, জমি ও সম্পদ থাকার তথ্য মিলেছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবার এবং আরামিট গ্রুপের নামে থাকা দেশ-বিদেশের ৫৮০ বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, জমিসহ স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, ইউএইতে ২২৮টি ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি বাড়ি রয়েছে। বেসরকারি খাতের ইউসিবি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল সাইফুজ্জামান চৌধুরী পরিবারের কাছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোর মোট ঋণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থ পাচার করে লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে গ্রুপটির পরিবারের নামে সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংস্থাগুলো।

দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ থাকার তথ্য মিলেছে, এর মধ্যে কিছু ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ তাঁর পরিবারের আট সদস্যের বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্লোভাকিয়া, সাইপ্রাস, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে বসুন্ধরার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের খোঁজ মিলেছে, এ জন্য সম্পদ জব্দের আদেশের অনুলিপি এসব দেশে পাঠানো হয়েছে।

সিকদার গ্রুপ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। সিকদার পরিবারের সম্পদ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্ক, প্রমোদনগরী হিসেবে খ্যাত লাসভেগাস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডে রয়েছে সিকদার পরিবারের একাধিক কোম্পানি।

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও একটি ফ্ল্যাটসহ ৪৩ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের যুক্তরাজ্যে পাঁচটি বাড়ি, আইলে অফ ম্যানে একটি ও জার্সিতে একটি বাড়ির খোঁজ মিলেছে। এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। নাবিল গ্রুপ নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানসহ তাঁর পরিবারের ১১ জন সদস্যের ১৯১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বেআইনিভাবে নিজেদের নামে করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের ছয় সদস্য ও একাধিক রাজউক কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। যুক্তরাজ্যে টিউলিপের একাধিক ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। তবে জেমকন গ্রুপের বড় কোনো অনিয়মের খুঁজ পাননি তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, অর্থ পাচারের তদন্ত অনেক দিন ধরে চলছে। দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার জন্য হলেও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনাটা বেশ কঠিন ব্যাপার। তবে আর যেন কেউ পাচারের সুযোগ না পায়, এটা নিশ্চিত করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ব র র কর মকর ত প চ র কর অবর দ ধ এক ধ ক তদন ত সরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

পহেলা বৈশাখে আজ রাজধানীর কোথায় কী আয়োজন

আজ পহেলা বৈশাখ। শুরু বঙ্গাব্দ ১৪৩২। স্বাগত বাংলা নববর্ষ। বাঙালির উৎসবের দিন আজ। আনন্দ, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যের দিন। বাংলা সনকে বরণে রাজধানীজুড়ে নানা আয়োজন করা হয়েছে। ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের মাধ্যমে শুরু হয় বৈশাখবন্দনা, নতুন বছরকে বরণ করার আয়োজন।

বাঙালি সমাজকে নিয়ে আলোর পথে মুক্তির পথযাত্রী হওয়ার আহ্বান জানানো হয় এবার পহেলা বৈশাখে ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠানে। ছায়ানটের ৫৮তম এ আয়োজন ভোর সোয়া ৬টায় বৈশাখের ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে ভৈরবীর রাগালাপ দিয়ে শুরু হবে। এবারে অনুষ্ঠানের মূলভাব ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। 

ছায়ানটের এবার অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন আলো, প্রকৃতি ও মানুষকে ভালোবাসার গান ও আত্মবোধনের জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। এতে থাকবে ৯টি সম্মেলক গান, ১২টি একক কণ্ঠের গান ও তিনটি পাঠ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে (সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে) অনুষ্ঠান শুরু হয় ভৈরব রাগালাপ দিয়ে। অনুষ্ঠানটি এখনও চলছে। শেষে ছায়ানটের কথন পাঠ করবেন ডা. সারওয়ার আলী। প্রায় দুই ঘণ্টার এ আয়োজন ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজসহ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।

রবীন্দ্র সরোবর

পহেলা বৈশাখে সকাল ৬টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সুরের ধারার আয়োজনে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া মুক্তমঞ্চে হবে  বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আশপাশে পাবেন বাহারি বাঙালি খাবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’–এই প্রতিপাদ্যে চব্বিশের চেতনা ধারণ করে সমকাল, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধারণ করে এবারের নববর্ষের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এই আয়োজনে বাঙালিসহ পাহাড় ও সমতলের ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর ৪৯৪ জন শিল্পী বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করবে। অংশগ্রহণকারী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখোয়া, বম, ম্রো, রাখাইন, খিয়াং, বানাই, সাঁওতাল, ওঁরাও, তুরী, মাহালি, মালপাহাড়িয়া, কোল, মাহাতো, মুণ্ডা রাজোয়াড়, মনিপুরী, খাসিয়া, চা-জনগোষ্ঠী, গারো, হাজং, কোচ ও মালো। এছাড়াও শোভাযাত্রায় দুই শতাধিক ব্যান্ড মিউজিশিয়ানস অংশগ্রহণ করবে এবং পৃথিবীর শান্তি কামনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সম্মিলিতভাবে গান পরিবেশিত হবে।

এবারের শোভাযাত্রা ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে তরমুজের ফালি, শান্তির পায়রা, পালকি, মীর মুগ্ধের স্মৃতিবাহী পানির বোতল—শোভাযাত্রায় থাকবে এই সাতটি বড় মোটিফ বা শিল্প-অবকাঠামো। এর বাইরে থাকবে মাঝারি আকৃতির ১০টি সুলতানি আমলের মুখোশ, ২০টি রঙিন চরকি, আটটি তালপাতার সেপাই, পাঁচটি তুহিন পাখি, চারটি পাখা, ২০টি ঘোড়া ও ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস। ছোট মোটিফের মধ্যে থাকবে ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০০টি বাঘের মাথা, ১০টি পলো, ছয়টি মাছ ধরার চাঁই, ২০টি মাথাল, পাঁচটি লাঙল, পাঁচটি মাছের ডোলা। চারুকলা অনুষদের সম্মুখভাগের সীমানা প্রাচীর ইতোমধ্যে হলুদ রঙের ওপর রাজশাহী অঞ্চলের শখের হাঁড়ির মোটিফে আঁকা হয়েছে ফুল-পাখি, লতা-পাতার দৃশ্য।

জাতীয় সংসদ ভবন

নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় ‘ড্রোন-শো’ ও ‘ব্যান্ড-শো’ আয়োজিত হবে।  

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক

রাজধানীর গুলশান-২-এর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ১৩, ১৪ ও ১৫ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও নগর উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৭টায় শান্ত–মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব শুরু হবে। আজ সকাল ৯টায় বর্ষবরণ নগর উৎসবের ওয়েবসাইট উন্মোচন করা হবে। এরপর বারামখানা ও পল্লীবাংলার অংশগ্রহণে শুরু হবে বাউল গান। বিকেল ৪টায় ঘাসফড়িং কয়ার, শিরোনাম হীন এবং প্লাজমিক নকের অংশগ্রহণে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে।

শাহবাগ

‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে’ এই শিরোনামে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্ট। এই আয়োজনে চিরায়ত বাংলা গান, দেশাত্মবোধক গান, জারিসারি, পুঁথিপাঠ, গম্ভীরা ও নাটিকা পরিবেশিত হবে। অনুষ্ঠানে ১৪টি শিল্পীগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করবে। 

অন্যান্য আয়োজন

নববর্ষকে বরণ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সকাল থেকে নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সকালে নগর ভবন প্রাঙ্গণ থেকে বৈশাখী আনন্দ র‌্যালি বের হবে। এরপর নগর ভবনে থাকবে পান্তা ইলিশের আয়োজন। দুপুরে করপোরেশনের আয়োজনে থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ৮টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে ‘জনমানুষের বৈশাখ, শেকড়ের সংস্কৃতি’ শিরোনামে ১০টি সংগঠনের অংশগ্রহণে নববর্ষের আয়োজন করা হয়েছে।

বিকেল ৪টায় ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদ। জনপ্রিয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে। শেষে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে নাটক পরিবেশন করা হবে।

এর বাইরেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ি, সুত্রাপুরের ধূপখোলা মাঠ, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড এবং পূর্বাচলের তিনশ ফুট উল্লেখযোগ্য। এসব জায়গায় সারাবছরই কম-বেশি ভিড় থাকে। উৎসবের দিনে হয়তো ভিড়টা একটু বেশিই হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ