প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য: কতটা কাজে আসবে সংস্কার প্রস্তাব
Published: 13th, April 2025 GMT
নজিরবিহীন গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা এবং এর দানবীয় অপব্যবহারের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়ের একটি। সন্দেহ নেই, ২০১১ সাল থেকে গণতন্ত্র ও সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার দোহাই দিয়ে সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিলেন শেখ হাসিনা, যেখানে তাঁর কথাই ছিল সব। গণতন্ত্র রক্ষায় রাষ্ট্রীয় যেসব প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করার কথা, সেসব প্রতিষ্ঠান বলে কিছুই ছিল না তাঁর শাসনামলে। অনেকটা হীরক রাজার দেশ ছিল বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা ছিলেন ‘হীরকের রাজা ভগবান’।
শেখ হাসিনার দুঃশাসনের জন্য অনেকেই বর্তমান সংবিধানকে দায়ী করেছেন। আবার কেউ ঢালাওভাবে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানকে দায়ী করে চলেছেন। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি, সংবিধান তো একা একা কার্যকর হয় না—রাজনীতিবিদ এবং অন্য অংশীজনেরাই প্রয়োগ করেন; কখনো সঠিকভাবে, কখনো ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং দলীয় সুবিধার জন্য।
পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় এসে দুটি বিষয়ে ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করে চলেছে। একটি হলো সংবিধান এবং অপরটি নির্বাচন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং সমস্যা দুটি ক্রমশ প্রকট হয়ে চলেছে। শেখ হাসিনার পতনের পরবর্তী সময়েও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে প্রথম যে কয়টি কাজ করেছে, তার মধ্যে একটি হলো বিদ্যমান সংবিধান সংস্কারে একটি কমিশন গঠন। বলা হয়েছে, দেশে ‘ভবিষ্যৎ ফ্যাসিবাদ’ বন্ধ করতে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও মার্কিন নাগরিক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে গঠিত ৯ সদস্যের এই কমিশন ডিসেম্বরের শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়।
অন্তর্বর্তী সরকার এই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চায় বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে অধ্যাপক ইউনূসের প্রধান সমর্থক ছাত্রদের গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অন্যদিকে বিরোধিতা করছে বিএনপি। তাদের মতে, সংবিধান সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। এটি নির্বাচিত সরকার করবে। প্রশ্ন রয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির সম্মতি ছাড়া এবং একটি নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কীভাবে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে?
আরও পড়ুনপ্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা না কমালে কিসের সংস্কার ০৩ এপ্রিল ২০২৫সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, তাদের সুপারিশের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবাধিকার সুনিশ্চিতকরণ এবং জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। কমিশনের অন্যতম সুপারিশ হলো জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রধান প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া আছে, যা থেকে স্বৈরাচারের জন্ম হয়।
সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা কমাতে এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে দেশে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হয়। তবে সংবিধান সংস্কার কমিশন যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে, তাতে একজন অকার্যকর প্রধানমন্ত্রী ও নাজুক নির্বাহী বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সব শঙ্কা রয়েছে। পুরো রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা অকার্যকর হতে পারে। এমন অবস্থা হলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়া অথবা সুশাসন আসার সুযোগ খুবই কম।
প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা যেমন সমস্যা, তেমনি অকার্যকর, দুর্বল প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাহী বিভাগও দেশের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। জবাবদিহির ব্যবস্থা না করে রাষ্ট্রপতিকে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হলে মাত্র কয়েক শ ভোটারের ভোটে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হওয়া রাষ্ট্রপতি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারেন, সেটি অস্বাভাবিক নয়। কীভাবে? এর উত্তর জানার আগে বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা দরকার।
বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ভূমিকাবর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশ একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশ। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক সংসদ সদস্যদের আস্থা অর্জনকারী নেতা বা নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং তিনি রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রধান।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা থাকবে, যাঁরা নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের নেতৃত্ব দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা একক এবং যৌথভাবে সংসদ এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে দায়বদ্ধ।
সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। তিনি কেবল ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের ভোটের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। সে কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল অথবা জোটের মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তিই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি দুটি বিষয়ে স্বাধীন—প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সব নিয়োগ ও সিদ্ধান্ত নিতে হয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই তাঁকে বাকি নির্বাহী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কোনো প্রকার নির্বাহী ক্ষমতা না থাকায় রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহি করেন না রাষ্ট্রপতি। ভারতসহ প্রায় সব ব্রিটেনের আদলে সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রপতি অথবা রাজা/রানিদের কোনো নির্বাহী ক্ষমতা থাকে না।
তবে রাষ্ট্রপতি কেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তার একটি তাত্ত্বিক দিক আছে। একজন প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চসংখ্যক ভোটারের আস্থা অর্জনকারী নেতা। তিনি নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে তাঁর দলের ইশতেহার প্রচার করে ভোটে অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় গিয়ে সেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে তিনি যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তাঁকেই নিয়োগ দেবেন, তবে কোনোভাবেই আইন ভঙ্গ করতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রী সংবিধান, আইন, নিয়ম ভঙ্গ, দুর্নীতি করলে বিরোধী দলগুলো সংসদে, সংসদের বাইরে এবং সংবাদমাধ্যম তাঁকে সমালোচনা করবে, জবাবদিহি করবে। ফলে জনগণ জানতে পারবে এবং জনমতের ভয়ে তাঁরা নিজেদের সংশোধন করে নেবেন। যদি সমালোচনায় তোয়াক্কা না করেন, তবে সেই দল পরবর্তী নির্বাচনে হেরে যাবে।
আবার সরকার যদি সংবিধান লঙ্ঘন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, সে ক্ষেত্রে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ব্যবস্থা সংবিধানে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাহী পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষমতা না দেওয়া হলে তিনি একটি অজুহাত পেয়ে যাবেন এবং তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার সব দায় রাষ্ট্রপতি ও অন্যদের ঘাড়ে দিয়ে নিজে বেঁচে যাবেন। বলবেন, ‘আমি ইশতেহারে যা করতে চেয়েছিলাম, আমার সেই পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে দেওয়া হয়নি, হস্তক্ষেপ এসেছে।’
তবে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরা যে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কাজ করেছেন, সেটি নয়। করেননি বিধায় তাঁদের আমরা অভিযুক্ত করতে পারছি। বলতে পারছি, প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে; কেউ তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করেননি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে কী সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশনরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সংসদ নির্বাচনে যোগ্য অর্থাৎ সর্বনিম্ন ২১ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিক (যিনি সংবিধানের অধীন কখনো অভিশংসিত হননি) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন (পৃ.
১৯৬০–এর দশকে পাকিস্তানে মার্কিন ব্যবস্থার আদলে ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতির প্রবর্তন করেন পাকিস্তানে বিরাজনীতিকরণের মূল হোতা, সামরিক স্বৈরশাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান। বেসিক ডেমোক্রেসি (মৌলিক গণতন্ত্র) নামের ওই পদ্ধতি জালিয়াতিসহ নানা প্রকার সমস্যার কারণে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান আমলেই।
আরও পড়ুনসংস্কার কিংবা স্রেফ ‘ব্যালট পেপার হওয়ার’ স্বপ্ন০৪ এপ্রিল ২০২৫কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, দেশের ৬৪ জেলায় স্থানীয় সরকার–সম্পর্কিত ‘জেলা সমন্বয় কাউন্সিল’ নামের একটি নতুন সংস্থা গঠিত হবে, যা হবে ইলেকটোরাল কলেজ। এই কাউন্সিলের সদস্য হবেন জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, জেলার প্রতিটি পৌরসভার একজন নির্বাচিত মেয়র এবং দুজন ডেপুটি মেয়র এবং প্রতিটি উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও দুজন ভাইস চেয়ারম্যান। তবে সদস্যসংখ্যা যা–ই হোক না কেন, প্রতিটি জেলার সমন্বয় কাউন্সিলের একটি ভোট থাকবে। সব মিলিয়ে ৬৪ জেলায় ৬৪টি ভোট থাকবে।
একটি জেলার জেলা সমন্বয় কাউন্সিলের সদস্যরা রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিতে পারবেন। যেই প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, তিনিই ওই জেলার জন্য নির্ধারিত একটি ভোট পাবেন। তবে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের আলাদা সমন্বয় কাউন্সিল থাকবে এবং সেখানেও প্রতিটি সিটি করপোরেশনের বিপরীতে একটি ভোট থাকবে। অর্থাৎ ১২টি ভোট। কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে নিম্নকক্ষের সদস্যসংখ্যা হবে ৪০০ জন, যাঁদের মধ্যে ১০০ হবেন নারী। তাঁরা সবাই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন।
উচ্চকক্ষের সদস্য হবেন ১০৫ জন, যাঁদের মধ্যে ১০০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে যেসব দল সারা দেশের মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১ ভাগ ভোট পাবে, তারা তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুসারে উচ্চকক্ষে আসন পাবে। অর্থাৎ একটি দল ১০ ভাগ ভোট পেলে সেই দল উচ্চকক্ষে ১০টি আসন পাবে। আর উচ্চকক্ষের পাঁচজন হবেন নাগরিক সমাজের সদস্য। তাঁরা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হবেন; ভোট করবেন না। অর্থাৎ সুশীল সমাজের সদস্যরা রাষ্ট্রপতির কোটায় উচ্চকক্ষের সদস্য হবেন এবং অন্য সংসদ সদস্যদের মতো রাষ্ট্রীয় সুবিধা এবং মর্যাদা পাবেন। যদিও শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মূল বিষয় ছিল ‘কোনো কোটা নয়’।
আইনসভার নিম্নকক্ষের সংসদ সদস্যরা অর্থবিল ছাড়া সব বিষয়ে নিজস্ব বিবেচনায় স্বাধীনভাবে সংসদে ভোট দিতে পারবেন। অর্থাৎ দলীয় সিদ্ধান্তে ভোট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। আইনসভা, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল নামের এবং সিটি করপোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ৫০৫+৬৪+১২ অর্থাৎ ৫৮১ ভোট থাকবে। এর মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, তিনিই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন।
রাষ্ট্রপতির কাজ সম্পর্কে কমিশন কি সুপারিশ করেছে? সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্য যেকোনো পদের নিয়োগ দেবেন। এ ছাড়া ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন কাউন্সিল (এনসিসি) নামের নতুন একটি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এনসিসির সভা আহ্বান করবেন রাষ্ট্রপতি। এই এনসিসির মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে কমিয়ে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায়িত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। কীভাবে?
প্রস্তাবিত এনসিসির সদস্য হবে নয়জন—রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, নিম্নকক্ষের স্পিকার, উচ্চকক্ষের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধী দল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার এবং ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী দল ব্যতীত উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষের সদস্যদের দ্বারা তাঁদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত একজন সদস্য। এখানে প্রধানমন্ত্রী অন্যদের মতো একজন সদস্যমাত্র, যদিও তিনি সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
এনসিসি নামের সংস্থাটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল, সরকারি কর্ম কমিশনের প্রধান এবং অন্যান্য কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য কমিশনার, প্রস্তাবিত প্রধান স্থানীয় সরকার কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধান এবং অন্যান্য আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো পদে নিয়োগের জন্য নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করবেন এবং সে অনুসারে রাষ্ট্রপতি তাঁদের নিয়োগ করবেন।
রাষ্ট্রপতি কি এনসিসির মাধ্যমে নির্বাহী ক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারবেন? এনসিসির গঠন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী কোনো সিদ্ধান্তকেই প্রভাবিত করতে পারবেন না। তবে বিরোধী দলের সমর্থনে সব সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি প্রভাবিত করতে পারবেন। কারণ, রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন দল থেকে নির্বাচিত হবেন এমন নিশ্চয়তা নেই।
এনসিসির সভায় ওই সব নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, বিরোধীদলীয় নেতা, উচ্চকক্ষের বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, নিম্নকক্ষের বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার এবং অপর বিরোধীদলীয় সদস্যরা এক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব স্বাভাবিক। অর্থাৎ ৯ সদস্যের মধ্যে ৬ জন এক পক্ষ হয়ে যাবেন। অপর দিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যাবেন সর্বোচ্চ আরও দুজন—উচ্চকক্ষের স্পিকার এবং নিম্নকক্ষের স্পিকার। যেহেতু সদস্যরা ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাধীন, তখন দেখা যাবে নিজের দলের দুই স্পিকারও ব্যক্তিগত স্বার্থে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মিলে প্রধানমন্ত্রীকে একা করে দেবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এনসিসির সব সিদ্ধান্ত অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেমন সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এনসিসির সদস্য হবেন পাঁচজন—রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক মনোনীত তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের দুজন সদস্য। (পৃ. ৫৫, সুপারিশ-২.২)
এই সময়ের মধ্যে কোনো নিয়োগের প্রশ্ন এলে এনসিসি নিয়োগ দিলে সেখানে জনগণের ভোটে নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধির অংশগ্রহণ থাকবে না। অর্থাৎ অনির্বাচিত ব্যক্তিরাই ক্ষমতায়িত হবেন এই বিধানের মাধ্যমে।
এনসিসির মাধ্যমে নিয়োগের ফলাফল কী হতে পারে? এনসিসির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনার, সরকারি কর্ম কমিশনের প্রধান এবং অন্যান্য কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য কমিশনার, প্রস্তাবিত প্রধান স্থানীয় সরকার কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ গ্রহণযোগ্য হলেও নির্বাহী বিভাগের প্রতিষ্ঠান, যেমন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অন্যান্য আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো পদে নিয়োগ হওয়া কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। কারণ, এসব পদ সরাসরি নির্বাহী বিভাগের অধীন। কিন্তু তাঁদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর না থাকলে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী কথা শুনবেন না। সেনা, বিমান, নৌবাহিনীর প্রধানেরা যদি প্রধানমন্ত্রীর কথা না শোনেন, তাহলে কী হবে অবস্থা, একটু চিন্তা করে দেখুন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষমতা পেলে স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় আরেক দফা দুর্বৃত্তায়ন শুরু হবে। স্থানীয় নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে। স্থানীয় সরকারব্যবস্থা জনগণকে কোনো সেবা প্রদানে আগ্রহী হবে না। বাড়বে করের বোঝা। আমাদের উত্তরাঞ্চলে একটি শ্লোক রয়েছে, চিলের ভয়ে বিলে গিয়ে বাজপাখির খপ্পরে পড়লাম। প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরতান্ত্রিকতা থেকে বাঁচতে আমরা যেন রাষ্ট্রপতির স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে না পড়ি। সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।একইভাবে অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা। তিনি আদালতে বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ায় নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে যদি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে না পারেন, তাহলে তিনি কি প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনবেন? তিনি নির্বাহী বিভাগকে আদালতে ডিফেন্ড না করেন, তাহলে সরকার থাকবে? অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাহী বিভাগসহ পুরো সরকারব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, এনসিসির মাধ্যমে যেসব পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে, সেসব পদে নিয়োগের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
রাষ্ট্রপতিসহ কমিটির সদস্যরা যে দুর্নীতির আশ্রয় নেবেন না, সেই গ্যারান্টি কোথায়? তাহলে প্রশ্ন আসে, রাষ্ট্রপতি কি দুর্নীতিতে জড়াতে পারেন? অবশ্যই পারেন। প্রথম কথা হলো অনিয়ন্ত্রিত ও জবাবদিহিবিহীন যেকোনো ব্যক্তি দুর্নীতিগ্রস্ত হবেন এটিই স্বাভাবিক। কারণ, রাষ্ট্রপতিও মানুষ। তিনি কোনো অতিমানব নন।
আবার নির্বাচনের যে ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে, তাতে দুর্নীতিবাজ, অর্থবানেরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারবেন সহজেই। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট দেওয়ার বিধান থাকবে সংসদ সদস্যদের। সে ক্ষেত্রে তাঁরা নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচিত হলেও দলের প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি পদে ভোট দেবেন, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং বাংলাদেশের রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে যেভাবে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দেখা যাবে, কোনো গ্রুপের চেয়ারম্যান অথবা তাঁর কোনো লম্পট সন্তান সব ভোটারকে কিনে নেবেন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে যাবেন। আবার ভোটাররাও একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ নেবেন। যিনি বেশি ঘুষ দেবেন, সুবিধা দেবেন, তাঁকেই ভোট দেবেন।
ফলে যিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন, তাঁকে তো প্রচারের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করতে হবে। সেই টাকা তিনি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দুর্নীতির মাধ্যমে তুলে নেবেন। তাঁকে ঠেকাবেন কীভাবে? রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা রাখলে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাষ্ট্রপতিকে জবাবদিহি করবেন কীভাবে? সেই ব্যবস্থা কোথায়?
এ ছাড়া আইয়ুব খানের আমলে যেমনটি দেখা গেছে, এবারও তাই হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি যাঁরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন, তাঁরা প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ভোট দেবেন। কোটি কোটি টাকা একজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থীকে খরচ করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের ভোটব্যবস্থায় আরেকটি দুর্নীতির রাস্তা খুলবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী—কাউকে তোয়াক্কা করবেন না এসব এলিট ভোটাররা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষমতা পেলে স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় আরেক দফা দুর্বৃত্তায়ন শুরু হবে। স্থানীয় নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে। স্থানীয় সরকারব্যবস্থা জনগণকে কোনো সেবা প্রদানে আগ্রহী হবে না। বাড়বে করের বোঝা। আমাদের উত্তরাঞ্চলে একটি শ্লোক রয়েছে, চিলের ভয়ে বিলে গিয়ে বাজপাখির খপ্পরে পড়লাম। প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরতান্ত্রিকতা থেকে বাঁচতে আমরা যেন রাষ্ট্রপতির স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে না পড়ি। সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
আরেকটি বিষয়, সংস্কার কমিশন সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর করার সুপারিশ করেছে। চার বছর মেয়াদ হলে সরকার কোনো উন্নয়ন প্রকল্পই বাস্তবায়ন করতে পারবে না। আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো একটি প্রকল্পের ডিপিপি লেখা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত অনুমোদন করতে গড়ে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই বছর। অদক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা, জটিল আমলাতন্ত্র ও জটিল আইন, দুর্নীতি ইত্যাদি কারণে এই অবস্থা।
চার বছর মেয়াদের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে একটি নির্বাচিত সরকারের কার্যকর মেয়াদ হবে সাড়ে তিন বছর। যেহেতু সংবিধানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হচ্ছে, সেহেতু সাড়ে তিন বছর পর আমলাতন্ত্র প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের কথা শুনবে না। তারা পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং এমনকি পরবর্তী নির্বাচনে যেই দল অথবা জোট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে গড়িমসি করে কালক্ষেপণ করবে। ফলে দেখা যাবে আগের সরকারের অনুমোদন করা একটি প্রকল্প পাস হওয়ার পর বাস্তবায়িত হচ্ছে না এবং পরের সরকার এসে সেটি হয়তো বাতিল করে দেবে অথবা দুর্নীতির অভিযোগে আটকে দেবে। এভাবেই চলতে থাকবে।
একটি আদর্শ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ—আইনসভা, নির্বাহী এবং বিচার বিভাগ একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করবে। কেউ কারও কাজে বাধা দেবে না। অন্যের কাজে নাক গলাবে না। সে কারণে প্রত্যেক বিভাগকে তার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা এবং স্বাধীনতা দিতে হবে। সেই ক্ষমতা, স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষা না দিলে সেই বিভাগ কাজ করতে পারবে না। আমাদের যে মূল লক্ষ্য, সুশাসন, আইনের শাসন, উন্নয়ন, তা আসবে না এবং যে মহান উদ্দেশ্যে দেশের লাখ লাখ মানুষ প্রতিবাদ করে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, সেই বৈষম্য সমাজ থেকে যাবে না।
সুতরাং, নির্বাহী প্রধানের নির্বাহী ক্ষমতা থেকে কিছুটা রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার যে প্রস্তাব করা হচ্ছে, সেটি আমাদের পিছিয়ে দেবে; দেশে কোনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে না। সরকার টিকবে না। কিছুদিন পর পর সরকার পতন হবে। মনে রাখতে হবে, উন্নয়নের (শেখ হাসিনা উন্নয়ন নয়) জন্য সরকারের স্থিতিশীলতা অন্যতম প্রধান শর্ত। সরকারের স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে না। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না। কর্মসংস্থান না হলে বেকারত্ব বাড়বে। বেকারত্ব বাড়লে সমাজ ও রাষ্ট্রে হানাহানি, সহিংসতা, দুর্নীতি বাড়বে। রাষ্ট্র অকার্যকর হবে। আর সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যবস্থা যাঁরা প্রবর্তন করবেন, তাঁদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে। এই দায়িত্ব কে নেবেন?
বাংলাদেশে দীর্ঘ দুঃশাসনের বিষয়টি যতটুকু না সাংবিধানিক, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক এবং রাজনীতিবিদদের মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সে অনুসারে কর্মকাণ্ড–সংশ্লিষ্ট। এর প্রভাব পড়ে সংবিধানের প্রয়োগে। বাংলাদেশে দুঃশাসনের ব্যবচ্ছেদ করে সেটি সমাধান করতে উপর্যুক্ত বিষয়গুলো আলোচনার মূল বিষয় হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটি বাদ দিয়ে সব সময় দেশের সংবিধানকে দোষারোপ করা হয়। সংবিধানকে দোষারোপ না করে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী একসঙ্গে কাজ করলে বর্তমান সংবিধানের মধ্যে থেকেই জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক চর্চা সম্ভব। রাজনৈতিক সমঝোতা না থাকলে যত ভালো সংস্কার করুন না কেন, কাজে আসবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের ইচ্ছা হয়তো ভালো। কিন্তু যেভাবে সংবিধান সংস্কারপ্রক্রিয়া চলছে, তাতে সেটি চূড়ান্তভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সাংবিধানিক সংস্কার একটি চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক শক্তির স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দরকার। চাপ দিয়ে, প্যাঁচে ফেলে রাজনৈতিক সমর্থন আদায় করে সাংবিধানিক সংস্কার করা গেলেও সেটি দিন শেষে টিকবে না।
কামরান রেজা চৌধুরী সাংবাদিক ও বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্টস’ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ব চ ত হব ন র স প র শ কর ছ র ষ ট রপত র ক ন র ষ ট রপত র স থ ন য় সরক র ন ম নকক ষ র স স ব রতন ত র র ষ ট রপত ক গণত ন ত র ক স ব ধ ন অন ব র ধ দল য় র জন ত ক স ষ র সদস য ব যবস থ য় ত র ক ষমত গণতন ত র জন সদস য প রস ত ব চ র বছর সরক র র হওয় র স সরক র প র সরক র ক র যকর সরক র ক ক ষমত য় পরবর ত জনগণ র র জন য অন স র অন য য় দল য় স ন র জন প রব ন আম দ র রব ন ন ক জ কর র শ অন ক র কর মন ন ত ত করত ত হওয় গ রহণ সমস য র একট ন করত সবচ য় করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
পিএসএল অভিষেকে রিশাদের ৩ উইকেট, জিতেছে তাঁর দলও
৩ উইকেট নিয়ে পিএসএল অভিষেক রাঙালেন রিশাদ হোসেন। বাংলাদেশের লেগ স্পিনারের দল লাহোর কালান্দার্সও জিতেছে। রাওয়ালপিন্ডিতে কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্সকে ৭৯ রানে হারিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম জয় পেল লাহোরের দলটি।
রিশাদের লাহোর ফখর জামান ও স্যাম বিলিংসের ফিফটিতে করেছিল ৬ উইকেটে ২১৯ রান। ৩৯ বলে ৬৭ রান করেন পাকিস্তান ওপেনার ফখর। ইংলিশ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বিলিংস ১৯ বলে ৫০ রান করে অপরাজিত থাকেন। ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন রিশাদও। শেষ ওভারে চতুর্থ বলে উইকেটে গিয়ে ১ বলে ১ রান করেন রিশাদ।
রাইলি রুশোকে বোল্ড করেছেন রিশাদ