১২ এপ্রিল পথনবজাতক দিবস ঘোষণার দাবি
Published: 13th, April 2025 GMT
সরকারি উদ্যোগে নিউবর্ন হাব ও শরিয়াহভিত্তিক হিউম্যান মিল্ক স্টোরেজ সেন্টার গড়ে তোলাসহ ১২ এপ্রিলকে জাতীয় পথনবজাতক দিবস ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে ‘ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন’। বিশ্ব পথশিশু দিবস উপলক্ষে শনিবার র্যালি শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সংগঠনের চেয়ারম্যান ডা. মজিবুর রহমান মুজিব এ দাবি জানান।
চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন পায়রা উড়িয়ে র্যালির উদ্বোধন করেন। র্যালিতে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হুমায়ুন কবির মঞ্জু, বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাহমুদা সুলতানা আসমা, আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের একাডেমিক পরিচালক প্রফেসর ডা.
লিডো’র সভা, মোবাইল ক্লিনিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিক পথশিশু দিবস উপলক্ষে বেসরকারি সংস্থা লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন লিডো আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, পথশিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
শনিবার লিডো পিচ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হোসেন। বক্তব্য রাখেন লায়ন্স ক্লাবের চেয়ারম্যান এ.কে.এম. রেজাউল হক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. এমরান খান, একমাত্রা সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সুভাশিষ রায় ও কো-ফাউন্ডার হিরোকি ওয়াতানাবে, লিড'ন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হেলাল উদ্দিন লিটন প্রমুখ।
দিবসটি উপলক্ষে খাবার বিতরণের পাশাপাশি লিডো এর কর্ম এলাকা কমলাপুর এবং পিচ হোম-এ মোবাইল ক্লিনিক ও হেলথ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়, যেখানে শতাধিক শিশুকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, ওষুধ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। পরে পিস হোমের শিশুদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। শিশু ও অতিথিদের অংশগ্রহণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আর্থ-সামাজিক আবেদন ছিল চৈত্র সংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখে
বাংলা নববর্ষ বরণের আর নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালিত হতো গ্রাম-বাংলায়। আর্থ-সামাজিক আবেদন আর প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা ছিল সেই সব দিন। চৈত্র সংক্রান্তির সেসব অনুষ্ঠান এখন অনেকটাই ম্লাণ। প্রাধান্য পেয়েছে পহেলা বৈশাখ। আমরা দেখেছি চৈত্র সংক্রান্তি সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত ছিল আর অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবার কাছে প্রাধান্য পেত পহেলা বৈশাখ।
বাংলা বর্ষকে বিদায় জানানোর জন্য গ্রাম বাংলায় নানা আয়োজন হতো। গ্রামে মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণ চড়ক ঘোরানো। জীবন্ত মানুষকে বর্ষিতে গাঁথা হতো। তারপর বাঁশের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঘোরানো হতো। তাকে আবার আগের দিন না খাইয়ে রাখা হতো। সে আবার ওই ঘূর্ণায়মান অবস্থায় একটি কবুতর দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে, সেটাকে নিচে ফেলে দিত। তারপরে পাঠা বলি হতো, কোনো কোনো জায়গায় মহিষ বলি হতো। বিভিন্ন গ্রামীণ মেলা হতো। বিশেষ করে চড়ক উৎসব যেখানে হতো, সেখানে। চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ বিশেষ জায়গা পূজাও হতো আবার মেলাও হতো। ওইসব মেলায় গৃহস্থলির জিনিসপত্র পাওয়া যেত। এই চড়ক উৎসবের আয়োজন করতো হিন্দুরা কিন্তু দৃশ্য উপভোগ করতে সবাই। আবার মেলার আয়োজন করতো হিন্দুরা কিন্তু গৃহস্থলির জিনিসপত্র—হাঁড়ি, পাতিল, কুলা, ডালা, সের এসব কেনার জন্য মুসলিমদেরও সরব উপস্থিতি থাকতো মেলায়। এখন যেমন পহেলা বৈশাখে পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ খাওয়া; এই রীতি তখন ছিল না। তখন চৈত্র সংক্রান্তিকেই মূলত একটা পার্বণ হিসেবে সমাদৃত হতো। মেলাকেন্দ্রিক লাঠিখেলা ঘিরে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হতো।
বিশেষ আকর্ষণ ছিল শিব-পার্বতী। একজন শিব সাজতো আরেকজন পার্বতী সাজতো। মেলাটার নাম ছিল শিব-গাজনের মেলা। শিব আর গাজনের ভক্ত নন্দি, ভৃঙ্গী, ভূত-প্রেত, দৈত্যদানব; এদেরও আবার প্রতিমূর্তি সাজতো অনেকে। তারপর শিব-পার্বতীর সঙ্গে নেচে চলতো। এরা নেচে নেচে বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি যেত। এছাড়াও হতো নীল পূজা, গম্ভীরা পূজা, শিবের গাজন, শাকান্ন।
চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ বিশেষ স্থানে শিরনীর আয়োজন হতো। ল্যাটকা খিচুড়ি, আখের গুঁড়ের ক্ষীর রান্না হতো। কলাপাতায় পরিবেশন করা হতো। মাঠে, স্কুলে কিংবা ক্লাবে এই সব আয়োজন হতো। সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া হতো। চৈত্র সংক্রান্তিতে বৈশাখ বরণের একটা প্রস্তুতিও লক্ষ্য করা যেত। ঘর বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হতো। বাড়ির বউ-ঝিরা কাঁচা ঘর লেপে চকচকে করতো। আবার গ্রাম বা মফস্বলের ছোট বড় দোকানগুলো সাজানো হতো। কারণ পরের দিন হালখাতা। হালখাতা উপলক্ষ্যে বাড়ির পুরুষেরা পণ্য বেচা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করতো। কারণ প্রত্যেকেরই একটা চেষ্টা থাকতো দোকানের বাকি শোধ করার। পুরো টাকা শোধ করতে না পারলেও যতোটা সম্ভব শোধ করতো তারা। হালখাতা উপলক্ষ্যে দোকানগুলোতে নতুন লাল টালিখাতায় দেনা-পাওনার হিসাব লেখা শুরু হতো। পহেলা বৈশাখে দোকানদাররা সাধারণত বাকি বিক্রি করতো না। তারা বলতো, বছরের প্রথম দিনে বাকি দেবেন না। হালখাতা উপলক্ষ্যে বাড়ির ছোট সদস্যরাও আনন্দিত হতো। তারা বড়দের হাত ধরে হালখাতা খেতে যেত। রসগোল্লা, পুরি, জিলাপি পেয়ে খুব খুশি হয়ে বাড়ি ফিরতো। বৈশাখে গ্রাম বাংলার অর্থনীতিতে যোগ হতো নতুন গতি। তবে সবশেষে হালখাতা একটি সামাজিক অনুষ্ঠানও। এই অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে মানুষে মানুষে সম্পর্ক আর দৃঢ় হতো। সত্যিকার অর্থেই প্রাণ-প্রাচুর্য ছিল সেই সামাজিক সৌহার্দে।
ঢাকা/লিপি