মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমের পূর্বপরিচিত ব্যবসায়ী মো. দেওয়ান সমিরকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন। সমির সানজানা ম্যানপাওয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তারা মেঘনার মুক্তি এবং বিতর্কিত আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
এদিকে মেঘনা আলম সদ্য বিদায়ী সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের প্রতারণার শিকার বলে অভিযোগ করছেন তাঁর বাবা বদরুল আলম। শনিবার রাতে তিনি সমকালকে বলেন, ছয় মাস ধরে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর মেয়ের ঘনিষ্ঠতা। এর দুই-তিন মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে পরিচয়। ‘মিস বাংলাদেশ’ নামে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন মেঘনা। এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। এসব আয়োজনে বিশিষ্টজন, গুণী ব্যক্তিরা আসতেন। ঢাকায় সেই ধরনের একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনার প্রথম দেখা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সব জানেন। তিনি দু’জনকে সহযোগিতা করেন। এরপর মেঘনার সঙ্গে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা হয়। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কের প্রস্তাব দেন তিনি। এরপর বিয়ে করতে চান। গত ৪ ডিসেম্বর মেঘনা ও দুহাইলানের আংটি বদল হয়েছিল বলে দাবি করেন বদরুল। তবে এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তিনি।
বদরুল বলেন, ‘মেঘনার বসুন্ধরার বাসায় আসা-যাওয়া ছিল রাষ্ট্রদূতের। সম্পর্কের এক পর্যায়ে মেঘনা জানতে পারে রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে রয়েছে। এরপর তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে। সে আংটি ফেরত দেয়। মেঘনা রাষ্ট্রদূতের দ্বিতীয় স্ত্রী হতে চায়নি। এক পর্যায়ে সৌদিদূতের স্ত্রীকে ঘটনাটি জানায় মেঘনা। এরপরই বিষয়টি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। রাষ্ট্রদূত ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। এক পর্যায়ে মেঘনা ফেসবুকে এ সম্পর্কে কিছু লেখা পোস্ট করে। তখন মেঘনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন দুহাইলান।’
মেঘনার বাবা আরও বলেন, প্রতারণার শিকার হয়েছে এটা জেনেও মেঘনা চেয়েছিল বিদায়ী রাষ্ট্রদূত তার কাছে এসে দুঃখ প্রকাশ করুক। কিন্তু সেটা করেননি তিনি। উল্টো বিনা অপরাধে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে বদরুল বলেন, ‘কেন আমার মেয়ে তাঁকে ফাঁসাবে। তাঁর কাছে টাকা চেয়েছে– এমন কোনো প্রমাণ আছে? যদি মেঘনা অন্যায় করত, তাহলে তার বিরুদ্ধে তো সুনির্দিষ্ট মামলা হতো। আইন সবার জন্য সমান। ন্যায়বিচার চাই। সরকার আমার মেয়ের নিরাপত্তা দেবে, এটা আমার দাবি।’ তিনি জানান, নর্থ সাউথে পড়াশোনার সময় বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে মেঘনা থাকতেন। সেখানে মাঝে মাঝে তিনি যেতেন। পরিবারের অন্যরা বেইলি রোডে থাকেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিতর্কিত ধারায় প্রতিরোধ আটকাদেশে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি কাশিমপুর-২ নম্বর কারাগারে আছেন। বুধবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছেড়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত দুহাইলান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদ্য বিদায়ী সৌদি রাষ্ট্রদূতের অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে মেঘনাকে আটক করেছে পুলিশ। একজন নারী তাঁর কাছ থেকে ‘আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য’ সম্পর্ককে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ ছিল তাঁর। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়। এটি তদারকির দায়িত্ব পালন করেন একজন বিশেষ সহকারী। তিনিই ডিবিকে ঘটনাটি জানান। এরপর রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনার যোগাযোগ থাকার বিষয়টি জানতে পারেন গোয়েন্দারা। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে মেঘনার পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেটি ব্যর্থ হলে তাঁকে আটক করা হয়।
এদিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, নারীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে আসছেন আসামি দেওয়ান সমির। তাঁর বিরুদ্ধে সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেওয়ান সমিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত দেওয়ান সমিরকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়, আসামি গত জানুয়ারি থেকে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের কাছ থেকে টাকা আদায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হুমকির সম্মুখীন হয়।
কাশিমপুর-২ কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো.
নিন্দা-প্রতিবাদ
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক মেঘনা আলমের মুক্তিসহ এই আইন বিলোপের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। শনিবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। কমিটির পক্ষে এই বিবৃতি পাঠান সংগঠনের সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বিবৃতিতে মেঘনা আলমের আটকের ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের স্বৈরাচারী আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আগে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছেন। অথচ এই আইন ব্যবহার করেই সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের অন্যায় আচরণ ও প্রতারণা ঢাকতে একজন নারীকে বাড়িতে হামলা করে তুলে নিয়ে একে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে বহু গুম ও স্বেচ্ছাচারী আটকের ভিত্তি তৈরি করে নাগরিকের মানবাধিকারকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিল। জুলাইয়ে শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার পুনরায় ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের আনা ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার’ অভিযোগকে বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্র যদি একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে নাগরিকের অধিকার হরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অবিলম্বে মেঘনা আলমের মুক্তি এবং এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারী পক্ষ। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো নারীপক্ষের আন্দোলন সম্পাদক সাফিয়া আজীম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দ্রুত এই কালো আইন বাতিল, মেঘনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। যে বা যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মেঘনা আলমের ব্যক্তিগত বিষয়কে রাষ্ট্রীয় ইস্যু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও ব্যক্তিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত বাহিনী কখনোই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা কূটনৈতিক তোষণের যন্ত্র হতে পারে না। বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ ষ ক ষমত ব যবহ র পর য য় ম ঘন ক ম ঘন র বদর ল আলম র আইন র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্কের জেরে তালাক, দুধ দিয়ে গোসল করলেন প্রবাসী স্বামী
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সাইপ্রাস প্রবাসীর স্ত্রী অন্যত্র প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এরপর গ্রামের লোকজনের সামনে দুধ দিয়ে গোসল করেন ওই নারীর স্বামী বদু শিকদার নামের এক সাইপ্রাস প্রবাসী। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার চুমুরদী ইউনিয়নের পূর্ব শদরদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এসময় স্থানীয়রা প্রবাসীর দুধ দিয়ে গোসলের ভিডিও ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। এতে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ঘারুয়া ইউনিয়নের ঘারুয়া গ্রামের প্রয়াত ফকির সুলতান আহমেদের মেয়ে সুমা আক্তারের সঙ্গে চুমুরদী ইউনিয়নের পূর্বশদরদী গ্রামের বাসিন্দা ও সাইপ্রাস প্রবাসী বদু শিকদারের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুই সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু প্রবাসী বদু শিকদার দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায়, তার স্ত্রী সোমা বেগম অন্য এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে সম্পর্ক চলার পর বিষয়টি পারিবারিকভাবে জানাজানি হয়। এই নিয়ে একাধিকবার পারিবারিক ও গ্রাম্য সালিশ হয়। এ নিয়ে সম্প্রতি বদু বিদেশ থেকে দেশে ফিরেই তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়। এরপর শুক্রবার সবার সামনে দুধ দিয়ে গোসল করেন।
বদু শিকদার বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে অনেক কষ্টে টাকা ইনকাম করি শুধুমাত্র পরিবার ও স্বজনরা ভালো থাকবে বলে। কিন্তু আমার সেই উপার্জিত টাকাগুলো পরোকীয়ায় জড়িয়ে একাধিক যুবকের পেছনে খরচ করেছে আমার স্ত্রী। এতে আমার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাই স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করেছি এবং তওবা করেছি।’
এ বিষয়ে সোমা বেগমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল করা হলেও মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে চুমুরদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সোহাগ জানান, প্রবাসী বদু শিকদারের স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত মনোমালিন্য চলছিল, এই নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ হয়েছে। শুক্রবার বদু শিকদারের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদের পর দুধ দিয়ে গোসলের ঘটনায় গ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।