Samakal:
2025-04-13@03:27:25 GMT

নতুন আশার আলো

Published: 12th, April 2025 GMT

নতুন আশার আলো

বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এই পরিবর্তনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ডিজিটাইজেশন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ গ্রহণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক চাপ, দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রা এবং ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর সমাধানে সহজলভ্য এই সেবা তরুণদের কাছে এক নতুন আশার আলো হয়ে উঠেছে। এই সেবার প্রসার ও গ্রহণযোগ্যতার পেছনে রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা, যা আমাদের সমাজে একটি বৃহত্তর মানসিক স্বাস্থ্য বিপ্লবের সূচনা করতে পারে।

বাংলাদেশে অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তরুণদের মধ্যে ৩৬.

৬%‐এর বেশি শিক্ষার্থী ডিপ্রেশনজনিত সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকে, যেখানে মেয়েদের হার ৪২.৯% এবং ছেলেদের ২৫.৭%। এ ছাড়া ২০১৯ সালের আরেক জরিপে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিপ্রেশনের মাত্রা ২২.৫% বেড়েছে। ফলে, তরুণ প্রজন্ম, যারা প্রযুক্তির সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত, তারা এ সেবাকে সহজলভ্য এবং কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করছে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেমন ব্র্যাকের ‘মনের যত্ন’ হটলাইন এবং অন্যান্য ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন তরুণদের মানসিক সমস্যাগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আয়োজিত কার্নিভাল এবং কর্মশালা তরুণদের মধ্যে এ বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করছে।

বিশ্বব্যাপী, কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, আর্ট থেরাপি এবং মেডিটেশনসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ডিজিটাল মাধ্যমে সহজলভ্য হয়েছে। বাংলাদেশেও এই প্রবণতা অনুসরণ করে তরুণরা তাদের মানসিক সমস্যাগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার সুযোগ পাচ্ছে, যা আগে সমাজে অনেকটা নেতিবাচক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতো।
তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে– দ্রুত পরিবর্তনশীল সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং পারিবারিক প্রত্যাশা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করার প্রবণতা তরুণদের মাঝে হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করছে।
তরুণরা প্রায়ই মনে করে যে, তাদের সমস্যাগুলো প্রকাশ করলে তারা সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হবে। এ পরিস্থিতিতে অনলাইন পরামর্শ একটি গোপনীয় এবং নিরাপদ বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।
অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ তরুণদের জন্য একটি কার্যকর সমাধান হয়ে উঠেছে। এটি তাদের সময় এবং অর্থ সাশ্রয় করতে সহায়তা করে। এই সেবার মাধ্যমে তরুণরা তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারছে এবং তাৎক্ষণিক সমাধান পাচ্ছে। এ ছাড়া, গোপনীয়তার নিশ্চয়তা তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা হিসেবে কাজ করছে। ব্র্যাকের মতো 
প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষিত মনোবিদ এবং সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলরের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করছে, যা মানসিক সমস্যাগুলোর কার্যকরী সমাধান দিতে সক্ষম। 

যদিও অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ নানাবিধ সুবিধা প্রদান করছে, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একজন মনোবিদও নেই, সেখানে প্রশিক্ষিত ও পেশাদার কাউন্সেলরের অভাব অনলাইন সেবার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া, অনেক তরুণ এখনও এই সেবা গ্রহণ করতে দ্বিধাগ্রস্ত থাকে। কারণ তারা মনে করে এটি তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের উচিত, এই উদ্যোগকে আরও প্রসারিত করা এবং তরুণদের জন্য একটি নিরাপদ ও সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা তাদের সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারবে।

মো. ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ্‌: 
লেখক ও গবেষক
ibrahimkhalilullah010@gmail.com
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমস য গ ল র জন য এই স ব

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে যে মৌলবাদী প্রবণতা দেখছি, তা উদ্বেগের: জয়শঙ্কর

বাংলাদেশে যে মৌলবাদী প্রবণতা দেখছি, তা উদ্বেগের- এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বুধবার নয়াদিল্লির ভারত মণ্ডপে নিউজ১৮-এর ফ্ল্যাগশিপ রাইজিং ভারত সামিটে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি। 

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়। বক্তৃতায় বৈঠকের বিষয়ে জয়শঙ্কর বলেন, বৈঠকে আমাদের প্রধান বার্তা- বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও অদ্বিতীয়। এটি জনগণের সঙ্গে জনগণের এবং আমি মনে করি, অন্য যে কোনো সম্পর্কের চেয়ে বেশি। এ সম্পর্ককে আমাদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে যে বার্তা আসছে, দেশটিতে আমরা যে মৌলবাদী প্রবণতা দেখছি, তা উদ্বেগের। সংখ্যালঘু হামলা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন এবং বৈঠকে উদ্বেগের বিষয়ে খুব খোলামেলা আলাপ হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, শিগগির বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদী। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্যই নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচনের মাধ্যমেই মনোনয়ন দেওয়া এবং তা নবায়ন করা হয়। আমরা আশাবাদী, তারা এ পথই অনুসরণ করবে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট জানায়, বক্তৃতায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কয়েক দশকের পুরোনো সম্পর্ক জনগণ ধরে রেখেছে। ভারতের চেয়ে অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশের জন্য এত মঙ্গল চায় না। বিষয়টি ভারতের ডিএনএতেই রয়েছে। শুভাকাঙ্খী ও বন্ধু হিসেবে ভারত আশা করে, বাংলাদেশ সঠিক পথে চলবে; ঠিক কাজটি করবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পহেলা বৈশাখে হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপমাত্রা
  • দেশের ৭২% পরিবারে এখন স্মার্টফোন
  • বাংলাদেশে যে মৌলবাদী প্রবণতা দেখছি, তা উদ্বেগের: জয়শঙ্কর