রেকর্ড গড়ে দানব হয়ে ফিরলেন অভিষেক, সঙ্গে হায়দরাবাদও
Published: 12th, April 2025 GMT
ব্যক্তিগত ২৮ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন ইয়াশ ঠাকুরের বলে। কিন্তু ভাগ্য যে আজ অভিষেক শর্মার পক্ষে। আউট হয়েও তাই বেঁচে গেলেন নো বলের কারণে। আর ভাগ্যের দেওয়া এই সুযোগ কাজে লাগাতে একটুও ভুল করলেন না সানরাইজার্স হায়দরাবাদের এই ব্যাটসম্যান। ৪০ বলে করেছেন সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত থেমেছেন ৫৫ বলে ১৪১ রান করে।
অভিষেকের এই ইনিংসটি আইপিএলে কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংস। আর এই অসাধারণ সেঞ্চুরিতেই মূলত পাঞ্জাব কিংসের দেওয়া ২৪৫ রানের পাহাড় টপকে গেছে হায়দরাবাদ। টানা চার হারের পর এই ম্যাচ দিয়ে অবশেষে জয়ে ফিরল হায়দরাবাদ।
আজ শনিবার রাতে হায়দরাবাদে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৪৫ রান করে পাঞ্জাব। তবে প্রীতি জিনতার দলের এই রানপাহাড়কেও সাদামাটা বানিয়ে ফেলে হায়দরাবাদ। অভিষেকের সেঞ্চুরির পর হায়দরাবাদ ম্যাচ জিতেছে ৮ উইকেটে। হাতে ছিল আরও ৯ বল।
আরও পড়ুনছক্কার রেকর্ডে ভারতকে জেতালেন অভিষেক শর্মা২২ জানুয়ারি ২০২৫বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন হায়দরাবাদের দুই ওপেনার ট্রাভিস হেড ও অভিষেক। দুজন মিলেন পাঞ্জাবের বোলারদের রীতিমতো কচুকাটা করেন। এই জুটিতে ৮ম ওভারেই দলীয় ১০০ রান পেরিয়ে যায় হায়দরাবাদ। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল দুই ওপেনারই বোধ হয় ম্যাচ শেষ করে দেবেন।
ফেরার সময় প্রতিপক্ষের বোলার আর্শদ্বীপের কাছ থেকেও সাধুবাদ পান অভিষেক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ য়দর ব দ
এছাড়াও পড়ুন:
গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ
বিতর্কিত বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমকে আটক এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাটি নানা আলোচনা-সমালোচনা ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশের মানুষ যখন গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা করছে, তখন বিশেষ ক্ষমতা আইনের এ প্রয়োগ একটি উদ্বেগজনক বিষয়।
গত বুধবার রাতে মেঘনা আলমকে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করতে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তিনি ফেসবুক লাইভে ছিলেন। পুলিশের সদস্যরা জোরপূর্বক বাসায় প্রবেশ করে মেঘনা আলমকে তুলে নিয়ে যান। তাঁকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে থানা ও ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি। ফলে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে কি না, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
বুধবার রাতে মেঘনা আলমকে তুলে নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় তাঁকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মেঘনা আলমকে কারাগারে পাঠানো হয়। লক্ষণীয় হলো, তাঁকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর আগপর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টা পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
শুক্রবার মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) শুক্রবার তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেয়। এতে মেঘনা আলমকে অপহরণ করার অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা করা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মেঘনা আলমকে সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।...’
এদিকে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মডেল মেঘনা আলমের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের একটি শক্তিশালী দেশের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। পরে সেই সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়। এর জেরে মেঘনা আলমকে প্রতিরোধমূলক আটক করা হতে পারে।
মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা করা হয়নি। তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস সবচেয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত আইনগুলোর একটি হলো বিশেষ ক্ষমতা আইন। এ আইনের পরিধি এতটাই বিস্তৃত, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই যে কাউকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটকে রাখা যায়। একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৯৭৪ সালে এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দমনের জন্য বিভিন্ন সময়ে আইনটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে—এ রকম বহু অভিযোগ রয়েছে।
অতীতে বিশেষ ক্ষমতা আইন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ বিরল। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগে একজন নারীর বিরুদ্ধে এ আইনের প্রয়োগ তাই ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবেই প্রতীয়মান হচ্ছে। মেঘনা আলমকে আটকের পর কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের ভাবমূর্তির জন্য একটি নেতিবাচক বিষয় হতে পারে।
মেঘনা আলমকে যেভাবে বা যে প্রক্রিয়ায় আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তা নাগরিক অধিকার হরণে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির চরম অভাবকে স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে তা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতা, মানবিকতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতিকে ভয়ানকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
লক্ষণীয় হলো, বেশ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের এ রকম প্রয়োগ খুবই হতাশাজনক। এই আইন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি হুমকিস্বরূপ—এ কথা তাঁদের অজানা নয়। সরকারের প্রতি আহ্বান রইল, যত দ্রুত সম্ভব বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করা হোক।