মাটির পাত্র তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পী পলাশ রুদ্র। চরকা ঘুরিয়ে হাঁড়ি-পাতিলের আকৃতি দিচ্ছেন। কেউ হাতে পাত্র বানাচ্ছেন, কেউ এসব তৈরি করার জন্য মাটি মেশাচ্ছেন। শিশুরা নতুন তৈরি করা ভেজা পণ্য রোদে শুকাতে দিচ্ছে, কেউবা তুলি দিয়ে রং করাসহ পণ্যের গায়ে বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তুলছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এমন চিত্র দেখা যায় পটিয়ার কচুয়াই ইউনিয়নের কুমারপাড়ায়। এখানকার মানুষজন যুগ যুগ ধরে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্তমানে পেশা ছেড়েছেন অনেকে। এখন হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার এ কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এখানকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মানবেতর জীবনযাপন করছেন পটিয়ার কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। পৌষ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত দেশজুড়ে বিভিন্ন মেলায় মাটির জিনিস বিক্রি হয় বলে এই সময় ব্যস্ততা বাড়ে কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পীদের। এই সময়টা বাদ দিলে বছরের অন্য সময় মাটির জিনিস তেমন বিক্রি হয় না। পটিয়া উপজেলায় মৃৎশিল্পীদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রির সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গাও নেই।
গত বৃহস্পতিবার কুমারপাড়ায় কথা হয় মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে। পাড়া ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বাড়ির উঠানে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করছেন পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, বৈশাখ মাসে গ্রামে-গঞ্জে মেলা হয়। সেসব মেলায় মাটির জিনিসের চাহিদা থাকে। এ জন্যই এ সময় ব্যস্ততা বাড়ে।
পাড়ার বাসিন্দা পলাশ রুদ্রের বয়স এখন ৫৫। সেই ১০ বছর বয়স থেকেই বাবা হারাধন রুদ্রের সঙ্গে মাটির জিনিস তৈরি করছেন। তখন এ পাড়ার ৪০টি পরিবারের সদস্যরা মাটির তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কলসি, ধুপদানি, বিয়ের ঘট, ঢাকনা ও শিশুদের নানা খেলনা তৈরি করতেন। মৃৎপাত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন আর এ কাজ করে সংসার চালানো যায় না। তিনি বলেন, ‘বাজারে এখন মাটির জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। সবাই অ্যালুমিনিয়াম আর প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করে। আমাদের ছেলেমেয়েরা তাই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। অনেকে কারখানা, গার্মেন্ট আর মুদির দোকানে কাজ করছে।’
মৃৎশিল্পী অর্পিতা রানী পাল (৫৫) ও জুলি রুদ্র (৩৫) স্বামীর পাশাপাশি মাটির জিনিস তৈরি করেন। তারা বলেন, এ পর্যন্ত কখনও কোনো সরকারি সহায়তা পাননি পাড়ার মৃৎশিল্পীরা। বাধ্য হয়ে তারা বেশি সুদে বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কঠোর পরিশ্রম করেও সংসার চালানোর মতো আয় করতে পারছেন না এই পেশার লোকজন। অনেকের আয় দিনমজুরের চেয়েও কম।
মৃৎশিল্পী ওমা রুদ্র (৪৭) জানান, প্রতিটি পাতিল ও কলসি বানাতে তাঁর প্রায় ২৫ টাকা খরচ পড়ে। তবে বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকায়। প্রতি মাসে গড়ে ২০ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি হলেও লাভ থাকে মাত্র ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। আমি এটার পাশাপাশি ফার্নিচারের কাজ করি। 
সরকারিভাবে একাধিকবার নামের তালিকা নিলেও কোনো সহযোগিতা পায়নি বলেও এই এলাকার মৃৎশিল্পীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন।
মৃৎশিল্পীদের দেয়া তথ্যমতে, তাদের তৈরি মাটির প্রতিটি পণ্যের আকার-আকৃতি ও গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে পাইকারি প্রতি পিস ১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করে এবং খুচরা প্রতি পিস ২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। চাহিদা কম থাকায় সারা বছর কম কম বানানো হয়। মাটি ক্রয় করা, মাটি পরিবহন করা, মাটি মিশানো, তৈরি পণ্যে রঙ করা, পুড়ানোসহ যে টাকা ব্যয় হয়। বিক্রি শেষে লাভ থাকে না বললেই চলে। তাই এখন শুধুমাত্র এই পেশার আয় দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার খরচ চালানো সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়েই সবাই এই পেশার পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় মনোনিবেশ করেছেন।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই শিল্পের দিকে সরকার ও বিত্তবানদের সুনজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠক ও পটিয়া বর্ষবরণ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এডভোকেট খুরশিদুল আলম বলেন, ‘যে বা যারা এখনো এসব শৈল্পিক কাজ করেন, তাদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার পাশাপাশি সহজে বাজারজাত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা জরুরি।’
এ ব্যাপারে কথা হয় পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এ শিল্পকে বাঁচানো প্রয়োজন। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারিভাবে ঋণ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ কর সরক র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

যে গ্রহকে খেয়ে ফেলছে তার নক্ষত্র

মিল্কিওয়ে ছায়াপথে পৃথিবী থেকে প্রায় ১২ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অ্যাকুইলা নক্ষত্রমণ্ডল অবস্থিত। সেখানকার দারুণ এক ঘটনার খোঁজ মিলেছে। ২০২০ সালের মে মাসে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো একটি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করেন। সেই গ্রহকে তার নক্ষত্র খেয়ে ফেলছে। নক্ষত্রটি আসলে তার জীবদ্দশার শেষ দিকে ফুলেফেঁপে লাল দানবে পরিণত হওয়ার সময় গ্রহটিকে গ্রাস করতে শুরু করে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের নতুন পর্যবেক্ষণ সেই ঘটনার ময়নাতদন্ত করছে। দেখা যাচ্ছে, গ্রহটির পতন প্রাথমিকভাবে যা ভাবা হয়েছিল, তার থেকে ভিন্নভাবে ঘটেছে। গবেষকেরা বলেছেন, নক্ষত্র গ্রহের কাছে আসার পরিবর্তে গ্রহটি নক্ষত্রের কাছে ধেয়ে আসতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহকে কক্ষপথ থেকে গ্রাস করতে থাকে।

নক্ষত্রের চারপাশে একটি বলয় তৈরি করা উত্তপ্ত গ্যাসের মাধ্যমে গ্রহটিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলতে দেখা যায়। বিজ্ঞানী রায়ান লাউ বলেন, গ্রহকে যখন গ্রাস করে ফেলে, তখন নক্ষত্রের থেকে প্রচুর পরিমাণে উপাদান নির্গত হয়। ধূলিময় অবশিষ্ট অনেক উপাদান নক্ষত্র থেকে বের হয়ে আসে। নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়ে সামান্য লালচে ও কম উজ্জ্বল। ভর সূর্যের প্রায় ৭০ শতাংশ। আর যে গ্রহকে গ্রাস করেছে, তা হট জুপিটার শ্রেণির বিশাল গ্রহ। নক্ষত্রের খুব কাছে বলে এমন গ্রহ উচ্চ তাপমাত্রার গ্যাসীয় গ্রহ।

হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বিজ্ঞানী মর্গান ম্যাকলিওড বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করছি সম্ভবত একটি বিশাল গ্রহের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতি গ্রহের ভর কয়েক গুণ গ্রহটিকে নক্ষত্র গ্রাস করে নিয়েছে।’

বৃহস্পতি আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ। গবেষকেরা বিশ্বাস করেন, গ্রহটির কক্ষপথ তার নক্ষত্রের সঙ্গে মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়ার কারণে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে যায়। পরে সেই গ্রহকে গ্রাস করে নেয় নক্ষত্র। প্রথম নক্ষত্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে ধ্বংস করে দেয়। নাক্ষত্রিক বায়ুমণ্ডলের মধ্য প্রবেশের মধ্য দিয়ে গ্রহটি দ্রুত নক্ষত্রের মধ্যে পতিত হয়। গ্রহটি ভেতরের দিকে পতিত হয় ও নক্ষত্রের গভীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্যাসীয় বাইরের স্তর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এমন ঘটনা আমাদের সৌরজগতে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। যদিও আমাদের সৌরজগতের কোনো গ্রহ সূর্যের এত কাছে অবস্থিত নয়। আজ থেকে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন বছর পর সূর্য লাল দানব পর্যায়ে বাইরের দিকে প্রসারিত হবে। তখন সম্ভবত বুধ ও শুক্রকে গ্রাস করবে। সেই হিসেবে পৃথিবীকেও গ্রাস করতে পারে।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ