শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, অনেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠেছেন। এই প্রীতি আসছে তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার মনে করার মাধ্যমে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শেখ হাসিনা।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্মেলনকক্ষে এক সেমিনারে সলিমুল্লাহ খান এ কথা বলেন। ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসির (আইপিএলডি) আয়োজনে ‘বাংলাদেশে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা’ শিরোনামের এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে প্রধান বক্তার বক্তব্যে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে ফ্যাসিজম কোথায় কোথায় হয়েছে। আগের রেজিম মনে করেছে তাদের শাসন বৈধ, কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এই যে মুক্তিযুদ্ধকে বিক্রি করা, মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করা এবং গুম, খুন, ক্রসফায়ার করার জন্য মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করা; এটিই ফ্যাসিজমের উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধ যদি আইনের শাসন প্রবর্তনে আপনাকে সাহায্যই না করে, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ করাই আপনার ঠিক হয়নি।’

সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, আজ বাংলাদেশের সবাই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছে, কিন্তু সেটা শুধু কথার ফুলঝুরি। মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ ছিল—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। অথচ এই আদর্শকেই ১৯৭২ সালে হত্যা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র কতটা টেকসই তা বুঝতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে তাকাতে হবে উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা যা করেছি, তা ঔপনিবেশিক ফ্যাসিজমের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন বাংলাদেশেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ঢাকা শহরের ৫ শতাংশ লোককে স্পর্শ করে না সে রকম একটা মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে। সেটাও ভালো। কিন্তু বাকি ৯৫ শতাংশ লোক কী অপরাধ করল? সাধারণ গণপরিবহন নেই কেন আমাদের? আপনি ইচ্ছে করলে বাসে উঠতে পারছেন না কেন? এটা কোনো সভ্য দেশের মাপকাঠি হতে পারে? এটি গণতন্ত্রের মাপকাঠি হতে পারে? যেখানে আপনার ঢাকা শহরে উত্তর থেকে দক্ষিণে যেতে ছয় ঘণ্টা লাগে।’

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘গণতন্ত্রকে টেকসই করতে হলে আমাদের কিছু সংস্কার করতে হবে। আমাদের অর্ডারটা জবরদস্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং এটি গণতান্ত্রিক নয়। কেন র‍্যাব গঠিত হলো, বিশেষ ক্ষমতা আইন করা হলো, কেন জরুরি অবস্থা জারি করা হলো—সবই হলো কাঠামোবদ্ধ ভায়োলেন্স। গণতন্ত্র মানে শুধু ভোটের অধিকার নয়।’

আইপিএলডির সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন আইপিএলডির ট্রাস্টি মেম্বার তাহমিন বানু এবং নির্বাহী সদস্য এহসান শামীম। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন আইপিএলডির নির্বাহী সদস্য ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণতন ত র আম দ র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী যারা, তাদের হাতেই ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধন, স্বাধীনতা হরণ ও গণতন্ত্রের সমাধি রচিত হচ্ছে। এই প্রহসন যেন সভ্যতার সঙ্গে উপহাস। আসলে এরা বর্ণচোরা মুনাফিক। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে ও ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ফিলিস্তিন ভূমিকে মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়নবাদী অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষিত হয়। তখন থেকে মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে, যা আজও চলছে।

১৯৬৭ সালে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল ‘মসজিদুল আকসা’ জবরদখল করে। এর পর থেকে মুসলিম জনগণ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সূচনা করে। ১৯৭৯ সাল থেকে ‘আল–আকসা’ মসজিদ মুক্তির লক্ষ্যে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকের শুক্রবার ‘আল–কুদস’ দিবস পালন করে। তখন থেকে সারা বিশ্বে এ দিনটি ফিলিস্তিন মুক্তির ও বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের প্রতীক রূপে পালিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিতভাবে দৃঢ়রূপে ধারণ করো, আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা-৩, আল–ইমরান, আয়াত: ১০৩)

মুসলিম বিশ্বকে দাবিয়ে রাখার জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদ লুণ্ঠনের জন্য আমেরিকা ও ইউরোপ দাবার ঘুঁটি হিসেবে ইসরায়েলকে ব্যবহার করছে এবং আরব শাসকদের জুজুর ভয় দেখিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেছে। ইরান ও ইয়েমেন ছাড়া প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রকে আমেরিকা তাঁবেদার বানিয়ে নিয়েছে। এভাবে ছলে-বলে-কলে–কৌশলে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি ও ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে বাধ্য করা হচ্ছিল। এ সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার কথা ভুলে যাওয়ার উপক্রম হলো। বিশ্ব জনসংখ্যার ২৫ ভাগ মুসলিম পৃথিবীর ৭৫ ভাগ প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক হয়েও মানবতাবিরোধী আমেরিকার কাছে দাসখত দিল।

আন্তর্জাতিক আদালত অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের জালিম প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও আমেরিকা তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত এলেও আমেরিকা তাতে ভেটো দিয়ে তা বানচাল করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে ত্রাণসহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়ে গৃহহীন ফিলিস্তিনিদের দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। স্কুল, হাসপাতাল ও আশ্রয়কেন্দ্রে বোমাবর্ষণ করছে। জাতিসংঘের স্থানীয় অফিস ও কর্মীদের গাড়িতে, ত্রাণবাহী গাড়িতে, ত্রাণকর্মীদের ওপর, এমনকি সংবাদকর্মীদেরও হামলা চালিয়ে নির্বিচার হত্যা করে যাচ্ছে।

সারা পৃথিবী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আরব শাসকেরা গদি হারানোর ভয়ে নিশ্চুপ। ইউরোপ-আমেরিকায় ছাত্র-জনতা ও সচেতন নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ জানাচ্ছে, স্বৈরাচার শাসকগোষ্ঠী তা কঠোর হস্তে নিপীড়নের মাধ্যমে দমন করছে। বাংলাদেশসহ কিছু মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের জনগণ প্রতিবাদ সমাবেশ করে যাচ্ছে। কিন্তু ওআইসি, ওপেক, আরব লিগ ও জাতিসংঘ বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে নির্বিকার।

এ অবস্থা চলতে থাকলে জনরোষ ও জনবিস্ফোরণ পরিবর্তিত হবে, যুদ্ধ বন্ধ না করলে খোদ আমেরিকা তাদের অবস্থান হারাবে। তাদের ঘাঁটিগুলো অনিরাপদ হবে, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে।

আসুন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা সুরক্ষায় সোচ্চার হই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো অন্যায় দেখে, তবে তা স্বহস্তে (বলপ্রয়োগের মাধ্যমে) পরিবর্তন করবে, যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মুখের কথায় (কূটনৈতিক সমঝোতায়) তা পরিবর্তন করবে, যদি তা–ও সম্ভব না হয়, তবে মনের (পরিকল্পনা) দ্বারা তা পরিবর্তনের সচেষ্ট থাকবে; এটা হলো দুর্বলতম ইমান, এরপর ইমানের কোনো অংশ অবশিষ্ট নেই।’ (সহিহ মুসলিম শরিফ)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষার্থীদের আর বঞ্চিত রাখা না হোক
  • সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চার ঝুঁকি
  • গাজায় জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে
  • বিএনপি ২৯০ আসন পেলেও দুই-তিন বছরের বেশি টিকতে পারবে না: মজিবুর রহমান