ভিটা ছেড়ে দুর্গম হাওরে খলাবাড়ির বর্গাচাষিরা
Published: 12th, April 2025 GMT
প্রতিষ্ঠিত গেরস্থ ও বড় চাষিদের বিস্তর ফসলি জমিতে ফসল উৎপাদনের মূল কাজ করেন স্থানীয় বর্গাচাষিরা। অন্যান্য এলাকার চেয়ে হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ অঞ্চলে ফসল উৎপাদনের এ সংগ্রামটা অনেক বেশি কঠিন চাষিদের জন্য। জেলার হাওর অধ্যুষিত অঞ্চলের সবচেয়ে দুর্গম এলাকাগুলোতে বোরো ফসল আবাদের জন্য ভিটেবাড়ি ছাড়তে হয় সেখানকার বর্গাচাষিদের। সেখানে তারা গড়ে তোলেন মৌসুমি বসতি। বর্ষায় হাওরের এসব অংশজুড়ে থাকে বিস্তীর্ণ জলরাশি।
শুষ্ক মৌসুমে হাওরের পানি নেমে গেলে এর দুর্গম অংশে প্রতি মৌসুমে গড়ে তোলা হয় বর্গাচাষিদের অস্থায়ী বসতি। এসব বসতি কোথাও জিরাতি, আবার কোথাও খলাবাড়ি নামে পরিচিত।
শত বছর আগে ফসল আবাদের তাগিদ থেকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাধীন মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের সীমানাবর্তী দেখার হাওরে গড়ে উঠেছিল প্রান্তিক চাষিদের প্রথম অস্থায়ী আবাস। সেখান থেকে হাওর অঞ্চলের চাষিদের ঐতিহ্যে পরিণত হয় খলাবাড়ি।
বিশাল হাওরের মাঝখানে স্থাপন করা হয় খলাবাড়ি নামে পরিচিত এ অস্থায়ী আবাস। যার সঙ্গে যুক্ত থাকে বিশাল আঙিনা। এসব এলাকায় গিয়ে ফসলের তদারকি করা কঠিন। তাই বছরের সাত-আট মাসের জন্য সেখানে খলাবাড়ি স্থাপন করেন চাষিরা। তেল-লবণ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু সেখানে নিজেরা ব্যবস্থা করেন। এই সময়ে হাওরের বিস্তীর্ণ জমিতে বোরো ধান আবাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
খড়, ছন, বাঁশ আর মাটি দিয়ে বানানো হয় খলাবাড়ির অস্থায়ী ঘরগুলো। বৈরী আবহাওয়া, নানা প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করে সপরিবারে সেখানে অবস্থান করেন বর্গাচাষিরা।
একদিকে জমিতে ধানের আবাদ চলতে থাকে, অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজন মেটাতে সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনসহ সবই করেন চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে জমি আবাদের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ফসল উৎপাদনের প্রক্রিয়া সেখানে শেষ হয় ধান মাড়াই, শুকানো ও গোলায় তোলা পর্যন্ত। এই পুরো সময় সেখানে থাকেন চাষিরা।
বর্গাচাষিদের অনেকে হাওরের খলাবাড়িতে আসছেন বংশ পরম্পরায়। চলতি মৌসুমে সেখানে থাকা অবস্থান করছেন ৩০টি পরিবার।
এসব বর্গাচাষি পরিবারের পুরুষ সদস্যরা জমিতে বোরো ধান রোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ, কর্তন ও শুকানোর কাজে যুক্ত থাকেন। নারীরা বাড়ির আঙিনায় শাকসবজির আবাদ, গবাদিপশু পালন, রান্না-বান্নার কাজ করেন। বৈশাখে নতুন ধান তুলে বাড়ি ফেরেন তারা।
দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা স্মৃতি রঞ্জন দাস জানান, কার্তিক মাসে পরিবার নিয়ে এখানে এসেছেন। হাওরের পতিত জমিতে বাঁশ, খড় আর মাটি দিয়ে বানিয়েছেন অস্থায়ী ঘর। এবার ১৪ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন তিনি। এখানে বছরের প্রায় ৮ মাস থাকেন তারা।
একই উপজেলার বাজিতপুরের বাসিন্দা জবর আলী বলেন, কুঁড়ে ঘর বানাতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসে যাওয়ার সময় ঘর ভেঙে বাড়ি নিয়ে যাবেন। এখানে থেকে জমি চাষ করছেন। পান্ডারগাঁওয়ের সীমা রানী দাস বলেন, আবাদের জন্য হাওরের মাঝে ঘর বানিয়ে থাকেন তারা। রাস্তাঘাট না থাকায় বাজারে যেতে অসুবিধা হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।
খলাবাড়িতে অবস্থানকারী ৩০টি বর্গাচাষি পরিবারের সদস্যরা জানান, অন্তত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাটুকু এখানে করা উচিত। একই দাবি জানিয়ে মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক বলেন, খলাবাড়ির বর্গাচাষিরা এ অঞ্চলের বোরো উৎপাদনে যে অবদান রাখছেন তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য সেখানে পানি ও বিদ্যুৎ সেবাটুকু নিশ্চিত করা সবার দায়বদ্ধতা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ ওর বর গ চ ষ র দ র জন য পর ব র হ ওর র
এছাড়াও পড়ুন:
পারমাণবিক চুক্তি: ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘ইতিবাচক’ আলোচনা
পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘ইতিবাচক’ ও ‘গঠনমূলক’ আলোচনা হয়েছে। গতকাল শনিবার ওমানে এ আলোচনা হয়।
তবে বৈঠকে প্রত্যক্ষ নয়, বরং ওমানের মধ্যস্থতায় আলোচনা হয়েছে। ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বার্তা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছেন। আগামী সপ্তাহে উভয় পক্ষ আবার বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছে। খবর রয়টার্স
এই আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল তেহরানের বাড়তে থাকা পারমাণবিক কর্মসূচি মোকাবিলা করা— যেখানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি কোনো সমঝোতা না হয় তবে ইরানে সামরিক অভিযান শুরু করা হতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, আমার মনে হয়, আমরা আলোচনার রূপরেখার খুব কাছাকাছি আছি। আর যদি আগামী সপ্তাহে এই ভিত্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারি, তবে সেটি একটি বড় অগ্রগতি হবে এবং আমরা সেই ভিত্তির ওপর বাস্তব আলোচনা শুরু করতে পারব। তবে সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনা "শান্তিপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবেশে" হয়েছে এবং তিনি জানিয়েছেন, আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো—আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানো, বন্দী বিনিময়, ও কিছু সীমিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ।
আরাকচি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদ থেকে এ পর্যন্ত এটি ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আলোচনা। ‘উৎপাদনশীল, শান্তিপূর্ণ এবং ইতিবাচক পরিবেশে’ এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘উভয় পক্ষ আগামী শনিবার আবার আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই স্বল্পমেয়াদে একটি সমঝোতা চায়। আমরা শুধু আলাপ-আলোচনার জন্য আলোচনা করতে চাই না।’
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভেন উইক ওমানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আনা এসক্রোগিমা এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্বাস আরাকচিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা ‘খুবই ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই বিষয়গুলো অত্যন্ত জটিল, তবে আজ বিশেষ দূত উইটকফের সরাসরি যোগাযোগ পারস্পরিক উপকারে পৌঁছানোর পথে একটি অগ্রগতি।” উভয় পক্ষ আবার আগামী শনিবার সাক্ষাৎ করতে সম্মত হয়েছে।
ট্রাম্প গত সোমবার হঠাৎ ঘোষণা দেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান ওমানে আলোচনা শুরু করবে। এর আগেও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে ওমান।