গাইবান্ধায় আলোকচিত্রশিল্পী কুদ্দুস আলমের তিন দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘চর ও জীবন’ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার পৌর পার্কের বিজয়স্তম্ভ প্রাঙ্গণে এর উদ্বোধন করেন আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা একুশে পদকপ্রাপ্ত শহিদুল আলম। এতে নদীজীবী ও চরাঞ্চলের মানুষের যাপিত জীবনের দেড় শতাধিক ছবি স্থান পেয়েছে। 
সামাজিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সৃজনশীল গাইবান্ধা এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সংগঠনের উপদেষ্টা মো.

আবুল হোসেন মৃধার সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য মোস্তফা সবুজ। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুমের সঞ্চালনায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও সাঁওতালদের নৃত্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে শহিদুল আলম বলেন, আলোকচিত্রও কবিতার মতো। আলোকচিত্রীরা এক প্রকারের গল্পকার। তাঁরা এর মাধ্যমে সমাজের গল্প তুলে ধরেন। আলোকচিত্রীকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে হয়। জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে আলোকচিত্রীরা অসামান্য সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের কারণে আন্দোলন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কুদ্দুস আলমের ছবি সময়ের সাক্ষী।
প্রদর্শনী উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রদর্শনীর উদ্বোধক শহিদুল আলম। প্রদর্শনীতে কুদ্দুস আলমের তোলা নদীজীবী ও চরাঞ্চলের মানুষের যাপিত জীবনের দেড় শতাধিক ছবি স্থান পেয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ

এছাড়াও পড়ুন:

দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামছে বামপন্থিরা

দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করার বিষয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাম রাজনৈতিক দলগুলো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করতে চায় তারা। প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে জনমত তৈরিতে সারাদেশ সফর, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ এবং ঢাকায় বৃহত্তর সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার চিন্তাও করছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। 

রাজনৈতিক দলগুলো কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে, বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছর জুনে নির্বাচন হবে– সরকারের এমন বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারছে না বাম দলগুলো। এ বক্তব্যের মাধ্যমে সরকার কালক্ষেপণ করছে বলে মনে করছে তারা। 

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কয়েকজন নেতা জানান, দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে চাপে রাখতে বড় ধরনের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সোচ্চার হতে চান তারা। যুগপৎ ধারার আন্দোলন শুরুর বিষয়ে তারা অনেক দিন ধরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে তারা জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।

এই জোটে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) ছয়টি দল রয়েছে। সূত্র জানায়, ঈদের কয়েকদিন আগে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের রাজধানীর বেইলি রোডের বাসায় বামপন্থি নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে সব গণতান্ত্রিক শক্তির বৃহত্তর জোট গঠনের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর বিষয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া বাম জোট নেতারা ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয় গণফ্রন্ট, ঐক্য ন্যাপসহ কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একাধিক সংগঠন এবং গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক গণসংগঠনের সঙ্গেও তাদের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সঙ্গেও কথা বলেছেন বাম জোটের নেতারা। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান-পূর্ববর্তী সময়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতারা এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে দাবি করেন বাম জোটের নেতারা।    

অন্যদিকে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় বিএনপিকেও যুক্ত করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বাম নেতাদের মধ্যে। কয়েকজন নেতা বলছেন, দেশের বিদ্যমান সংকট নিরসনে দ্রুত নির্বাচনের দাবিসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তৃতা-বিবৃতির সঙ্গে বাম দলগুলোর বক্তব্যের অনেকটাই মিল রয়েছে। তাই বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে বাম নেতাদের।

বামপন্থি নেতারা আরও বলছেন, তারা বারবারই দাবি করে আসছেন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। তবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয়। সরকার ঠিক কতটুকু সংস্কার করতে চায়, সেটাও স্পষ্ট করছে না। ‘কম সংস্কার’ ও ‘বেশি সংস্কার’– এমন বক্তব্য সামনে নিয়ে এসে এর দায়দায়িত্ব অনেকটাই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিতে চাইছে। 

সূত্র জানায়, আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে প্রাথমিকভাবে সারাদেশে জেলা-উপজেলা সফর করে সভা-সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা চলছে। এরপর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ শেষে ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করার আলোচনা রয়েছে বাম দলগুলোর মধ্যে। এরপরও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে আরও বড় কর্মসূচিতে যাবে তারা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া সমকালকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের সঙ্গে আগের আলোচনায় বলেছিলেন, ন্যূনতম সংস্কারের ভিত্তিতে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু সর্বশেষ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি ভিন্ন কথা বলেছেন। তবে আমরা আমাদের আগের অবস্থানেই আছি। আমরা মনে করি, ন্যূনতম সংস্কার করে সরকারের দ্রুত নির্বাচনে চলে যাওয়া উচিত। সেই দাবি আদায়ে আমাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা ঐকমত্য রয়েছে।’ চলতি মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান শরীফ নুরুল আম্বিয়া।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগে অন্ধকারের শক্তি যে কোনো সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই আর দেরি না করে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করাই সরকারের এখনকার জরুরি কর্তব্য। সরকার এতে অহেতুক বিলম্ব করলে অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, সংস্কার ও সুনির্দিষ্ট তারিখসহ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে সরকারের অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। সরকার ‘ভেক’ কথাবার্তা বলে সংশয় ও ধোঁয়াশা তৈরি করছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার দরকার সেগুলো করে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ