বগুড়ার ধুনটে চাঁদাবাজী মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে শ্রমিক দল নেতা ও তার সমর্থকদের হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাতে উপজেলা সদরের চরধুনট গ্রামে ও থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ধুনট থানার এসআই হারুনর রশিদ সরদার বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

হামলায় আহতরা হলেন- এসআই হারুনর রশিদ সরদার (৪৭), কনস্টেবল মোজাফ্ফর রহমান (৫৮) ও আয়নুল হক (৪০)। তাদের ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের ভাঙচুর

লক্ষ্মীপুরে যুবককে গুলি, আটক ২

গ্রেপ্তাকৃতরা হলেন- চরধুনট গ্রামের বুইদা প্রামানিকের ছেলে ও পৌর শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মজিদ ও তার মেয়ে জামাই মহা আলম জীবন। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বাদী এসআই হারুনুর রশিদ সরদার ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, চরধুনট গ্রামের ব্যবসায়ী রতন কুমার তার নিজস্ব জায়গায় বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। গত ৮ এপ্রিল মহা আলম জীবন ও তার লোকজন রতন কুমারের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা না পেয়ে গত ১০ এপ্রিল রাতে তারা নির্মাণাধীন বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যান। এ ঘটনায় রতন কুমার বাদী হয়ে গত ১১ এপ্রিল রাতে মামলা করে। মামলায় মহা আলম জীবনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। 

পুলিশ রাত ১১ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মহা আলম জীবনকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় শ্রমিক দল নেতা আব্দুল মজিদের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামিসহ অন্য পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। 

গ্রেপ্তারকৃত আসামি মহা আলম জীবনকে থানায় নেওয়ার পর তার শ্বশুর শ্রমিক দল নেতা আব্দুল মজিদ দ্বিতীয় দফায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ থানা চত্বর থেকে আব্দুল মজিদকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় এসআই হারুনর রশিদ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক দল নেতা আব্দুল মজিদ ও তার জামাই মহা আলম জীনবসহ ১১ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৮/১০জনকে আসামি করা হয়েছে।

ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম বলেন, “চরধুনট গ্রামের ব্যবসায়ী রতন কুমার বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। তার কাছে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে নির্মাণাধীন বাড়ি ভাঙচুর করে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়া ঘটনায় রতন কুমার মামলা করেন। সেই মামলায় আসামি গ্রেপ্তার করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। আমরা দুই জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/এনাম/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত গ র প ত র কর এসআই হ র ন রতন ক ম র এ ঘটন আলম জ ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

মধ্যরাতে বাড়ি থেকে অপহরণ, ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রাম থেকে অপহৃত রিফাত মিয়াকে উদ্ধার ও ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। ডিজিএফআই পরিচয় দিয়ে গত সোমবার মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মালুর ছেলে রিফাতকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে। পরে ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে কসবা উপজেলা থেকে তাঁকে উদ্ধার এবং রেজাউল করিম নামে একজনকে আটক করেছে। অন্য আটজনকে বুধবার খুলনা থেকে আটক করা হয়।

ক্যাপ্টেন পরিচয় দেওয়া রেজাকে নবীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি মাইক্রোবাসের নম্বর ও চালকের ফোন নম্বরের সূত্র ধরে আটজনকে আটক করা হয়। কসবা পৌর এলাকার রেজা জানায়, সে বিমানবাহিনীতে চাকরি করত। অপহরণে চালকসহ ১২ জন জড়িত। 

আটক অন্যরা হলো– ডুমুরিয়ার সাহাপুর গ্রামের জাহিদুর রহমান, খরসংগ গ্রামের আশরাফুল কবির, মাসুম বিশ্বাস, মধুরাম সাহাপুর গ্রামের রাজন কুম্ভ, আন্দুলিয়া গ্রামের মো. নয়ন আকোঞ্জী, খরসংগ গ্রামের মো. আলমগীর মোল্লা, কেশবপুরের ভরতভাইনা গ্রামের আব্দুল গফুর সরদার, ডুমুরিয়ার শাহাপুর গ্রামের মোহাম্মদ তৈবুর রহমান।

রিফাতের (১৯) বাবা মালু মিয়া সৌদি আরবে ব্যবসা করতেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের উপস্থিতিতে সোমবার রাতে দুর্বৃত্তরা নিজেদের ডিজিএফআই সদস্য পরিচয় দিয়ে রিফাতকে ধরে নিয়ে যায়। এর চার ঘণ্টা পর রাত ৩টার দিকে মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে নগদ ৩ কোটি টাকা দাবি করা হয়। তিনি আরও বলেন, ফোন দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নবীনগর থানার ওসির সহযোগিতা চেয়েছিলেন। ওসি তখন বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন, তবে পুলিশ পাঠাচ্ছেন। এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই থানা থেকে দুই এসআই আবদুল মন্নাফ ও রাম কানাই সরকারের নেতৃত্বে সাত-আট পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে। কিন্তু পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বদলে তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে শলাপরামর্শ করে। এ সময় সামান্য দূরে থাকা এসআই মন্নাফকে কমপক্ষে ২০ বার ফোন করেন। কিন্তু তিনি ফোন না ধরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলাপ করে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা নগদ টাকা, স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয় এবং রিফাতকে নিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও চলে যায়। তিনি মঙ্গলবার নবীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এজাহারে তিনজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়। নাম উল্লেখ বরা তিনজন হলেন– লাউর ফতেপুর গ্রামের কামাল মিয়া ও কামাল খন্দকার এবং বাড়িখলা গ্রামের আবু কালাম আজাদ।

উদ্ধার হওয়া রিফাত বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনভর কসবা রেললাইনের পাশে সীমান্তের কাছাকাছি মাইক্রোবাসে আমাকে বসিয়ে রাখা হয়। তাদের সঙ্গে চুক্তি করি, আমাকে ছেড়ে দিলে ৩ কোটি টাকা এনে দেব। চুক্তি অনুযায়ী, দুই ধাপে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়, তারা বাকি টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। ওই অ্যাকাউন্ট নম্বর আমার পরিবারের কাছে পাঠালে এর সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে উদ্ধার ও রেজাকে আটক করে।’

এসআই মোন্নাফ ও এসআই রামকানাইয়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কথা বলবেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপহরণ হওয়া যুবক রিফাতকে উদ্ধার করা হয়েছে। এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল ওদের কথা সত্যি, পরে যখন রিফাতকে নিয়ে যায়, তখন টের পাওয়া গেছে তারা প্রতারক চক্র। এতে পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদারীপুরে হাতকড়াসহ ২ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আটক ২৭ 
  • হাতকড়াসহ ২ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আটক ২৭ 
  • সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতা পরিচয়ে হামলা, লুটপাট ও নির্যাতনের অভিযোগ
  • মধ্যরাতে বাড়ি থেকে অপহরণ, ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি