ডেঙ্গুতে দুজনের মৃত্যু, দুজনই বরিশালের
Published: 12th, April 2025 GMT
দেশে আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা দুজনই বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তাঁদের মধ্যে একজন নারী, অপরজন পুরুষ।
প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, মারা যাওয়া দুজনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা। তাঁদের একজনের বয়স ৩৬ বছর, অপরজনের ৪০ বছর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ সকাল ৮টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ জন। তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ জন ভর্তি হন বরিশাল বিভাগের হাসপাতালে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা তিনজন করে মোট ছয়জন। ঢাকা বিভাগের জেলা পর্যায়ে ভর্তি রোগী চারজন। বাকি দুজন চট্টগ্রাম বিভাগের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ৫ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত মধ্যবয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছিল। ওই মৃত্যুর দেড় মাস আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একই এলাকার হাসপাতালে মধ্যবয়সী আরেক নারীর মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়ে চলতি বছর ১২ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত ১৬ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলো। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন এবং জানুয়ারিতে ১০ জন মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যা ২ হাজার ৭৪ জন। তাঁদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ জনসহ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১ হাজার ৯৫৬ জন।
দেশে ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হয়। ওই বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। আর গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়, হাসপাতালে ভর্তি হন ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন।
কেন বরিশালে ডেঙ্গু বেশি
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, এ বিভাগে ২০২১ সালে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই সময় যাঁরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতেন, তাঁদের বরিশালের বাইরে ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। কিন্তু দুই বছর ধরে যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের প্রায় শতভাগ স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা গোটা বরিশাল বিভাগেই ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে আক্রান্তের হারও বাড়ছে।
শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল আরও বলেন, বরিশালে স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এটা করতে হলে সরকারি-বেসরকারিভাবে সম্মিলিত উদ্যোগ এবং ব্যক্তিগত সচেতনতা প্রয়োজন। বর্তমানে বরিশালে ডেঙ্গু নিয়ে যেসব রোগী আসছেন, তাঁদের বেশির ভাগই প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর শ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
বিলাসপুরে কারা–কীভাবে–কোথায় ককটেল বানান, কত টাকা পান
বালতিতে করে ককটেল নিয়ে ‘খইয়ের মতো’ ফুটিয়ে সংঘাতে জড়ানো শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়নে নতুন ঘটনা নয়। এ চিত্র অন্তত ২০ বছরের। প্রতিবছর ছয় থেকে আটবার এমন ‘ককটেল সংঘাত’ হয়। ককটেলগুলো বানানো হয় বিলাসপুরের বিভিন্ন গ্রামে। ককটেল বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে গত ১৫ বছরে একজনের প্রাণহানি এবং ৩০ জনের অঙ্গহানি হয়েছে, এমন তথ্য স্থানীয় ব্যক্তি ও পুলিশের।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ককটেল তৈরি করা, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করে লুটপাট করা, সংঘর্ষে জড়ানো ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা কুদ্দুস ব্যাপারী ও জলিল মাতবর। ওই দুই পক্ষের আছে ককটেল তৈরির প্রশিক্ষিত লোক। বিলাসপুরে তৈরি করা ককটেল শুধু যে বিলাসপুরেই ব্যবহৃত হয়, এমন নয়। এসব ককটেল বিক্রি করা হয় জেলার বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীদের কাছে। জেলার যেখানেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, সেখানেই বিলাসপুরের ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
বিলাসপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পদ্মা নদীর তীরবর্তী। ওই এলাকায় জেগে ওঠা চরের জমি দখলে নেওয়া, পদ্মা নদীর নৌপথ নিয়ন্ত্রণ, বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ, মাছ শিকার নিয়ন্ত্রণ, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সহিংসতা হয়। বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কুদ্দুস ব্যাপারী এবং পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জলিল মাতবর দুটি বাহিনী গড়ে তুলেছেন। তাঁদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ আছে সাবেক সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক ও ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে।
ককটেল বানান পাচু খাঁরকান্দি এলাকার এমন একজনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তিনি তাঁর নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে তিনি কুদ্দুস ব্যাপারীর লোকজনকে ককটেল তৈরি করে দেন। ওই পক্ষের লোকজন গোলাবারুদ (বিস্ফোরক) এনে দেন। সেটা দিয়ে তিনি ককটেল তৈরি করেন। গোলাবারুদের সঙ্গে বাসমতী চাল, কাচ ভাঙা ও লোহার টুকরা ব্যবহার করেন। পরে এসব উপকরণ টিনের একটি কৌটায় ভরে তা স্কচটেপ দিয়ে মুড়িয়ে ককটেল বোমা তৈরি করেন। একেকটি অর্ডারে কমপক্ষে ৫০টি করে ককটেল তৈরি করা হয়। এর জন্য পারিশ্রমিক পান ২০ হাজার টাকা। গ্রামের নির্জন স্থানে, বাগানে, পদ্মা নদীর চরে বা নৌকায় বসে এ কাজ করেন।
শরীয়তপুরের জাজিরায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ। শনিবার সকালে বিলাসপুর ইউনিয়নের দূর্বাডাঙ্গা এলাকায়