দুই দশক আগে, রাশান বংশোদ্ভূত আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী আলেক্সি ইউরচাক প্রথম ‘হাইপারনরমালাইজেশন’ (অতিস্বাভাবিকীকরণ) পরিভাষাটি ব্যবহার করেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ দুই দশকের উদ্ভট ও পরাবাস্তব পরিস্থিতি বোঝাতে গিয়ে তিনি এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

নাগরিকেরা ও সরকারি লোকেরা সবাই জানতেন যে সোভিয়েত ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে এবং সেটা আর বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে পারে না। কিন্তু সবাই এমনভাবে চলতেন যেন কোথাও কোনো সমস্যা নেই।

বার্লিন প্রাচীর ভেঙে পড়বে অথবা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে অথবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গমের ওপর রাশিয়াকে নির্ভর করতে হবে—সেটা খুব কম লোকই তখন কল্পনা করতে পেরেছিলেন।

অতীতে ফিরে তাকালে, সোভিয়েত ব্যবস্থা কেন ভেঙে পড়েছিল, সেটা চিহ্নিত করা আমাদের সবার জন্যই সহজ।

কিন্তু ইসরায়েলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বোঝা কতটা সহজ। সম্প্রতি গাজায় ১৫ জন চিকিৎসাকর্মীকে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। একজন সেই ঘটনার মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন। ফলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যে বর্ণনা দিয়েছে, সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এখন বিশ্ব এ ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

আরও পড়ুনইসরায়েল হত্যা করে, মিথ্যা বলে, আর পশ্চিমা মিডিয়া তা বিশ্বাস করে০৮ এপ্রিল ২০২৫

যাহোক, এ ঘটনা ইসরায়েলে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ইসরায়েলের জনগণের মধ্যে এ ঘটনা খতিয়ে দেখার কোনো আগ্রহ নেই। তাদের কোনো নৈতিক আত্মদর্শন নেই। একমাত্র ব্যতিক্রম জিম্মিদের পরিবারের বেলায়। কিন্তু তারা শুধু তাদের প্রিয়জনদের কথায় বলছে। অথচ সেই মানুষগুলোর নামে গাজার ২০ লাখ মানুষের জীবনে যে প্রলয়ংকর দুর্দশা নেমে এসেছে, সেটা বেমালুম চেপে গেছে।

গাজায় চিকিৎসাকর্মীদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেটা আমাদের কোনো কাল্পনিক সিনেমার গল্প বলেই মনে হয়। ইসরায়েলি সমাজ এমনভাবে চলছে যেন এসব ঘটনা ভিনগ্রহে ঘটছে।

ইসরায়েলি একজন রাজনীতিবিদও এ ঘটনার নিন্দা জানাননি অথবা প্রশ্ন তোলেননি। ইসরায়েলি সমাজ একটা জ্ঞানীয় অসংগতি দশায় বাস করছে। বাস্তবতা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন।

গত বছর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইসরায়েলি শাখা গাজায় গণহত্যা নিয়ে সংস্থাটির নিজস্ব প্রতিবেদন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। অথচ গাজায় হামলা চালিয়ে ইসরায়েল ৫০ হাজার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। সেখানে ব্যাপকভাবে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।

ইসরায়েলে যখন প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ছে, তখন নেতানিয়াহু আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে মরিয়া। কয়েক দিন আগেই নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফর করে এসেছেন। সেই সফরে তিনি বারবার ইরানে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলের কৌশলগত স্বার্থে সিরিয়াকে ভাগ করে ফেলতে চাইছেন।

সহিংসতার প্রতি ইসরায়েলি সমাজের গ্রহণযোগ্যতা অতিস্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।

হাঙ্গেরি সফরের সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বুদাপেস্টের ইউনিভার্সিটি অব পাবলিক সার্ভিস সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। গণহত্যার স্থপতি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সমন জারি করা ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাওয়ার জন্য স্পষ্টতই যোগ্য ব্যক্তি! আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এমন একটি ইনস্টিটিউটে দাঁড়িয়ে তিনি ‘ডিপ স্টেটের’ ক্ষমতা নিয়ে ইসরায়েলের আমলাতন্ত্রকে আক্রমণ করেন।

ডিপ স্টেট পরিভাষাটি ১৯৯০-এর দশকে তুরস্কে প্রথম চালু হয় বলে মনে করা হয়। গণতান্ত্রিক কাঠামোর আড়ালে জেনারেল ও আমলাতন্ত্রের পদস্থ কর্মকর্তাদের গোপন নেটওয়ার্ক বোঝাতে এই পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। যাহোক, নেতানিয়াহু খুব ভালো করেই জানেন যে ইসরায়েলে ডিপ স্টেট বলে কিছু নেই। কারণ, এর প্রয়োজনই সেখানে নেই।

সেনাবাহিনী, পুলিশ ও উচ্চ আদালত—ইসরায়েলের এই তিনটি মূল প্রতিষ্ঠানের কথা ধরা যাক। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে একটা ওলট–পালট চলছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ব্যর্থতার পর বিশালসংখ্যক কমান্ডার হয় পদত্যাগ করেছেন অথবা তাঁদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

পুলিশ বাহিনীতে উগ্র ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভিরের প্রভাব খতিয়ে দেখছে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত।

উচ্চ আদালতকে মাঝেমধ্যেই বামপন্থী ও উদারপন্থী এজেন্ডা প্রচারের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু একেবারে মৌলিক প্রশ্ন যখন সামনে আছে, তখন উচ্চ আদালত কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা না করেই এর আইনি বৈধতা দেয়। উদাহরণ হিসেবে বিতর্কিত জাতি-রাষ্ট্র আইনের কথা বলা যায়। এ আইন পাসের কারণে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের চেয়ে ইহুদি নাগরিকদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়। এই আদালতই পশ্চিম তীরের বসতি স্থাপনকারীদের ভূমি দখলের বৈধতা দিয়েছে।

ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তারা পেশাগতভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মোজে দায়ান থেকে শুরু করে আইজ্যাক রবিন, অ্যারিয়েল শ্যারনসহ আরও অনেকে সামরিক বাহিনী থেকে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন।

নেতানিয়াহু যখন আমলাতন্ত্রকে ধমক দিচ্ছেন, তখন আবার তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠছে।

ইসরায়েলে যখন প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ছে, তখন নেতানিয়াহু আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে মরিয়া। কয়েক দিন আগেই নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফর করে এসেছেন। সেই সফরে তিনি বারবার ইরানে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলের কৌশলগত স্বার্থে সিরিয়াকে ভাগ করে ফেলতে চাইছেন।

বৈশ্বিক স্থিতিশীলতায় বিপজ্জনক হুমকি তৈরি হবে এই বিবেচনায় আরব বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তীব্র বিরোধিতা করে এলেও নেতানিয়াহু গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনার কথা বারবার বলে যাচ্ছেন।

ইসরায়েলে এখন যা কিছু ঘটছে, তার কোনোটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই উন্মাদনা অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে পারে না।

নেতানিয়াহুর বেপরোয়া আঞ্চলিক অভিযাত্রা শুধু মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করছে না, সেটা ইসরায়েলি সমাজকেও ভেতর থেকে ভেঙে ফেলছে।

আবেদ আবু শাহদেহ জাফার রাজনৈতিক কর্মী

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র র জন য এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্রদূতের প্রতারণার শিকার মেঘনা

মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমের পূর্বপরিচিত ব্যবসায়ী মো. দেওয়ান সমিরকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন। সমির সানজানা ম্যানপাওয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তারা মেঘনার মুক্তি এবং বিতর্কিত আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

এদিকে মেঘনা আলম সদ্য বিদায়ী সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের প্রতারণার শিকার বলে অভিযোগ করছেন তাঁর বাবা বদরুল আলম। শনিবার রাতে তিনি সমকালকে বলেন, ছয় মাস ধরে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর মেয়ের ঘনিষ্ঠতা। এর দুই-তিন মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে পরিচয়। ‘মিস বাংলাদেশ’ নামে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন মেঘনা। এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। এসব আয়োজনে বিশিষ্টজন, গুণী ব্যক্তিরা আসতেন। ঢাকায় সেই ধরনের একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনার প্রথম দেখা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সব জানেন। তিনি দু’জনকে সহযোগিতা করেন। এরপর মেঘনার সঙ্গে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা হয়। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কের প্রস্তাব দেন তিনি। এরপর বিয়ে করতে চান। গত ৪ ডিসেম্বর মেঘনা ও দুহাইলানের আংটি বদল হয়েছিল বলে দাবি করেন বদরুল। তবে এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তিনি।  

বদরুল বলেন, ‘মেঘনার বসুন্ধরার বাসায় আসা-যাওয়া ছিল রাষ্ট্রদূতের। সম্পর্কের এক পর্যায়ে মেঘনা জানতে পারে রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে রয়েছে। এরপর তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে। সে আংটি ফেরত দেয়। মেঘনা রাষ্ট্রদূতের দ্বিতীয় স্ত্রী হতে চায়নি। এক পর্যায়ে সৌদিদূতের স্ত্রীকে ঘটনাটি জানায় মেঘনা। এরপরই বিষয়টি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। রাষ্ট্রদূত ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। এক পর্যায়ে মেঘনা ফেসবুকে এ সম্পর্কে কিছু লেখা পোস্ট করে। তখন মেঘনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন দুহাইলান।’ 

মেঘনার বাবা আরও বলেন, প্রতারণার শিকার হয়েছে এটা জেনেও মেঘনা চেয়েছিল বিদায়ী রাষ্ট্রদূত তার কাছে এসে দুঃখ প্রকাশ করুক। কিন্তু সেটা করেননি তিনি। উল্টো বিনা অপরাধে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে বদরুল বলেন, ‘কেন আমার মেয়ে তাঁকে ফাঁসাবে। তাঁর কাছে টাকা চেয়েছে– এমন কোনো প্রমাণ আছে? যদি মেঘনা অন্যায় করত, তাহলে তার বিরুদ্ধে তো সুনির্দিষ্ট মামলা হতো। আইন সবার জন্য সমান। ন্যায়বিচার চাই। সরকার আমার মেয়ের নিরাপত্তা দেবে, এটা আমার দাবি।’ তিনি জানান, নর্থ সাউথে পড়াশোনার সময় বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে মেঘনা থাকতেন। সেখানে মাঝে মাঝে তিনি যেতেন। পরিবারের অন্যরা বেইলি রোডে থাকেন।  
গত বৃহস্পতিবার রাতে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিতর্কিত ধারায় প্রতিরোধ আটকাদেশে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি কাশিমপুর-২ নম্বর কারাগারে আছেন। বুধবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছেড়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত দুহাইলান। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদ্য বিদায়ী সৌদি রাষ্ট্রদূতের অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে মেঘনাকে আটক করেছে পুলিশ। একজন নারী তাঁর কাছ থেকে ‘আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য’ সম্পর্ককে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ ছিল তাঁর। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়। এটি তদারকির দায়িত্ব পালন করেন একজন বিশেষ সহকারী। তিনিই ডিবিকে ঘটনাটি জানান। এরপর রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনার যোগাযোগ থাকার বিষয়টি জানতে পারেন গোয়েন্দারা। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে মেঘনার পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেটি ব্যর্থ হলে তাঁকে আটক করা হয়। 

এদিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, নারীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে আসছেন আসামি দেওয়ান সমির। তাঁর বিরুদ্ধে সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেওয়ান সমিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত দেওয়ান সমিরকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়, আসামি গত জানুয়ারি থেকে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের কাছ থেকে টাকা আদায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হুমকির সম্মুখীন হয়।

কাশিমপুর-২ কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. আল মামুন সমকালকে বলেন, প্রতিরোধমূলক আটকাদেশের বন্দিদের বিশেষ কক্ষে রাখা হয়। মেঘনাও আলাদা কক্ষে আছেন। অন্যান্য বন্দির মতো তারা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় গোয়েন্দারা থাকেন। 

নিন্দা-প্রতিবাদ 
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক মেঘনা আলমের মুক্তিসহ এই আইন বিলোপের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। শনিবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। কমিটির পক্ষে এই বিবৃতি পাঠান সংগঠনের সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বিবৃতিতে মেঘনা আলমের আটকের ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের স্বৈরাচারী আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আগে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছেন। অথচ এই আইন ব্যবহার করেই সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের অন্যায় আচরণ ও প্রতারণা ঢাকতে একজন নারীকে বাড়িতে হামলা করে তুলে নিয়ে একে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে বহু গুম ও স্বেচ্ছাচারী আটকের ভিত্তি তৈরি করে নাগরিকের মানবাধিকারকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিল। জুলাইয়ে শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার পুনরায় ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। 

মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের আনা ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার’ অভিযোগকে বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্র যদি একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে নাগরিকের অধিকার হরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অবিলম্বে মেঘনা আলমের মুক্তি এবং এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

এদিকে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারী পক্ষ। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো নারীপক্ষের আন্দোলন সম্পাদক সাফিয়া আজীম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দ্রুত এই কালো আইন বাতিল, মেঘনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। যে বা যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মেঘনা আলমের ব্যক্তিগত বিষয়কে রাষ্ট্রীয় ইস্যু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও ব্যক্তিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত বাহিনী কখনোই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা কূটনৈতিক তোষণের যন্ত্র হতে পারে না। বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ