শুল্ক নিয়ে উত্তর আমেরিকার দ্বন্দ্ব বিশ্বকে কী বার্তা দেয়
Published: 12th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কারণে এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক আলোচিত শব্দ হয়ে উঠেছে ‘শুল্ক’।
হোয়াইট হাউস একের পর এক ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। সব আমদানি করা স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক, চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আর সারা বিশ্বের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর পাল্টা শুল্ক বসানোর হুমকি।
এই সিদ্ধান্তগুলো আন্তর্জাতিক মহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। প্রায় সব দেশই এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। কেউ কেউ পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু এ নীতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্র আসলে কী চায়, তা নিয়ে সবাই দ্বিধায়।
আরও অবাক করার বিষয় হলো, এই কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেরই সবচেয়ে কাছের দুই প্রতিবেশী—কানাডা ও মেক্সিকো। তাদের ওপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে, তা–ও কোনো ছাড় ব্যতিরেকেই।
প্রশ্ন ওঠে, দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী সহযোগিতার সম্পর্ক গেল কোথায় এবং রাজনীতিবিদেরা যেভাবে বলছেন, এই শুল্ক কি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে?
সোজা কথায় উত্তর, একেবারেই না।
তিন দেশ মিলে গড়া অংশীদারত্ব ভেঙে পড়ছেকয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে গড়ে উঠেছিল শক্তিশালী এক ত্রিপক্ষীয় অংশীদারত্ব। এর মধ্য দিয়ে তিন দেশের অর্থনীতি এমনভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল যে একসঙ্গে তারা টেকসই উন্নয়ন আর প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।
এর সপক্ষে কিছু প্রমাণ দেখা যাক। ২০২৪ সালে মেক্সিকোর রপ্তানির ৮০ শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। শুধু বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৩০ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল আমেরিকার মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ—একটি রেকর্ড।
কানাডার ক্ষেত্রেও চিত্রটা প্রায় একই। তাদের ৭৫ শতাংশ রপ্তানি গেছে দক্ষিণে—যুক্তরাষ্ট্রে। যার বড় অংশ ছিল তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ১৮ শতাংশ গেছে কানাডায়।
এই আন্তনির্ভরশীলতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে গাড়িশিল্প। এটি প্রথমে গড়ে ওঠে নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের (নাফটা) মাধ্যমে। পরে আরও গভীর হয় ইউএসএমসিএ চুক্তির আওতায়। তিন দেশের এই গাড়িশিল্প এমনভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত যে একটি গাড়ির যন্ত্রাংশ একাধিকবার সীমানা পেরিয়ে যায় চূড়ান্তভাবে তৈরি হওয়ার আগে।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে মেক্সিকো রেকর্ড ৪০ লাখ হালকা যানবাহন তৈরি করেছে। এর বেশির ভাগই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। শুধু জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো থেকে ৮৭ বিলিয়ন ডলারের গাড়ি ও ৬৪ বিলিয়ন ডলারের যন্ত্রাংশ আমদানি করেছে। একই বছরে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানি করেছে।
সহজভাবে বললে, কানাডার প্রাকৃতিক সম্পদ, মেক্সিকোর শ্রম এবং আমেরিকার পুঁজি ও প্রযুক্তি সমান সমান উত্তর আমেরিকার সাফল্যের অর্থনৈতিক সূত্র।
‘শুধুই আমেরিকা’এই পারস্পরিক উপকারিতার সম্পর্কে যেসব পক্ষের লাভ হয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র মনে হচ্ছে এই সম্পর্কগুলো ভাঙতে চায়। না হলে আমেরিকা কেন এখন ‘আমাদের টাকা ফিরিয়ে আনব’ নামে জনতুষ্টিবাদ স্লোগান দিচ্ছে?
তবে এটি বাস্তবিকভাবে ভুল এবং নৈতিকভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ। কানাডার একটি থিঙ্কট্যাংক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ২৫ শতাংশ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কানাডায় রপ্তানি ৫-৮ শতাংশ কমে যেতে পারে। আর কানাডার যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি ১০-১৫ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। যদিও এই সংখ্যাগুলো কিন্তু নিছক কিছু হিসাবমাত্র নয়। এর বাস্তব প্রভাব সরাসরি সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে। সীমান্তপারের বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল কারখানাগুলো যখন অর্ডার কম পায়, তখন কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়।
চলমান শুল্ক বিরোধের প্রভাব শুধু উত্তর আমেরিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সরাসরি ক্ষতি তো এতে হবেই। সেই সঙ্গে শুল্ক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পূর্বানুমানযোগ্যতাকে দুর্বল করে দেয়। দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতামূলকতা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
উত্তর আমেরিকায় তিনটি দেশের মধ্যে ৩০ বছরের পরিশ্রমে গড়ে উঠেছিল একটি বাণিজ্যিক সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ভেঙে গেল। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক প্রতিশ্রুতির কী হবে? যুক্তরাষ্ট্রকে কি আর নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে বিশ্বাস করা যাবে। পৃথিবী কি এখন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ আর ‘শুধুই আমেরিকা’ নীতির বাস্তবায়ন দেখতে হাত–পা গুটিয়ে বসে থাকবে?
বিশ্ব তাকিয়ে আছেআন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্যনীতিগুলোর দিকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। বোঝার চেষ্টা করছে, আমেরিকার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী। আমেরিকার প্রতিটি শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে আসলে একটি বিপরীত বাস্তবতা প্রকাশ পাচ্ছে। আমেরিকা যত এই শুল্ক বাড়ানোর মতো হাতিয়ার ব্যবহার বাড়াচ্ছে, ততই সে দুনিয়াজুড়ে তার সঙ্গে কারবার করা দেশগুলোর আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। এই আস্থা ছাড়া অর্থপূর্ণ বহুপক্ষীয় কোনো সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় না। কোনো সমস্যার সমাধানও করা যায় না।
আমেরিকা এক আত্মঘাতী চক্রে পড়তে যাচ্ছে। সাময়িক এই শুল্ক বাড়ানোর কৌশল আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদি বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ফলে আমেরিকার মিত্রসহ অন্যান্য দেশ প্রশ্ন করতে শুরু করছে, আমেরিকা কি তাহলে সুদূরপ্রসারী আন্তর্জাতিকতার বদলে সংকীর্ণ ‘আমিই আগে’ নীতি বেছে নিল?
যখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি তার নিজস্ব স্বার্থকে সাধারণ কল্যাণের ওপর অগ্রাধিকার দেয়, তখন তার প্রভাব সীমান্ত ও প্রজন্ম পার হয়ে চলে যায়। এই কারণেই পৃথিবীজুড়ে দেশগুলো উত্তর আমেরিকার বাণিজ্যবিরোধগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। আজকের বিশ্ব খুব ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। টেকসই সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে শুধু জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনা দিয়ে হবে না। এর জন্য দরকার আরও ব্যাপক কিছু।
‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসো’, এই প্রাচীন আপ্তবাক্য অর্থনৈতিক বাস্তবতার জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ এক সত্য।
শিন পিং চীনা সাংবাদিক
পিপলস ডেইলি অনলাইন থেকে নেওয়া ইংরজির অনুবাদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র ক র র ওপর সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
অন্নপূর্ণায় বাংলাদেশ
বাবর আলী। ৭ এপ্রিল নেপালের স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ১০টায় ৮ হাজার ৯১ মিটার উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১ পর্বতের চূড়ায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে উড়ান লাল-সবুজের পতাকা। প্রতি মুহূর্তে তুষারধস আর ওপর থেকে পাথর পড়ার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে অভিযানে পা বাড়ানো এই অভিযাত্রী পথেই দু’জন শেরপার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছেন। তবু ছুটে চলেছেন স্বপ্নের পথে। ছুয়েছেন অন্নপূর্ণা ১-এর চূড়া। গাইড ফুর্বা অংগেল শেরপাকে নিয়ে স্বপ্ন জয় করা এবং অনিশ্চয়তায় ভরা এই অভিযাত্রার কথা লিখেছেন সারোয়ার সুমন
বাবর আলীর বয়স ৩৪। পেশায় চিকিৎসক হলেও নেশায় পর্বতপ্রেমী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন এমবিবিএস। চিকিৎসায় পেশা শুরু করলেও মন বসেনি সেখানে। তাই চাকরি ছেড়ে আজন্ম লালিত স্বপ্নজয়ের পথ বেছে নেন। একে একে ছুটে চলছেন স্বপ্নজয়ের চূড়ায়। সেই ধারাবাহিকতায় এভারেস্টের পর ৭ এপ্রিল ৮ হাজার ৯১ মিটার উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১ শৃঙ্গ জয় করে সাফল্যের মুকুটে যুক্ত করেছেন গৌরবের নতুন পালক। ভয়ংকর বিপজ্জনক এ পর্বতের চূড়ায় ওঠা প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন বাবর। মাত্র এক বছর আগে ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে বাবর আলী জয় করেছিলেন এভারেস্ট। একই অভিযানে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জয় করেছিলেন আরেক পর্বত লোৎসেও।
মিশন অন্নপূর্ণা-১
অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, ‘উচ্চতার দিক থেকে অন্নপূর্ণা-১ বিশ্বের দশম পর্বত। মৃত্যুর হার বিবেচনায় এটি বিশ্বের অন্যতম ‘বিপজ্জনক পর্বত’ হিসেবে পরিচিত। এই দুর্গম অন্নপূর্ণা-১ পর্বতকে জয় করতে গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশ থেকে নেপালের পথে পা বাড়ান বাবর আলী। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে কাঠমান্ডু থেকে পোখারা হয়ে ২৮ মার্চ পৌঁছান অন্নপূর্ণা বেইজ ক্যাম্পে। সেখানে একদিন বিশ্রাম নেন। এরপর উচ্চতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে ক্যাম্প-১ এ (৫২০০ মিটার) দুই রাত এবং ক্যাম্প ২-এ (৫৭০০ মিটার) এক রাত কাটিয়ে আবার ২ এপ্রিল নেমে আসেন বেইজ ক্যাম্পে। গত ৭ এপ্রিল সকালে তিনি পর্বতশৃঙ্গে পৌঁছান। ৮ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় নিরাপদে ফেরেন বেইজ ক্যাম্পে। সেখানে বাবরের সঙ্গে ছিলেন গাইড ফুর্বা অংগেল শেরপা।’
লাল-সবুজের পতাকা হাতে
হলুদ রঙের জ্যাকেটে মোড়া বাবর আলীর পেছনে ধবধবে সাদা বরফ। সামনে কালো রঙের একটি ব্যাগ। তার পাশে লাল-সবুজের পতাকা হাতে বসে আছেন তিনি। চোখে রোদচশমা। মুখে লেগে আছে চির চেনা সেই হাসি। ৮ হাজার ৯১ মিটার উচ্চতার পর্বত অন্নপূর্ণা-১ এর চূড়ায় ওঠা বাবর আলীর এমন একটি ছবি অনলাইনে প্রকাশ করে ভার্টিকাল ড্রিমারস। বাবরের স্বপ্নের সারথি এই প্রতিষ্ঠান। বিপজ্জনক অন্নপূর্ণা-১ এর চূড়া বাবর জয় করেছেন সোমবারে। মঙ্গলবার নিরাপদে ফিরেছেন তিনি বেইজ ক্যাম্পেও। সেই তথ্য তুলে ধরে ভার্টিকাল ড্রিমারস লিখেছে– ‘সেই মাহেন্দ্রক্ষণের ছবি, সেই গর্বের লাল-সবুজ হাতের ছবি; যার জন্য এত অপেক্ষা।’
শীর্ষে পৌঁছাতে ১৭ ঘণ্টা
বেইজ ক্যাম্পে তোলা ছবি দিয়ে ১০ এপ্রিল নিজের ফেসবুক ওয়ালে বাবর আলী লিখেন–‘অবাক করার এক অভিযান শেষে, পোখারায় পৌঁছেছি। গত ১৭ দিন ধরে, আমি একটা বিভ্রমের মধ্যে ছিলাম! অন্নপূর্ণা-১ আমার শক্তির প্রতিটি অংশ পরীক্ষা করেছে। আমি জানতাম এটি কঠিন হবে। কখনও ভাবিনি অন্নপূর্ণা-১ আমাকে এবং এর ঢাল হিসেবে সবাইকে এভাবে পরীক্ষা করবে! ক্যাম্প ২ এবং ৩ এর মধ্যে মহান কোলোয়ার সবার শ্বাস কেড়ে নিয়েছে। ক্যাম্প ৩-এর ওপরে খাড়া ঢালগুলো একের পর এক দুঃস্বপ্ন ছিল। একবারে প্রায় ১৭০০ মিটার আরোহণ করা কোনো রসিকতার বিষয় ছিল না। শীর্ষে পৌঁছতে ১৭ ঘণ্টা লেগেছে। মোট সামিটের বিড ছিল ২৬ ঘণ্টা! আমার জীবনের দীর্ঘতম সময়। ফেরার পথে পায়ে পাথরের আঘাত পেলাম। সহকর্মী পর্বতারোহী আমার চোখের সামনে তুষারপাত দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। এটি তার আত্মবিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। যাই হোক, ধন্যবাদ সবাইকে আমাকে আপনাদের প্রার্থনায় রাখার জন্য।
উচ্ছ্বসিত পরিবার
বাবর আলীর অন্নপূর্ণা-১ জয়ের খবরে উচ্ছ্বসিত তাঁর বাবা লিয়াকত আলী ও মা লুৎফুন্নাহার বেগম। লিয়াকত আলী সাহসকে বলেন, ‘পর্বত জয় করতে ভালোবাসে আমার ছেলে। এভারেস্ট ও লোৎসে জয়ের পর এবার অন্নপূর্ণা-১ নামে আরেকটি পর্বত জয় করেছে সে। তার আগে নাকি এই পর্বতে যেতে পারেনি অন্য কোনো বাংলাদেশি। তাই আমরা আনন্দিত।’ বাবরের মা লুৎফুন্নাহার বলেন, ‘বাবর খুবই মেধাবী ছাত্র। চিকিৎসক হিসেবে পেশা শুরু করলেও তার নেশা ছিল ভ্রমণ। তাই পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায় সে। গত কয়েকদিন অনেক চিন্তা আর উৎকণ্ঠায় ছিলাম। এখন সেই চিন্তা কিছুটা কমেছে। তারপরও আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। কারণ, বাবর এখনও ফিরে আসেনি আমার বুকে।’
ইতিহাসের খোঁজে
বাবরের আগে ২০১১ ও ২০১২ সালে দু’বার এভারেস্ট জয় করেন এম এ মুহিত। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ মে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন নিশাত মজুমদার। একই মাসের ২৬ মে ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন এভারেস্ট। ২০১৩ সালের ২০ মে এভারেস্ট জয় করে নামার পথে মারা যান সজল খালেদ, যিনি পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে পর্বতজয় করেছিলেন। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পর গত ১১ বছরে আর কোনো বাংলাদেশি এভারেস্টের পথ মাড়াননি। ১১ বছর পর ২০২৪ সালে বাবরের হাত ধরে ফের লাল-সবুজের পতাকা উড়েছে এভারেস্টের বুকে। তবে অন্নপূর্ণা-১ জয় করে এবারে প্রথম বাংলাদেশি হওয়ার গৌরবটা নিজের করে নিয়েছেন বাবর আলী। একই অভিযানে মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসের চূড়ায় উঠতে পারেননি কোনো বাংলাদেশি। এভারেস্টের সঙ্গে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ পর্বতশৃঙ্গ ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার লোৎসেও শেষ পর্যন্ত স্পর্শ করেন বাবর আলী। যেখানে এখনও পর্যন্ত পদচিহ্ন পড়েনি কোনো বাংলাদেশির।
জীবনের পাঠ
বাবর আলী বলেন, ‘অন্নপূর্ণা ১-এর ক্যাম্প ২ ও ৩-এর পথ অনিশ্চয়তায় ভরা। সেখানে প্রতি মুহূর্তে তুষারধস আর ওপর থেকে পাথর পড়ার ঝুঁকি থাকে। আমার অভিযানের সময় দুইজন শেরপার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। ঝুঁকি বিবেচনায় অন্নপূর্ণা-১-কে আমি ১০-এ ১০ দেব; যেখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টকে দেব ১০-এ দুই, আর লোৎসের ক্ষেত্রে ১০-এ চার। আসলে এটি সত্যিই “মাউন্টেনিয়ারস মাউন্টেইন”, যা সবকিছুকে চ্যালেঞ্জ করে।’ বাবর আলী আরও বলেন, ‘মানুষ ইতোমধ্যে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করেছে যে, এরপর পা বাড়াবেন কোন পথে? আমি বলতে চাই, এখানেই শেষ নয়; প্রত্যেক নারী এবং পুরুষের জীবনে অন্য অন্নপূর্ণাও রয়েছে!’
বাবর আলীর দেখানো পথ ধরে আমরা জীবনের অন্নপূর্ণ জয় করার পথে হাঁটি; চলুন!