ভারতে ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইন বাতিলের দাবিতে আজ শনিবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ। এ সময় সহিংসতায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ওয়াক্‌ফ (সংশোধনী) আইন কার্যকর করা হবে না। এরপরও আন্দোলনকারীরা মুর্শিদাবাদে রাজপথ ছাড়ছেন না।

গতকাল থেকে মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান, সামসেরগঞ্জ, রতনপুর, জঙ্গিপুর, সূতি, হিজলতলাসহ বিভিন্ন জায়গায় বোমাবাজি, বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেলের রিলে রুম, রেলগেটে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের প্রতাপগঞ্জে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার পুলিশের গুলিতে আহত এক কিশোর আজ শনিবার মারা গেছে। মুর্শিদাবাদে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

মুর্শিদাবাদে সহিংসতার ঘটনায় অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য আজ জরুরি ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা করেছেন রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ আজ বিকেলে মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের নির্দেশ দেন। এর আগে অবশ্য আজ মুর্শিদাবাদে বিএসএফ ও র‌্যাফ নামানো হয়েছে।

তৃণমূলের মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবির এ ঘটনার জন্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন। বলেছেন, পুলিশ সচেষ্ট থাকলে মুর্শিদাবাদে এ ঘটনা ঘটত না। এ সংঘর্ষে নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজনকে ঢোকানো হয়েছে।

অন্যদিকে কংগ্রেসের সাবেক রাজ্য সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই রাজ্যের। তিনি মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ে অবিলম্বে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছেন।

রাজ্যের বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, পুলিশ ব্যর্থ হয়ে পড়ায় এই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবিলম্বে রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হোক।

আর বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, মুর্শিদাবাদের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর হাতে তুলে দেওয়া হোক।

রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক রাজীব কুমার সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এখানে গুন্ডাবাজি বরদাশত করা হবে না।

অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব পক্ষকে সংযত থাকার বার্তা দিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘মানবিক হতে পারাটাও জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’

ক্লাউডিয়া শিফার। জার্মান সুপারমডেল। কিংবদন্তি এই মডেলের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক

দীর্ঘদিন ধরে আমার মনে হয়ে আসছে, কোনো একটা ভুল করে ফেলেছি জীবনে! মনে পড়ে, ১৯৯৯ সালের কথা। আমেরিকান ফিল্মমেকার জেমস টোব্যাক তখন তাঁর ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ সিনেমাটিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাব পেয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। তার জন্য তো কিছুই করতে পারব না আমি। অভিনয় তো আমার লক্ষ্য ছিল না। রাজনীতিও আমার লক্ষ্য নয়। ফলে এ দুটি মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারি না কখনোই।
 
অজান্তে রাজনীতিতে
তবু মাঝে মধ্যে ভাবি, এই যে এত এত শিশু মরে যাচ্ছে আফ্রিকায়; আমার নিশ্চয়ই কিছু করার আছে। নিজেকে সান্ত্বনা দিই: না, এটি অত বেশি রাজনৈতিক বিষয় নয়; বরং একটু আন্তরিক প্রচেষ্টা এমন মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে পারবে পৃথিবীকে। ফলে অজান্তে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম আমি! সরাসরি নয় যদিও। বরং আফ্রিকার শিশুদের নিজের সন্তান মনে হওয়ায়, এমন কাজে নিয়োজিত জার্মান রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে করতে শুরু করলাম আলোচনা। কেননা, মানুষ হিসেবে এতটুকু দায়িত্ব আমাকে নিতে হতো।

বড় করে শ্বাস নিই
ছোটবেলায় খুব লাজুক ছিলাম আমি। যেখানে যেতাম, সঙ্গে থাকত প্রিয় বান্ধবীর দল। ফটো স্টুডিওতে গিয়ে মুখ ফুটে একটা শব্দও বলতাম না আমি। যখন কেউ কথা বলতে আসত, লজ্জায় চোখ-মুখ লাল হয়ে যেত। তবে এক্ষেত্রে মেকআপ আমাকে অনেক বাঁচিয়েছে বলা যায়! ফলে চোখ-মুখের এ পরিবর্তন ঠিকঠাক নজরে পড়েনি কারও। এখনও, যখন কোথাও যাই, নজরে পড়ে ফটোগ্রাফারদের ব্যস্ততা। তখন খুব বড় করে শ্বাস নিই; তাতে এক ধরনের স্বস্তি অনুভব হয় আমার। তখন বলি, তাড়াতাড়ি ছবি তুলুন; আমার তাড়া আছে!

নিজেকে প্রস্তুত করতে...
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মডেলিং সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা ছিল না। এ মাধ্যমে যে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব ভাবিনি এমনটাও। প্রথম দিকে স্রেফ পরিকল্পনা ছিল, নিজেকে আরেকটু ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য প্যারিসে পাড়ি জমানো। মডেলিংয়ের দুনিয়ায় নিজেকে জড়িয়ে নেওয়া আমি কোনোদিনই এমন পোশাক পরিনি, যেটি আমাকে অস্বস্তি দিতে পারে। ব্যক্তিজীবনে সাধারণত মেকআপ এড়িয়ে যেতে ভালোবাসি। দীর্ঘ একটি সময় এ পেশায় থেকে দেখেছি, মডেলিংয়ের বাজারটি প্রতিনিয়ত বড় হয়ে উঠছে। অনেক ধরনের ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে এ মাধ্যমে। তাতে আমার নিজেরও, সামান্য হলেও অবদান রয়েছে ভাবতে আনন্দ হয়।

যার মাধ্যমে বদলে যেতে পারে ভাগ্য
মডেলিং দুনিয়ায় যারা কাজ করতে আগ্রহী, অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, একটি ভালো ফটোগ্রাফই খুলে দিতে পারে আপনার ভাগ্য। মনে রাখুন, ছবিতে যথাযোগ্য আবেগ ফুটিয়ে তুলতে পারা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় গুণ। যে ছবি দেখে যে কারও মনে ভালো, খুব ভালো একটি অনুভূতি তৈরি হবে সেটিকে আমি সে ছবির মডেলের সেরা অর্জন বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে দক্ষ কোনো ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় সঁপে দিন নিজেকে। রাখুন আস্থা। করুন পরিশ্রম। দেখবেন, তার তোলা ছবিগুলো আপনাকে একটি নতুন দুনিয়ার সন্ধান দেবে। সেই ফটোগ্রাফার সিলেকশনটাও হতে হবে যথাযোগ্য। এই ক্ষেত্রে কেউ এসে আপনাকে বলে দেবে না। নিজের মেধা দিয়ে সেরা ফটোগ্রাফারকে খুঁজে বের করতে হবে। কিংবা আপনার জন্য যে ফটোগ্রাফার সেরা তাকে বের করে আনতে হবে। তবেই দুনিয়া আপনাকে চিনবে নতুন করে। আপনিও উড়ে বেড়াতে পারবেন স্বপ্নের আকাশে! 

সম্পর্কিত নিবন্ধ