কিশোরগঞ্জ শহরের আলোচিত পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। শনিবার এতে ২৮ বস্তা টাকাসহ শত শত চিরকুট পাওয়া যায়। এসব চিরকুটে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রত্যাশার কথা রয়েছে।

দুটি চিরকুট অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে। এর একটিতে লেখা– ‘ড. ইউনূস স্যারকে আরও ৫ বছর চাই’। এটি দানবাক্সে ফেলা হয়েছে ‘সাধারণ জনগণ’র পক্ষ থেকে। অন্যটিতে লেখা– ‘পাগলা চাচা, শেখ হাসিনা কোথায়’। এ চিরকুটে লেখকের নাম নেই। তবে ব্যঙ্গ করে এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

দানবাক্সে পাওয়া চিরকুটগুলো প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাউকে ধরতে দেন না। বিভিন্ন সময় মসজিদে আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে দানবাক্সে কোনো ধরনের চিরকুট না ফেলতে মাইকে অনুরোধ জানায় কর্তৃপক্ষ। এখন চিরকুটের সংখ্যা কমলেও, একেবারে বন্ধ হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, পাগলা মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়। এ কারণে তাঁরা টাকা-পয়সা ও অলংকার দান করেন। অন্য ধর্মের মানুষও এখানে দান করে থাকেন।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক জেসমিন আক্তারের তত্ত্বাবধানে সকালে বাক্সগুলো খোলা হয়। গণনা শেষে সন্ধ্যায় জানানো হয়, এবার ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা পাওয়া গেছে। কিছু বিদেশি মুদ্রা ও অলংকার পাওয়া গেছে। সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর ১১ দানবাক্সে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান প্রমুখ।

জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, চিরকুট বা চিঠি কাউকে দেখানো হয় না। কারণ এগুলো প্রচার হলে মানুষের মাঝে মসজিদ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়।

তিনি জানান, দানবাক্সের টাকা রূপালী ব্যাংকে রাখা হয়। লভ্যাংশ থেকে অসহায় জটিল রোগীদের অনুদান দেওয়া হয়। মসজিদ কমপ্লেক্স মাদ্রাসার এতিম ছাত্রের খরচসহ মসজিদ পরিচালনার ব্যয় মেটানো হয়। জমানো অর্থে পুরুষ ও নারীদের নামাজের জন্য নতুন দুটি শেড নির্মাণ করা হবে। মসজিদ কমপ্লেক্স সম্প্রসারণের কাজও করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ দ নবক স মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

বন্ধ হউক সংস্কৃতির উপর খবরদারি

প্রতি বৎসরের ন্যায় এইবারও রাজধানীতে বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হইতে যাইতেছে। উপরন্তু, অন্তর্বর্তী সরকার রাজধানীতে এইবারের শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করিয়া এক ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ আয়োজনের প্রস্তুতি লইতেছে। বিশেষত ইহাতে বাঙালির পাশাপাশি পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের বিশেষ উপস্থিতি ঘটাইবার চেষ্টা চলিতেছে। স্বাভাবিকভাবেই সর্বমহল উক্ত সরকারি প্রয়াসের প্রশংসা করিতেছে। তবে দুঃখজনকভাবে, এইবারের বাংলা বর্ষবরণও যেন বিতর্ক এড়াইতে পারিতেছে না। বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়াছে পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আয়োজিত শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন ঘিরিয়া। শনিবার প্রকাশিত সমকালের সংবাদ অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত অনুষদের ডিনের ঘোষণা অনুসারে মঙ্গল শোভাযাত্রার নূতন নাম হইতেছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হইতে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান– সর্বত্র ইহা লইয়া চলিতেছে আলোচনা-সমালোচনা। শুধু উহা নহে, প্রতিবেদন অনুসারে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি হিসাবে নানা আকারের মুখোশ, মাটির সরায় রঙের আঁচড় বসাইতে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী বরাবরের ন্যায় ব্যস্ত থাকিলেও বিগত বৎসরসমূহের তুলনায় এইবারের শোভাযাত্রার প্রস্তুতির রং যেন কিছুটা মলিন; কারণ চারুকলা প্রাঙ্গণে নাই সেই চিরচেনা জমজমাট কর্মযজ্ঞ ও প্রাণের উচ্ছ্বাস। একই চিত্র যদি বর্ষবরণের শোভাযাত্রায়ও দেখা যায়, তাহা হইলে ইহা হইবে অতীব হতাশাজনক।

আমরা জানি, মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয় ১৯৮৫ সালের পহেলা বৈশাখে যশোরে। তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসনবিরোধী সংগ্রামের অংশ হিসাবে অশুভের বিরুদ্ধে শুভশক্তির জয় কামনাই ছিল উক্ত আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। উহাতে লোকজ সংস্কৃতির নানা মোটিফ ব্যবহৃত হয় মানুষের মধ্যে মাতৃভূমির প্রতি প্রেম জাগাইবার জন্য। একই উদ্দেশ্যে ১৯৮৯ সালে বাংলা বর্ষবরণের অংশ হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ হইতে অনুরূপ শোভাযাত্রা বাহির হয়, যদিও তখন ইহার নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে দেশ স্বৈরশাসকমুক্ত হইলে নূতন প্রেক্ষাপটে এবং শোভাযাত্রার মূল লক্ষ্যের সহিত সংগতি বিধানে ইহার নাম হইয়া যায় মঙ্গল শোভাযাত্রা। তখনও দেশে দৃশ্যমান অশুভ শক্তি ছিল, যাহারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী তো বটেই, ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়াইয়া জনগণকে বিভাজিত করিবার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। সরকার বা কোনো করপোরেট সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা ব্যতিরেকে সাধারণ মানুষের দান-অনুদানে এবং অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত নানা মোটিফ, বাঁশি, ঢোল ইত্যাদি সরঞ্জাম বিক্রয়লব্ধ অর্থের উপর ভিত্তি করিয়া চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীই এতদিন ইহার সকল কাজ সম্পন্ন করিয়া আসিয়াছেন। অর্থাৎ সম্পূর্ণ জনসাধারণনির্ভর এই আয়োজন স্বতঃস্ফূর্ত উৎসবের অনন্য এক নিদর্শন হইয়া দাঁড়ায়। এই কারণে উক্ত শোভাযাত্রা লইয়া বিশেষত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতি সক্রিয়তাকে নাগরিক মহল একটা সম্পূর্ণ নাগরিক উদ্যোগে সরকারি হস্তক্ষেপ হিসাবে দেখিতেছে। শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করিলেও ইহার অবতারণা কিন্তু সংস্কৃত মন্ত্রণালয় করিয়াছে, যাহা তাহাদের এখতিয়ারবহির্ভূত। ‘মঙ্গল’ শব্দটি লইয়া আপত্তির ভিত্তিও খুব দুর্বল। আর মঙ্গলের স্থলে আনন্দ শব্দটি কোন আলাদা ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে? উভয়েই তো সংস্কৃতজাত এবং বাঙালির জীবনে নিবিড়ভাবে জড়িত, কোনো অজুহাতেই ইহাদের বর্জনের সুযোগ নাই। হ্যাঁ, মঙ্গল শব্দটি বলিলে অমঙ্গলেরও একটা ধারণা শ্রোতার মনে জাগে। আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় অমঙ্গলের প্রতীক বলিয়া কোন অপশক্তিকে চিহ্নিত করা হইত, তাহার কথা তো পূর্বেই বলা হইয়াছে। সম্ভবত শব্দটির ব্যাপারে আপত্তি সেই কারণে।

অন্ধ হইলে যদ্রূপ প্রলয় বন্ধ হয় না, তদ্রূপ মঙ্গল শব্দটি নিষিদ্ধ করিলেও সমাজ হইতে অমঙ্গলের শক্তি উধাও হইয়া যাইবে না। স্মরণে রাখিতে হইবে, বর্তমানে মঙ্গল শোভাযাত্রা সমগ্র দেশে তো বটেই, দেশের বাহিরেও পহেলা বৈশাখের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক আয়োজনে পরিণত হইয়াছে– যাহা আক্ষরিক অর্থেই বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। এই কারণে ইউনেস্কো ২০১৬ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করিয়াছে। সংস্কৃতির উপর খবরদারি কোনো দিন কাহারও জন্যই ভালো কিছু বহিয়া আনে নাই। সংশ্লিষ্ট সকলে বিষয়টি দ্রুত অনুধাবন করিবেন, ইহাই প্রত্যাশা আমাদের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ