ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি
Published: 12th, April 2025 GMT
পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য নির্মাণাধীন ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও ছাত্রদল।
শনিবার (১২ এপ্রিল) পৃথক বিবৃতিতে সংগঠন দুইটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শোভাযাত্রার মোটিফ পোড়ানোর ঘটনা প্রমাণ করে, এতবড় একটি আয়োজনকে কেন্দ্র করে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বর্ষ বরণের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো সক্রিয় এবং জোরদার করতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।
আরো পড়ুন:
মার্চ ফর গাজা: মজলুমদের পাশে থাকার আহ্বান ঢাবি উপাচার্যের
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে জনসমাগম ঢাবিতে
নেতৃবৃন্দ বলেন, সাধারণত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান প্রতিবছর চারুকলার নির্দিষ্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সম্মিলিত উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু এবার আয়োজনের শুরু থেকেই চারুকলার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করার ঘটনা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ঐতিহাসিক এই র্যালিটির নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও কারো মতামত নেওয়া হয়নি। অথচ সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী এবং ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোকে আরো যত্নের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার ছিল।
আয়োজনের শুরু থেকেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার নগ্ন হস্তক্ষেপও লক্ষণীয়– যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন এবং বৈশাখ উদযাপনের যে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে বৈশাখ উদযাপনকে কেন্দ্র করে নানাভাবে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ আমরা লক্ষ্য করেছি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।
সন্ধ্যায় দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ছাত্রদলে পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’- প্রতিপাদ্যে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার অংশ হিসেবে নানা ধরনের প্রতিকৃতি তৈরির কাজে যুক্ত আছেন চারুকলা অনুষদের সম্মানিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।
বিগত কিছুদিন যাবৎ আনন্দমুখর পরিবেশে এ কার্যক্রম চলমান থাকলেও শনিবার ভোর ৫টার দিকে কতিপয় দুর্বৃত্ত ঢাবির চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নির্মিতব্য ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রার প্রতিকৃতিতে অগ্নিসংযোগ করেছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, এ ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ঢাবির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা এবং ক্যাম্পাসে ফ্যাসিস্ট মুক্ত পদচারণার বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদল এর আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এখন সেটার সত্যতা প্রমাণ করে সবার কাছে একটি ভয়াবহ বার্তা দিয়ে গেল।
দুঃখজনকভাবে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এবং বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলের বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলাকারীরা এখনো আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত নিয়ে অনলাইনে ও বাস্তবে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা ও আইন লঙ্ঘনকারী কার্যক্রমে জড়িত হচ্ছে। এসব ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে চরম উদাসীনতা রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে দ্রুত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ঢাবিতে পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন স্বাক্ষর করেছেন।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল চ র কল র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ছড়া কবিতা
খোরশেদ আলম নয়ন
প্রিয় বৈশাখ
শুকনো পাতায় ছাওয়া-আমাদের ঘর
এই গড়ে-এই ভাঙে-বৈশাখী ঝড়
মেঘনার কালো জল ঢেউ ওঠে কূলে
ঘাটে বাঁধা ডিঙি নাও কেঁপে ওঠে দুলে।
আমের বনের ছায়ে-জাগে কোলাহল
হঠাৎ বৃষ্টি এসে এক হাঁটু জল
বৈশাখে ছিলো ঝড়-বোশেখ মেলা
ছিলো আরো দুরন্ত কিশোর বেলা।
দিদির আঁচলে ঘেরা-নিবিড় মায়া
ছিলো মেঘনার তীর-বটের ছায়া,
ভাটির দেশের নাও-মাটির পুতুল
বারোয়ারি মেলা জুড়ে-কাগজের ফুল।
হাতের রঙিন চুড়ি-পায়ের নূপুর
‘বউ কথা কও’ ডাকা উদাস দুপুর
বোশেখ দিনের সেই-স্বপ্নমধুর-
মেলায় কেনা বাঁশি-খুঁজে আজো সুর।
নাগরদোলায় দোলা-স্বপ্নিল দিন
ছিলো চির মধুময় স্মৃতি অমলিন।
সবুজ প্রান্ত ছুঁয়ে যতো দূর যাই
শ্যামল এ বাংলার রূপ খুঁজে পাই।
পুরাতন গ্লানি মুছে-নতুনের ডাক
নিয়ে আসে বার বার প্রিয় বৈশাখ।
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
বোশেখের পয়লা
রাত শেষে ভোর হলো
জেগে ওঠো সকলে
আসলের মাঝে ঠাঁই
পাবে না তো নকলে।
দীদা হেসে কাছে আসে
মুখে সুর শোলক
তাক ডুম তাক বাজে
নতুনের ঢোলক।
পাক ঘরে মা রাঁধেন
কী স্বাদের পাঁচন!
চিড়া মুড়ি নাড়ু ক্ষির
আনন্দ নাচন।
মুছে যাক ঘুচে যাক
যত ভুল ময়লা
নব রূপে এলো আজ
বোশেখের পয়লা।
আলমগীর কবির
ঝিলমিল ঘুড়ি
বোন চায় মেলা থেকে
লাল নীল চুড়ি
ভাই বলে কিনে দাও
ঝিলমিল ঘুড়ি।
কাগজের ফুল আর
রাঙা বাঁশি কিনি
বোনের জন্য মুখে
মিঠা হাসি কিনি!
সারা মেলা ঘুরে ঘুরে
ফিরি হাতে নিয়ে
মিঠাই শখের হাঁড়ি
খুশি সাথে নিয়ে!
বটতলা জমে গেছে
বৈশাখী মেলা
আনন্দ সুরে যায়
কেটে বাকি মেলা!
মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী
নববর্ষের আনন্দে
রঙ লেগেছে চারিদিকে
সাজাও রঙের ডালা
ঢোল-তবলা বাজাও সবাই
আজকে খুশির পালা।
ঝুন ঝুন শব্দ তুলে
ঝুমঝুমিটা বাজছে
শব্দ শুনে খোকাখুকি
হেলে দুলে নাঁচছে।
টম টম শব্দ করে
চলছেরে টম গাড়ি
উৎসবের আনন্দ আজ
সবার বাড়ি বাড়ি।
এই আনন্দ ঘরে ঘরে
চলুক বছর জুড়ে
নববর্ষের গানে থাকুক
দুঃখ অনেক দূরে!
আবেদীন জনী
বাজায় বাঁশি
বোশেখ এলো রোদ ছড়ালো
হলদে রোদের ডানা
বোশেখ যেন স্বপ্ন আঁকার
রংতুলি একখানা।
কালি-ধুলো দুঃখগুলো
যায় বাতাসে উড়ে
বোশেখ যেন বাজায় বাঁশি
নতুন ছন্দ-সুরে।
বোশেখ এলো রং ছড়ালো
পড়লো মেলার ধুম
মনটা খুকির প্রজাপতি
দুই চোখে নেই ঘুম।
মেলা থেকে কিনবে খুকি
খেলনা রাশি রাশি
শখের হাঁড়ি, ঘোড়ার গাড়ি
পুতুল-বেলুন-বাঁশি।