শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ কেন্দ্রে অবৈধভাবে স্থাপিত মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালিয়ে ৭ প্রজাতির ১৭টি প্রাণি জব্দ করেছে বন্য প্রাণি অপরাধ দমন ইউনিট। 

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে বন্য প্রাণিগুলো জব্দ করা হয়। একই সাথে যেসব প্রাণিদের লাইসেন্স থাকা সাপেক্ষে লালন পালন করা যায় সেগুলোর জন্য লাইসেন্স গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রাণিগুলোর মধ্যে রয়েছে- একটি অজগর, চারটি বন বিড়াল, পাঁচটি বানর, চারটি হরিণ, একটি চিল, একটি গন্ধগোকুল, একটি শিয়ালসহ ১৭টি প্রাণি। তবে হরিণগুলো চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে দিয়ে লাইসেন্স গ্রহণের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। অন্যথায় হরিণগুলো জব্দের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শেরপুর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন গজনী অবকাশ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রকাশ্যে অবৈধভাবে মিনি চিড়িয়াখানা পরিচালনা করে আসছে একটি চক্র। তবে ফরিদ আহমেদ নামের ইজারাদারের হাতে চিড়িয়াখানা পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার সাথে বেড়ে যায় বিভিন্ন প্রাণির উপস্থিতি। তারা টিকিটের মাধ্যমে প্রদর্শন করে আসছে বন্যপ্রাণি। 

প্রাণিগুলো বনের ভিতর থেকে একটি চক্র ধরে এনে এদের কাছে বিক্রি করে। কয়েকমাস আগে চিড়িয়াখানাটিতে অন্তত ২০টি প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণির উপস্থিতি থাকলেও চিকিৎসা ও সঠিক পরিচর্যার অভাবে কমতে থাকে প্রাণিগুলো। 

সম্প্রতি একটি ভাল্লুক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর পর ধামাচাপা দেওয়া হয়। চিকিৎসা সহায়তার জন্য প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকেও নেওয়া হয়নি কোন চিকিৎসা সেবা। এভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রাণি লালনপালনের জন্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয় সমস্ত জেলাজুড়ে।

এ ব্যাপারে চিড়িয়াখানার ইজারাদার ফরিদ আহমেদ বলেন, “শেরপুর জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে আমি দর্শনার্থীদের মাঝে অবকাশ কেন্দ্রটিকে পরিচিত করে আসছি। আজ বন্য প্রাণি অপরাধ দমন ইউনিট থেকে বলা হয়েছে বন্যপ্রাণি এইভাবে রাখা যাবে না। যে সকল প্রাণি সংরক্ষণ করা যাবে সেগুলোর জন্য আমি আবেদন করব।”

এ ব্যাপারে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণি পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা জানান, বন্যপ্রাণি সংগ্রহ, দখলে রাখা, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই এখান থেকে ১৭টি বন্যপ্রাণি জব্দ করা হয়। জব্দকৃত প্রাণিগুলোকে কিছু দিন কোয়ারেন্টিনে রেখে স্বাভাবিক বন্য পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এস.

বি তানভীর আহমেদ ইমন বলেন, “গজনী অবকাশ কেন্দ্রে অবস্থিত মিনিচিড়িয়াখানায় অবৈধভাবে বেশ কিছু বন্য প্রাণি খাঁচায় বন্দী রেখে প্রদর্শন করা হচ্ছিল, যা বন্য প্রাণি সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থি। আর ওখানে বন্য প্রাণি রাখার মতো পরিবেশ ছিল না। জব্দ করা প্রাণিগুলো কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। তারপর প্রাণিগুলোর প্রজাতি অনুযায়ী প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে।”

ঢাকা/তারিকুল/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবক শ ক ন দ র বন য প র ণ র জন য পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রির চেয়ে ডলার কিনছে বেশি

রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রির চেয়ে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কিনছে বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে  বকেয়া দায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ পরিশোধের পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। ডলারের দরে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। মূল্যস্ফীতি আরও কমে এলে আগামী জুনের মধ্যে আইএমএফের শর্ত মেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্টের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আর ডলার বিক্রি হয়নি। এর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রিজার্ভ থেকে ৮০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। পরের দুই মাসে বিক্রি না করে কেনা হয় ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। পরের তিন মাসে বাজার থেকে আরও ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কত ডলার কিনেছে তা জানা যায়নি। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তথ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোর ডলার বেচাকেনার তথ্য নেয়। সেখানে কোন ব্যাংকের কাছে কত ডলার রয়েছে, নিকটতম সময়ে তার কত পরিশোধ করতে হবে– এসব দেখা হয়। এর ভিত্তিতে ডলার কেনা হয়। গত ৫ আগস্টের পর ব্যাংক খাতের নেট ওপেন পজিশন (এনওপি) ৪০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত  হয়েছে। গত বছর যা ঋণাত্মক ছিল। কোনো ব্যাংকের হাতে বেশি ডলার থাকলে প্রথমে সংকটে থাকা অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 
জানা গেছে, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিগত সরকারের রেখে যাওয়া ৩৭০ কোটি ডলারের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে আর বকেয়া রাখার সুযোগ দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গত ৬ এপ্রিল ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় ডলারের জোগান বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রেমিট্যান্স প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশ। এ সময়ে আমদানি সাড়ে ৪ শতাংশ বাড়লেও ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। 
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, এখন আর প্রকৃত দরের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত দরের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এর মূল কারণ বড় অঙ্কের অর্থ পাচার যারা করত তারা হয় জেলে, না হয় নিজেরাই বিদেশে পালিয়ে গেছেন। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ  বেড়েছে। তিনি মনে করেন, বিনিময়হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার এখনই সময়। তা না হলে আইএমএফের ঋণের কিস্তি আটকে গেলে বিষয়টি স্বস্তির হবে না। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কোনো অস্থিতিশীলতা নেই। এ সময়েও যদি বিনিময় হার বাজারের ওপর না ছাড়া হয়, তাহলে কখন ছাড়া হবে।

জুনের মধ্যে ডলার দর বাজারভিত্তিক হচ্ছে
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে গভর্নর জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন দুই অঙ্কের ঘরে থাকা মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। গত মার্চে মূল্যস্ফীতি নেমেছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে। আগামী জুনের মধ্যে ৮ শতাংশে নামার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সময়ে রিজার্ভ পরিস্থিতির আরও উন্নতির আশা করা হচ্ছে। ফলে  আগামী জুনের মধ্যে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি অব্যাহত রাখবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো ব্যাংক বা বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস যেন কারসাজি করে ডলারের দর বাড়াতে না পারে, তা তদারকি করা হবে। বর্তমানে কোনো ব্যাংক হঠাৎ দর বাড়ালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে নীতিমালা করা হবে। একই সঙ্গে যে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসবে ওই ব্যাংকেই বিক্রি বাধ্যতামূলক করা এবং এক ব্যাংকের গ্রাহক আরেক ব্যাংক থেকে ডলার কিনে দায় সমন্বয়ে বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। একই সঙ্গে দৈনিক ভিত্তিতে ডলার বেচাকেনার তথ্য নেওয়া অব্যাহত থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ