রূপগঞ্জে নবজাতক কন্যা শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে রূপগঞ্জ পুলিশ। শনিবার সকালে উপজেলার দাউদপুরের খৈসাইর এলাকার একটি পরিত্যাক্ত ভিটি থেকে কাপড়ে মোড়ানো নবজাতক শিশুরটির লাশ উদ্ধার করা হয়। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, নবজাতক শিশুটির পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশ।

ধারনা করা হচ্ছে মরহেদ  অন্য স্থান থেকে ঘাতকেরা ফেলে রেখে গেছে। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ  জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। 
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র পগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

অংশগ্রহণ বেশি স্বীকৃতি কম

মোমেনা আক্তার। ৪৫ বছর বয়সী এ নারী বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের এক প্রতিচ্ছবি। তাঁর দিন শুরু হয় ভোরে, রান্নাঘরে চুলার ধোঁয়ার মাঝে। সকালের খাবার তৈরি শেষে তিনি স্বামী ও ছেলের সঙ্গে মাঠে যান। সেখানে ধান, আলু, ভুট্টা, ডাল– এসব চাষের কঠোর পরিশ্রমে তিনি সমানভাবে অংশ নেন। মাঠের কাজ শেষ হলে ঘরে ফিরে আবার শুরু হয় রান্না, মাড়াই, পানি আনা– এমন অসংখ্য কাজের ধারাবাহিকতা। মোমেনা একজন নারী কৃষক, যাঁর জীবন-সংসার আর কৃষির শ্রমের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। তিনি বলেন, ‘স্বামী ও ছেলের সঙ্গে আমি মাঠে কাজ করি। তারপরও ঘরের কাজ, রান্না সবই করি। যদি তারা অন্য কৃষকের কাছ থেকে কাজ নিত, তাহলে তাঁকে অনেক মজুরি দিতে হতো। আমি তো প্রতিদিন মাঠে পুরুষের মতো কাজ করি।  আমার কাজের মূল্য কেউ দেয় না।’
মোমেনার স্বামী ও ছেলে মাঠের কাজ শেষে আড্ডায় মেতে ওঠেন বা বাজারে চা খেতে যান। মোমেনার জন্য এমন কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ঈদ ছাড়া কখনোই আমাকে নতুন জামাকাপড় কিনে দেয় না। শুধু পুরুষদের শ্রমকেই সম্মান করা হয়। আমাদের শ্রমের দাম নেই।’  
এ অভিজ্ঞতা মোমেনার একার নয়। বাংলাদেশের লাখো নারী কৃষকের জীবনের প্রতিদিনের বাস্তবতা এমন। তারা মাঠে পুরুষের সমান কাজ করেন। মজুরি ও সম্মানে পিছিয়ে থাকেন। তবুও মোমেনার একটি স্বপ্ন আছে– একদিন নারীর কৃষি শ্রমের জন্য সমান মূল্যায়ন হবে এবং তাদের জীবনযাত্রা আরও ভালোভাবে গড়ে তুলতে পারবেন।
বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘স্ট্যাটাস অব উইমেন ইন এগ্রিকালচার সিস্টেম-২০২৩’ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ছিল ৪৫.৩ শতাংশ, যা ২০০৫ সালের ৩৬.২ শতাংশ থেকে ৯.১ শতাংশ বেড়েছে। এটি বিশ্বে নারীর কৃষিতে অংশগ্রহণের সর্বোচ্চ বাড়ার হার। বিশ্ব গড় (৪০ শতাংশ) থেকে বাংলাদেশে এ হার ৫ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, কৃষি খাতে জড়িত প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষের মধ্যে ১ কোটি ৮৪ লাখই নারী, যা মোট কৃষি শ্রমশক্তির প্রায় ৫৮ শতাংশ। নারী শুধু ধান চাষেই নয়, পোলট্রি, ডেইরি এবং বাণিজ্যিক সবজি চাষেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশে প্রায় ১০ লাখ ক্ষুদ্র খামার রয়েছে, যার ৬০ শতাংশ গ্রামীণ নারীর দ্বারা পরিচালিত। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের ৯০ শতাংশ পালন নারীর হাতে, যার বড় অংশ বাংলাদেশে।
তবে এ অবদানের পরও নারী কৃষকের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ কৃষি শ্রমিকরা দৈনিক গড়ে ৪৫০ টাকা মজুরি পান, যেখানে নারীরা একই কাজের জন্য মাত্র ৩০০ টাকা পান। এ বৈষম্যের পেছনে রয়েছে সামাজিক ধারণা, যেখানে নারীর শ্রমকে পুরুষের তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ফলে পুরুষ শ্রমিকরা শহরমুখী হচ্ছেন। ফলে নারীর কৃষিকাজে অংশগ্রহণ আরও বেড়েছে। এ বর্ধিত অংশগ্রহণের সঙ্গে তাদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। নীতিনির্ধারণ, প্রশিক্ষণ, কৃষিঋণ বা জমির মালিকানায় নারীর অংশগ্রহণ এখনও অনেক কম। এ অবমূল্যায়ন এবং ক্ষমতায়নের অভাব তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। 
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নারী ঘরের কাজ করে, এটা এখন পুরোনো কথায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান গ্রামবাংলায় অধিকাংশ নারী ধান মাড়াই, বিজ রোপণসহ সব কৃষিকাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে। তবে নারীর শ্রমের মূল্যায়ন ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের অংশগ্রহণ থাকে। যখন শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জিত হয়, তখন নারীর সেই অর্থের অধিকার বা দেখভাল করার সুযোগ থাকে না। ফলে অপ্রাপ্তি ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি উন্নয়নের জন্য নারীর কাজের স্বীকৃতি জরুরি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০১২ সাল থেকে গৃহকর্মী ও নারীর সংসারের কাজের স্বীকৃতি দাবি করছে। এ স্বীকৃতি মিললে কিষানির কাজের স্বীকৃতি আদায়ও সম্ভব হবে, যা কৃষি খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে।’
মোমেনা আক্তারের মতো নারী কৃষকরা বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির মেরুদণ্ড। নারীর কৃষি শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করা শুধু সামাজিক ন্যায়বিচার নয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও অপরিহার্য বলে মনে করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ