ইলিশকে গ্লোবাল ফিস উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘যে ১১টা দেশে ইলিশ পাওয়া যায় তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। ইলিশ বিশ্বের মধ্যে একটা সম্পদ, যা বাংলাদেশে আছে। ইলিশের ব্যবস্থাপনা ঠিক মতো করতে পারলে বিশ্বের কাছে তা পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব। তাই ইলিশকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে হবে। জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে তখন যেন দামটা ঠিক থাকে। তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না।’

শনিবার সকালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনার ‘ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রজনন সাফল্য নিরুপণ, জাটকা সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এখনই আমরা ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের যেতে চাই না। তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম প্রজনন আমাদের প্রাণিসম্পদের খুব বেশি উপকার করেনি। এটা আমাদের বুঝতে হবে। ইলিশ প্রকৃতি থেকে আসা একটা মাছ। এটা প্রাকৃতিকই রাখা ভালো। একই সঙ্গে জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে তখন যেন দামটা ঠিক থাকে তা আমাদের দেখতে হবে। তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না।

পরিবেশ ওপর গুরুত্বরোপ করে উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততার প্রভাবতো আছেই, সেই সঙ্গে বৃষ্টি হওয়া না হওয়ার সঙ্গে ইলিশের ডিম ছাড়ার একটা সম্পর্ক আছে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা কী করতে পারি তা দেখার জন্য গবেষকদের আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, আমরা যদি যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। তাহলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। আর ৯৫ ভাগ জেলেরা যদি ইলিশ ধরা বন্ধের সময় তারা না ধরে তাহলে কেন আমরা বাকি কাজটা করতে পারব না। জেলারা যেখানে মাছ ধরতে যায়, সেখানে দস্যুরা আক্রমণ করে। তাদের চিহ্নিত করে ধরতে হবে। আমরা যে মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকি তা যেন জেলেরাই পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

ইলিশের অর্থনৈতিক মূল্যের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মৌসুমে দেশ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ইলিশ রপ্তানি করা সম্ভব। আমরাও ইলিশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারি। তবে আগে আমাদের দেশের মানুষকে ইলিশ খাওয়াতে হবে।

পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, যারা ইলিশ খায় তাদের বুঝতে হবে ইলিশ আর জাটকা এক নয়। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। একদিন পরেই পহেলা বৈশাখে তখন যারা পান্তা-ইলিশ খাবেন তারা মূলত জাটকা খাবেন।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড.

অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন। গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন প্রফেসর ড. ইয়ামিন চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট আম দ র মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চার ঝুঁকি

আমাদের গণতন্ত্র কতটুকু শক্তিশালী এবং এর ভিত্তি কতটা গভীরে, তা একটি প্রশ্ন। গণতন্ত্র যে এ দেশে বারবার হোঁচট খেয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কেন এই দশা, তার কারণ নিয়ে আলোচনার সুযোগ যেমন আছে, তেমনি তা দরকারও বটে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র নানাভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, আবার গণপ্রতিরোধের মধ্য দিয়ে জনগণ নতুন শাসন ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে চেয়েছে। তবে সেই বিশ্বাস উবে যেতে বেশি সময় নেয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জনগণের আস্থা অনাস্থায় রূপান্তরিত হয় শাসকগোষ্ঠীর কাণ্ডজ্ঞানের অভাবে। 

যদিও গণতন্ত্র আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে চর্চার বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি; হয়নি সংস্কৃতির অংশও। গণতন্ত্রচর্চার সুযোগের অভাবে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের পারদ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পাশাপাশি জনগণ ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে প্রতিবাদের উপায় খুঁজতে থাকে। গত কয়েক বছরে আমরা তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি ডিজিটাল মাধ্যমে, বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে। নিঃসন্দেহে ডিজিটাল সামাজিক মাধ্যম জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আওতা বাড়িয়েছে এবং বেশির ভাগ জনগণ একে একটি গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবেই দেখে। তবে সামাজিক মাধ্যম জনমত প্রকাশের টুল হিসেবে কতটা গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক ও ঝুঁকিমুক্ত?  

প্রায়ই দেখি সামাজিক মাধ্যম জনতুষ্টিবাদ সংস্কৃতির একটি মাধ্যম হয়ে উঠছে। এখানে সবকিছুকে একটা নির্দিষ্ট লেন্সের মাধ্যমে দেখার জন্য সামাজিক চাপ তৈরি করা হয়। আবার জনতুষ্টিবাদ দিয়ে বিরোধী পক্ষকে দমনের প্রবণতা আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে যেন স্বাভাবিক ঘটনা। যাকে এক বাক্যে আধিপত্যবাদী ও গণতন্ত্রবিরোধী বলা যায়। অন্যদিকে আজকে জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য সামাজিক মাধ্যমে অপতথ্য ও ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি দেখা যায়, যার বেশির ভাগ রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এর মূল উদ্দেশ্য সত্যের অপলাপ এবং জনগণের মতকে প্রভাবিত করা। আজকাল তো এই প্রপাগান্ডা মেকানিজমের জন্য মানুষের দরকার নেই; অ্যালগরিদম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একটি অপতথ্য সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া যায়। খুব সহজেই মিথ্যা ও অপতথ্যের ভিত্তিতে জনমতকে প্রভাবিত করা যায়। সহিংসতা উস্কে দেওয়া যায়; যার দৃষ্টান্ত আমরা সময় সময় দেখি। 

ইদানীং দেখা যায়, ফেসবুকে কোনো কিছু ভাইরাল না হলে তার আর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ফেসবুকই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিকার পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। এই ব্যবস্থাই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিমূলের কাঠামোগত দুর্বলতাকে নির্দেশ করে। পাশাপাশি আইনের শাসনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। এর মানে, আইনের শাসনকে সামাজিক মাধ্যম এবং এর অ্যালগরিদমের ইচ্ছাধীন করা। যার ফল হচ্ছে, দেশের জনগণের একটি বড় অংশ আইনের শাসনের বাইরে থেকে যাচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এ মুহূর্তে সামাজিক মাধ্যম কি সমাজের গণতান্ত্রিক চর্চার চেতনার সহায়ক, নাকি আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণবিরোধী চর্চার একটি উপায়? এটি সারা পৃথিবীতেই একটি বিতর্কের বিষয়। দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক গণতন্ত্রের নামে আমরা শুধু ভাইরাল কালচারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। অন্যদিকে শুধু ফেসবুককেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, প্রতিদিন শত শত ঘটনা ভাইরালের আড়ালে থেকে যাচ্ছে; কোনো ধরনের প্রতিকারবিহীন। 
ফেসবুককেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চা সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের অভাবে একটি সাময়িক উপায় হতে পারে। কিন্তু এটিই যদি একমাত্র হয়ে ওঠে, তাহলে তার সুবিধার চেয়ে বিপদের হার অনেক বেশি। আমাদের জাতীয় বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে এই বিপদ টের পেয়েছি এবং বিপদ আরও বাড়বে বৈ কমবে না।
সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদম আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চাকে এমন একটা দিকে ধাবিত করবে, যেখানে শুধু পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদের অস্তিত্ব থাকবে এবং সামাজিক বৈচিত্র্য ও ভিন্নমত পড়বে ধ্বংসের মুখে। 

মুক্ত গণতন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের বড় সমস্যা শাসন ব্যবস্থার অতিকেন্দ্রিকতা, আমলানির্ভরতা ও অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। শুধু সেখানেই শেষ না। শাসন কাঠামো ও সমাজ ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারাও বড় সংকট। তাই আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিকতার অর্থ হচ্ছে বিকেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করা। গণতন্ত্রকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেই প্রযুক্তি হতে হবে সবার জন্য সহজলভ্য। গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য শুধু জনগণের মত শোনা না; তাদের মতের প্রতিফলন ঘটনা। আমাদের বাস্তবতায় অনেক সময় পপুলিস্ট পদক্ষেপকে গণতন্ত্র হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যেটাকে টোকেনেস্টিক বা সিলেক্টিভও বলা যায়। এ ধরনের দায়সারা পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরিতে কোনো ভূমিকা রাখে না। যার একটি উদাহরণ হতে পারে এই সময়ে সংঘটিত নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনমতের প্রতিফলনে রাষ্ট্রের ব্যবস্থা। এ ধরনের ব্যবস্থা যতটা না সামগ্রিক পরিবর্তনের জায়গা থেকে, তার চেয়ে অধিক পপুলিস্ট বা দায়সারা গোছের। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সব গোষ্ঠীর জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলে।  
এটিই গণতন্ত্র শক্তিশালী করার উপায়। এখন ক্ষমতাসীনরা এটা করতে চায় কিনা, তা একটি বড় প্রশ্ন। ক্ষমতায় যারা থাকে, তারা এই দরজাগুলো উন্মুক্ত করতে ভয় পায়। জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরি করতে চায় না। ফলে তারা এমন একটি চক্রে পড়ে, যা শাসকশ্রেণিকে স্বৈরাচার বানিয়ে সাধারণ মানুষদেরই ভুক্তভোগী করে তোলে। সেটিই সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চার মূল ঝুঁকি।

নাজমুল আহসান: উন্নয়নকর্মী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টির ৩ নেতার পদত্যাগ
  • জাতীয় পার্টি ছাড়লেন খুলনার সাবেক এমপিসহ ৩ নেতা
  • অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ দাবি জনগণের: আলী রীয়াজ
  • দুই ছাত্রীকে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম
  • সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চার ঝুঁকি
  • ফ্যাসিস্টরা নানাভাবে অভ্যুত্থানকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে: জোনায়েদ সাকি
  • কিছু উপদেষ্টার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জন্মেছে: রিপন 
  • ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগ, তদন্তের আহ্বান সিনেটরদের
  • হাসিনার পতনে গ্রামেগঞ্জে প্রভাব ও আওয়ামী কর্মীদের ভাবনা কী