রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা বিজু উৎসব‌ পালন করেছেন।

‌শনিবার (‌১২ এপ্রিল) রাজশাহীর ফুলতলা ঘাট সংলগ্ন পদ্মানদীতে ফুল ভাসিয়ে তারা এ উৎসব পালন করেন।

এর আগে, সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে র‍্যালি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক ও কাজলা হয়ে রাজশাহীর ফুলতলা যান তারা। এ সময় তাদের সঙ্গে রাবি ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

৫ বিভাগে অনুষ্ঠিত হলো রাবির ভর্তি পরীক্ষা

রাবি ছাত্রীর ভিডিও ধারণ, বহিরাগত দুজনকে পুলিশে সোপর্দ

বিজু উৎসব বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা, ম্রো, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, মারমা প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি অন্যতম প্রধান ও বর্ণিল উৎসব। এটি মূলত বর্ষবরণ উৎসব হিসেবে পালিত হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো মারমা, চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বিজু উৎসব।

এটি বাংলা নববর্ষের (১৪ এপ্রিল) আগের তিন দিনব্যাপী (১২ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত) উদযাপিত হয়। এই তিনদিন তিনটি ভিন্ন নামে পরিচিত।

১২ এপ্রিল প্রথম দিন ফুল বিজু বলা হয়। এদিন খুব সকালে নদী, ঝরনা বা জলাশয়ে গিয়ে ফুল তোলা হয়। এই ফুল দিয়ে দেবতাকে পূজা দেওয়া হয় এবং বাড়ি সাজানো হয়। চারপাশে থাকে আনন্দ, পবিত্রতা ও প্রার্থনার আবহ। নদীতে গিয়ে ফুল ভাসানো হয় প্রাকৃতিক শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

১৩ এপ্রিল দ্বিতীয় দিন মূল বিজু বলা হয়। এটা বিজু উৎসবের মূল দিন। এদিনে বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয়, নতুন কাপড় পরিধান করা হয়, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। বাড়িতে বাড়িতে রান্না হয় বিশেষ ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘পাচন’, যা ৫ থেকে ২১ বা তার বেশি ধরনের শাক-সবজি মিশিয়ে তৈরি করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান, নাচ, হুল্লোড় হয় চারদিকে।

১৪ এপ্রিল তৃতীয় দিন গোজ্যা পোজ্যা বলা হয়। এদিন পুরাতন বছরের দুঃখ-কষ্ট ধুয়ে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। এই দিনে তরুণরা বয়োজ্যেষ্ঠদের পা ধুয়ে দিয়ে সম্মান জানান। অনেকে নদীতে গিয়ে নিজেদেরও স্নান করে পরিশুদ্ধ হন। কিছু এলাকায় পানি খেলা বা জল উৎসবও হয়, যা মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবের সঙ্গে মিলে যায়।

উৎসব সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, “বিজু শুধু একটি উৎসব নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের প্রতীক। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগোষ্ঠীগুলোর সামাজিক বন্ধন, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতির অনন্য বহিঃপ্রকাশ।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের ঐতিহ্যবাহী ফাগুয়া উৎসব

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চা বাগানের জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ফাগুয়া উৎসব উদযাপন হয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার ফুলছড়া চা বাগান মাঠে এই উৎসব উদযাপিত হয়।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেনের সভাপতিত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা ফারুকী প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

এসময় উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এই উৎসবে উপস্থিত থাকার জন্য ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত পৌঁছে বিশেষ কাজে আবার ঢাকা ফিরে যেতে হয়েছে। আগামী বছর আমি সরকারে না থাকলেও দেশেই থাকব। তখন এই ফাগুয়া উৎসবে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করব।’’

অনুষ্ঠানে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে পরিমল সিং বাড়াইক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ফাগুয়া উৎসব উৎযাপন কমিটির সভাপতি ও এনসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রিতম দাশ।

এতে সাতগাঁও চা বাগানে ভুজপুরি শ্রীমোহন লাল কৈরী ও তার দল হোলি গীত পরিবেশন করেন। এছাড়া নিউশামনবাগ চা বাগানের মুক্তি কুর্মী ও তার দল কুরমালি নৃত্য, জঙ্গলবাড়ী চা বাগানের ভেরুনিকা কন্দ ও তার দল কুই নিত্য, শমসের নগর চা বাগানের শেরতেলু তেলেগু-গনেশ আলমিক ও তার দল গানতি বেজনী, শিশেলবাড়ী চা বাগানের ভাগ্যরাজ বল্লম ও তার দল ওড়িয়া নৃত্য, মিরতিংগা চা বাগানের ফুলমনি ও তার দল শারুল নৃত্য; 

ভুরভুড়িয়া চা বাগানের পুজা রিখিয়ানস ও তার দল লাঠি নৃত্য, কাকিয়াছড়া চা বাগানের সীমা মুন্ডা ও তার দল মুন্ডারী নৃত্য, সিন্দুরখান চা বাগানের পুনম বাড়াইক ও তার দল ডমকচ নৃত্য, একই বাগানের চন্দন বুনার্জি ও তার দল ওড়িয়া ভজন নৃত্য, লাখাইছড়া চা বাগানের স্বপন সাঁওতাল ও তার দল সাঁওতাল নৃত্যসহ ১৮টি চা বাগানের চা শ্রমিক নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব নৃত্য প্রদর্শন করেন।

এসময় জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী, আশপাশের চা শ্রমিক পরিবারের সদস্য ও দর্শনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে চা শ্রমিকদের বড় একটি অংশকে এবারের ফাগুয়া উৎসবে দেখা যায়নি।

ঢাকা/আজিজ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হারিয়ে যাওয়ার পথে খাতুনগঞ্জের হালখাতা
  • পানিখেলা আর পাজনের আনন্দ পাহাড়জুড়ে
  • অনেক আয়োজন বন্ধে ম্লান বর্ষবরণ উৎসব
  • জাতীয় জীবনে কবিতার একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে : রেজাউদ্দিন স্টালিন
  • রমনা লেকে ফুল ভাসিয়ে ফুলবিঝু উৎসব
  • শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের ঐতিহ্যবাহী ফাগুয়া উৎসব
  • শ্রীমঙ্গলে ফাগুয়া উৎসবে উঠে এল চা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা
  • কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বিজু ফুল উৎসব
  • খাগড়াছড়িতে বৈসু’র বর্ণিল শোভাযাত্রা