ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ২৫ জেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন অভ্যন্তরীণ বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার, বালুমহাল, পরিবহন, হাটবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ এবং দলীয় কর্মসূচিতে সংঘর্ষে। চট্টগ্রাম জেলায় সর্বোচ্চ ১৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট হানাহানিতে।

সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর নগরের পুরাতন চান্দগাঁও এলাকায় মাঠ দখল নিয়ে যুবদলের দু’পক্ষের সংঘর্ষে সংগঠনটির কর্মী জুবায়ের উদ্দীন বাবু নিহত হন। সেদিন রাতেই মহানগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। সংঘর্ষে জড়িত দুই নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবদল। এই হত্যা মামলায় চান্দগাঁও ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

১১ অক্টোবর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের সংঘাতে বিএনপিকর্মী  মোহাম্মদ ইমন খুন হন। হত্যায় জড়িত অভিযোগে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, তাঁর ভাই থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো.

সবুজ এবং কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলমকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইমন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ আসামির সবাই জামিনে আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

২১ মার্চ নগরীর কুসুমবাগে ঈদ শুভেচ্ছা ব্যানার টাঙানো নিয়ে নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হালিম শাহ আলম ও নগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরীফুল ইসলাম তুহিনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিতে শাহ আলমের অনুসারী যুবদল কর্মী জিহাদুর রহমান জিহাদ নিহত হন। এ হত্যা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১৩ জানুয়ারি মিরসরাই স্টেডিয়ামে শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি ও যুবদলের সংঘর্ষে মো. মুন্না নিহত হন। পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল ইসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রধান আসামি কামরুলসহ গ্রেপ্তার তিন নেতাকর্মী জামিন পেয়েছেন।

মিরসরাই উপজেলা কমিটি ঘোষণার পর বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির দুই নেতার অনুসারীদের সংঘর্ষের সময় জাবেদ হোসেন নামে এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জোরারগঞ্জ থানার ওসি সাব্বির আহম্মেদ সেলিম বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নে ১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে খুন হন দলীয় কর্মী মো. শহীদ। এই মামলায় দু’জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। ১৮ মার্চ একই ইউনিয়নে যুবদলের দু’পক্ষের সংঘর্ষে সংগঠনটির কর্মী মোহাম্মদ রমজান আলী ছুরিকাঘাতে খুন হন। যুবদলের চার নেতাকর্মী এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গত ২ জানুয়ারি সীতাকুণ্ডের ছলিমপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দল নেতা মীর আরমানকে কুপিয়ে খুন করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি রোকন উদ্দিনের অনুসারীরা হত্যা করেছে আরমানকে।

ইট ও বালুর ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে ৯ ফেব্রুয়ারি জঙ্গল ছলিমপুরে মোহাম্মদ মাসুদ নামে এক বিএনপি কর্মী নিহত হন। মামলার এজাহার অনুযায়ী, স্থানীয় বিএনপি নেতা কামরুল হাসান রিদোয়ান ও তাঁর অনুসারীরা মাসুদকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলার বাড়বকুণ্ডে সাগরে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় খুন হন বিএনপি কর্মী রাম দাস। তিন দিন পর কোস্টগার্ড তাঁর লাশ উদ্ধার করে। সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী বিএনপি নেতারা তাঁকে খুন করেছে বলে পরিবারের অভিযোগ। ২৬ মার্চ বাড়বকুণ্ডে নিহত হন সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির। হত্যায় জড়িত অভিযোগে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সন্দ্বীপে গাছুয়া ইউনিয়নে বাড়ি থেকে তুলে বিএনপি কার্যালয়ে পিটিয়ে দলটির কর্মী আইয়ুব জাহাঙ্গীরকে খুন করা হয়। ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য শাহাবুদ্দিন সুমনের নেতৃত্বে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।

১৫ মার্চ রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের আমিরহাট বাজারে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় যুবদল নেতা করম উদ্দিন জিতুকে। বিএনপির কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ১৮ মার্চ জিতুর স্ত্রী ডেজি আক্তার উপজেলা বিএনপির সদস্য মহিউদ্দিন জীবনসহ ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ জানায়, হত্যায় জড়িতরা সবাই পলাতক।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বাঙ্গড্ডা পশ্চিম বাজারে ১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সাবেক এমপি আব্দুল গফুর ভূঁইয়া ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন হেসাখাল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সেলিম উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি গফুর ভূঁইয়ার অনুসারী ছিলেন। মোবাশ্বের ভূঁইয়াসহ ৩৯ জনকে আসামি করে মামলা করেছে নিহতের পরিবার। যুবদলের চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। বাদী আব্দুর রহিম ভূঁইয়া বলেন, আসামিরা জামিনে এসে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। এখন জীবন নিয়েই ভয়ে আছি।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব শামীম গাজী ও বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফারুক কবিরাজের মধ্যে আধিপত্য, মাছঘাট, মেঘনার চর ও কাঁচাবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ৭ এপ্রিল খাসেরহাট বাজারে সংঘর্ষে নিহত হন সাইজ উদ্দিন দেওয়ান। তিনি বিএনপির কর্মী ছিলেন।

ঘাঁটিখ্যাত জেলায় আধিপত্যের সংঘাত
বগুড়া ব্যুরো জানিয়েছে, বিএনপির ঘাঁটিখ্যাত এ জেলায় আধিপত্য বিস্তারের সংঘর্ষে তিন বিএনপি নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। ১০ সেপ্টেম্বর রাতে গোকুল এলাকায় মহাসড়কের পাশে ট্রাক বন্দোবস্তকারী সমিতির কার্যালয়ে হামলায় নিহত হন সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান। গোকুল ইউনিয়ন যুবদলের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক সুমন আহমেদ বিপুলের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন অস্ত্রধারী হামলা করে। পরের দিন ভোরে বিপুলের চাচাতো ভাই যুবদল কর্মী লেদো প্রামাণিককে পিটিয়ে খুন করে মিজানের অনুসারীরা।

স্থানীয়রা জানান, গোকুল বাসস্ট্যান্ড ও বাঘোপাড়া বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিজান ও বিপুলের বিরোধ ছিল। বছর দুই আগে মিজানকে কোপানো হয়। ওই ঘটনায় বিপুলকে বহিষ্কার করেছিল যুবদল। মিজানের স্ত্রী সালমা আক্তার নিশার মামলায় ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা এলাকায় আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে ৭ ফেব্রুয়ারি যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলাম রাশেদের ওপর হামলা হয়। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পাকুল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আহ্বায়ক পদ নিয়ে বিএনপি নেতা আব্দুল হান্নান বাটালু ও তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে রাশেদের ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

পাকুল্লা ইউনিয়ন যুবদল সদস্য রাশেদ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী হাসান নারুনের সমর্থক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর আব্দুল হান্নান বাটালুর বাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। বাটালুর অনুসারী সেলিম হোসেনকে পুলিশে দেয়। তবে বাটালু অধরা।

ইফতারেও খুনোখুনি 
রাজশাহী ব্যুরো জানিয়েছে, ১১ মার্চ তানোরের পাচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিলে সংঘর্ষে সাবেক সভাপতি আব্দুল মোমিনের ভাই গানিউল ইসলাম নিহত হন।

গত ২৭ মার্চ তানোরের চান্দুরিয়া ইউনিয়নে বিএনপির ইফতার মাহফিলে বর্তমান সভাপতি আজাদ আলী ও সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দীন গ্রুপের সংঘর্ষে কৃষক দলের ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক নেকছার আলী নিহত হয়েছেন। আজাদ আলীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নেকছার আলীর চাচা নওসেরাজ শেখ অভিযোগ করেন, আসামিরা সবাই এলাকায় থাকলেও পুলিশ ধরছে না।

গত ৭ মার্চ রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জে মহিলা দলের সহ-ক্রীড়া সম্পাদক লাভলী খাতুন ও সাবেক যুবদল নেতা মারুফ হোসেনের অনুসারীদের সংঘর্ষের সময় কোপানো হয় রিকশাচালক গোলাম হোসেনকে। পরে তিনি মারা যান।

খুলনা বিভাগে আট খুন 
খুলনা ব্যুরো জানিয়েছে, বাগেরহাটের কচুয়ায় ধোপাখালী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি দেপাড়া বাজার এলাকায় সংঘর্ষে আহত শওকত হোসেন ৯ দিন পর মারা যান। তিনি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সভাপতি প্রার্থী লিয়াকত হোসেন বাদী হয়ে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি প্রার্থী আফজাল হাওলাদারসহ ১১ জনের নামে মামলা করেছেন।

গত ৯ নভেম্বর যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় যুবদল কর্মী সন্ত্রাসী পিয়াল হাসান খুন হন। তিনি ঝিকরগাছা বাজারে মুরগির ব্যবসা করতেন। পৌর ছাত্রদলের সভাপতি শামীম রেজাসহ কয়েকজন পিয়ালকে কুপিয়ে জখম করে। পালাতে চাইলে বোমা মারে হামলাকারীরা। পিয়াল একটি স্কুলে আশ্রয় নিলে তাঁকে সেখানেও কোপায় হামলাকারীরা। ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সভাপতি শামীম কারাগারে।

চুয়াডাঙ্গা সদরে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক ৮ মার্চ খুন হন টিসিবির পণ্য নিয়ে দলটির দুই পক্ষে সংঘর্ষে। ২৩ অক্টোবর জেলার দামুড়হুদার বোয়ালমারী গ্রামে বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষে আহত হন ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সুলতান হোসেন। ১ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন ও বিএনপি কর্মী দবির উদ্দিনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হাকিমপুর গ্রামে ১১ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে নিহত হন দলীয় কর্মী মোশাররফ হোসেন।

মাগুরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত ১৯ ডিসেম্বর সদর উপজেলার বেরইল পালতা গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত সাবেক এবং বর্তমান ইউপি সদস্যের সংঘর্ষে শরিফুল ইসলাম নিহত হন। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য আকবর হোসেনের ছেলে।

৩০ আগস্ট সদর উপজেলার ডেফুলিয়া বাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে খুন হন স্থানীয় কৃষক দলের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি ওয়াজেদ আলী।

গত শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জেলা যুবদলের সদস্য মুন্সী মিরান মাল্লিকের। মসজিদের টাকার হিসাব চাওয়ায় গত ৩০ মার্চ তাঁর ওপর হামলা করে মাগুরা ওয়ার্ড বিএনপির নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য জামিরুল ইসলামসহ কয়েকজন। মিরানের মৃত্যুর পর তাঁর সমর্থকরা জামিরুলের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। তিনি এখন এলাকা ছাড়া।

কমিটির বিরোধে কিশোরগঞ্জে দুই খুন
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তাড়াইল উপজেলা বিএনপির সম্মেলন নিয়ে বিরোধে ১২ জানুয়ারি রাউনি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি  আবুল হাসান রতন খুন হন। কটিয়াদীতে ২২ মার্চ স্কুলের কমিটি নিয়ে বিরোধের সংঘর্ষে মুমুরদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আশিক খাঁ  নিহত হন। রতন হত্যায় ছয় এবং আশিক হত্যায় দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।

গত ১৫ জানুয়ারি ছিল তাড়াইল উপজেলা বিএনপির সম্মেলন। সভাপতি প্রার্থী সাঈদুজ্জামান মোস্তফার সমর্থক ছিলেন রতন। সাঈদুজ্জামানের অভিযোগ, আরেক সভাপতি প্রার্থী সারোয়ার হোসেন লিটনের অনুসারীরা রতনকে হত্যা করে। 

কটিয়াদী উপজেলার চাতল বাগহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে বিরোধ ছিল। ২২ মার্চ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা তদন্তে এলে, বিরোধের জেরে আশিক খাঁকে চাপাতি দিয়ে কোপায় প্রতিপক্ষদের লোকজন। ঘটনাস্থল থেকেই আলী হায়দার বাবলু ও আঞ্জু মিয়া নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ময়মনসিংহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, জেলার গফরগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে যুবদলের দুই কর্মী নিহত হন। ৭ আগস্ট জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে পৌর শহরের নতুনবাজার ম্যাক্সিস্ট্যান্ড দখল করতে যান তাঁর সমর্থকরা। সেখানে যুবদলের আরেক নেতা মো. সুমনের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সুমনের সমর্থকরা জসিম উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন উপজেলার কাচারি রোড রেলক্রসিং এলাকায় সবুজ আকন্দ নামে যুবদলের আরেক কর্মীকে হত্যার করা হয়।

নড়াইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, লোহাগড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাহমুদ খান ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস শেখের মধ্যে বিরোধের জেরে ১১ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষ হয়। লোহাগড়ার মল্লিকপুর ইউনিয়নের বিএনপিকর্মী মিরান শেখ ও জিয়া শেখ নিহত হন। তারা দুই ভাই। তাদের আরেক ভাই মল্লিকপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আকরাম শেখ বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাহমুদ খানসহ ৩৩ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

ভোলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, লালমোহন বদরপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ১৮ নভেম্বর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহিদুল্যাহ মেলকার এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল অনুসারীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান তিন দিন পর মারা যান। প্রধান আসামি কামাল কারাগারে। বাকি ২১ আসামি জামিনে রয়েছেন।

গত ১১ মার্চ মনপুরার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের নুরুদ্দিন বাজার এলাকায় ঠিকাদারি কাজ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত হন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ। এ ঘটনায় মামলা হলেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি বিএনপি।

শেরপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলা সদরে ১০ সেপ্টেম্বর বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন বিএনপি সমর্থক  আশরাফুল আলম মিজান ও আরিফুল ইসলাম শ্রাবণ। সদর উপজেলার যুগ্ম আহ্বায়ক জাকারিয়া বাদলকে কামারিয়া ইউনিয়ন এলাকায় ২৫ ফেব্রুয়ারি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। মামলার আসামি লুৎফরকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত ১৮ মার্চ চনপাড়ায় পুনর্বাসন কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারে স্থানীয় যুবদল নেতা শামীম এবং স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রব্বানী গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হন যুবদল কর্মী হাসিবুর রহমান। এ ঘটনায় থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম মিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন হোসাইনকে ৭ ফেব্রুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয়। থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন রবিন বলেন, আক্তার, সোহাগ, রতনসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন সম্প্রতি বিএনপিতে যোগ দিলে মামুন বিরোধিতা করেন। এর জেরে তাঁকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছি।

২৪ ডিসেম্বর রাতে রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বায়েজীদ ও তাঁর সহযোগীদের মারধরে ছাত্রদল নেতা পাভেল মিয়া নিহত হন।

মামুন হোসাইন ও পাভেল মিয়া হত্যার ঘটনায় বিএনপি-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঘিওর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৯ ডিসেম্বর বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে লাভলু আহমেদ নামে ছাত্রদলের সাবেক নেতা নিহত হন। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক মনোয়ার হোসেনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। মামলায় ৭ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এ ছাড়াও সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর, গাজীপুর, ঝিনাইদহ, রংপুর, ফরিদপুর, ঢাকার ধামরাইয়ে একজন করে নিহত হয়েছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ছ ত রদল র স ব ক গ র প ত র হয় ছ ব এনপ র স ব ক র অন স র দ র গ র প ত র কর সদর উপজ ল র অন স র র স প ট ম বর ন র অন স র য বদল ন ত য বদল র স ব এনপ র দ ফ ল ইসল ম ন ত কর ম ম হ ম মদ ন য বদল র ব এনপ উপজ ল র র উপজ ল য় য বদল র সদস য ন র সমর র রহম ন দল ন ত কম ট র র কর ম খ ন কর পর ব র এল ক য় খ ন হন র কর ছ নগর র রগঞ জ গঠন ক ঘটন য় ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

প্রকল্প বন্ধ, কাজও নেই দুর্ভোগে দরিদ্র শ্রমিকরা

অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের (ইজিপিপি) কাজ হঠাৎ করে স্থগিত হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছেন দেওয়ানগঞ্জের ২ হাজার ৮৫৩ শ্রমিক। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে প্রকল্পের আওতাধীন গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাজ।
উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৫৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এতে আর্থিক সুবিধা পায় ২ হাজার ৮৫৩ জন অতিদরিদ্র এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয় আটটি ইউনিয়নের। যার মধ্যে ডাংধরা ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পে ৪৭৫ জন, চরআমখাওয়া ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পে ৪৬৩ জন, পাররামরামপুর ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ৪৪৮ জন, হাতিভাঙ্গা ইউনিয়নে ৬টি প্রকল্পে ২৪৩ জন, বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পে ৪৮৬ জন, চিকাজানী ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ২৯৭ জন, চুকাইবাড়ী ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ১৭২ জন এবং সদর ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ২৬৯ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক কাজ করেন।

তারা একটি পর্বে ৪০ দিন মেয়াদে প্রতিদিন ৪০০ টাকা হারে মজুরি পান। সেই হিসাবে প্রত্যেক শ্রমিক ৪০ দিনে মজরি পান ১৬ হাজার টাকা। একটি পর্বে ৪০ দিন মেয়াদে ২ হাজার ৮৫৩ জন শ্রমিক ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকার সুবিধা ভোগ করেন। এই প্রকল্প অতিদরিদ্র পরিবারে আর্থিক সহায়তা প্রদান ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার নামে দুটি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসে হঠাৎ চলমান প্রকল্পটির দুটি পর্ব স্থগিত হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন প্রকল্পের আওতাধীন ২ হাজার ৮৫৩ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক। বন্ধ হয়ে যায় বন্যায় বিধ্বস্ত গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাজ।
প্রকল্পের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রথম পর্বে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ দিন এবং দ্বিতীয় পর্বে মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪০ দিন; অর্থাৎ একই অর্থবছরে প্রত্যেক শ্রমিক ৮০ দিন কাজ করে মজুরি পেয়েছেন ৩২ হাজার টাকা। এ টাকা তাদের জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্বে ভুগছেন অনেকে।
একাধিক ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ নিচু অঞ্চল। প্রতিবছর বন্যায় এখানকার রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রকল্পের সুবিধাভোগী বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের পোল্যাকান্দি নামাপাড়া গ্রামের কাপাসী বেগম। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর থেকে ৪০ দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করছি। অভাবী সংসার, দ্রব্যমূল্য বাড়তি। এই বাজারে স্বামীর একার আয়ে সংসার চালানো কঠিন। ওই প্রকল্পের কাজ করে সংসারের অভাব কিছুটা দূর হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যাওয়াতে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের মতো অতিদরিদ্র পরিাবরের অভাবের কথা চিন্তা করে প্রকল্পটি চালু করা জরুরি।’

চিকাজানী ইউনিয়নের পূর্ব কাজলাপাড়া আদর্শ গ্রামের হাসেন আলী জানান, কয়েক বছর ধরে ৪০ দিনের প্রকল্পে কাজ করছেন তিনি। ওই টাকায় সংসার বেশ ভালোই চলছিল। হঠাৎ করে প্রকল্পটি স্থগিত হওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়েছে। পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।
চরআমখাওয়া ইউপি সদস্য বাবুল আকতারের ভাষ্য, গ্রামীণ অবকাঠানো সংস্কার ও অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ইজিপিপি প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে অতিদরিদ্র পরিবারে আর্থিক সহায়তা দেওয়া যায়, অন্যদিকে গ্রামের কাঁচা সড়ক সংস্কার করা যায়। কিন্তু প্রকল্পটি স্থগিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁর মতো জনপ্রতিনিধিরা। কারণ প্রতিদিন তাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন সুবিধাভোগীরা। সব দিক বিবেচনায় প্রকল্পটি আবার চালু করা প্রয়োজন।
পাররামরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাঁর ইউনিয়নে ইজিপিপির আওতায় ৫টি প্রকল্পে ৪৪৮ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক কাজ করেছেন। তাদের পরিবারে এই প্রকল্পে অর্জিত অর্থ বিরাট মাত্রায় প্রভাব ফেলেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পটি স্থগিত হওয়ায় অতিদরিদ্র শ্রমিকদের পরিবারে নেমে এসেছে দৈন্যদশা। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন কাঁচা সড়ক রয়েছে সংস্কারহীন। ওইসব সড়ক মেরামতের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি কোনো তহবিল নেই। সবদিক বিবেচনায় প্রকল্পটি আবার চালু করা প্রয়োজন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) খবিরুজ্জামান খান বলেন, ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পটি (ইজিপিপি) কেন স্থগিত রয়েছে, তা জানি না। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে প্রকল্পটি চালুর নির্দেশনা পেলে গ্রামীণ জীবনমান উন্নয়নে কাজ শুরু করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ