কুড়িগ্রামে সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিটের অভিযোগ
Published: 12th, April 2025 GMT
কুড়িগ্রামে চিলমারীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ও ছবি ডিলিট করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে।
অন্যদিকে জেলা পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পুলিশের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অস্ত্র সংক্রান্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার সময় এক তরুণ না জানিয়ে সেই অভিযানের ভিডিও ধারণ শুরু করে। অভিযানের তথ্য ফেসবুকে ফাঁস হতে পারে বলে তার মোবাইল হতে ধারণকৃত ভিডিও ডিলিট করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ওই সাংবাদিকের পরিচয় না জানায় এমনটা ঘটেছে।
এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে জেলা পুলিশ। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সত্য ঘটনা প্রকাশের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল সকালে কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর শহরের মোড় এলাকায় ঈদে চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতুতে ঘুরতে যাওয়া মা-মেয়েকে উত্যক্তের অভিযোগ ওঠে। পরে মাইকিং করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো.
এসময় স্থানীয় সাংবাদিক, স্বদেশ পত্রিকার চিলমারী উপজেলা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম সাদ্দাম ছবি ও ভিডিও ধারণ করলে পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশের এক সদস্য তার ফোনটি কেড়ে নিয়ে ভিডিও ও ছবি ডিলেট করে ফোন ফেরত দেন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপার আসার খবর শুনে সেখানে গিয়ে ভিডিও ও ছবি তোলার সময় পুলিশ সুপার আমার ফোন কেড়ে নিতে বলেন। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়েও তিনি ফোনটি কেড়ে নিতে বলেন। ওনার সাথে থাকা এক পুলিশ সদস্য ফোনটি কেড়ে নিয়ে ছবি ও ভিডিও ডিলিট করেন। আমি সাংবাদিক পরিচয় দেবার পরও আমার সাথে খারাপ আচরণ করেন। মিডিয়া ছুটিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন।”
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান বলেন, “কোনো সরকারি কর্মকর্তা সাংবাদিকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করতে পারেন না। এজন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’’
চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে ১০টার পরে এসপি স্যার এসেছিলেন। কিন্তু ফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনা আমার জানা নেই।”
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “এটি ভুল তথ্য। রাতে অভিযানের সময় একটা ইয়ং ছেলে অন্ধকারে ভিডিও করছিল। তাকে বলেছি ভিডিও করো না। যাস্ট এটুকু। সেতো পরিচয় দেয়নি সে সাংবাদিক। তার আইডি কার্ডও ছিল না। আমরা ভেবেছি ফেসবুকে ছাড়তে ভিডিও করেছে। এজন্য ডিলেট করে দেওয়া হয়। মিডিয়া নিয়ে আমরা এটা বলতে পারি না।”
ঢাকা/বাদশাহ্/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানকে ব্যবহার করে ‘ভিউ ব্যবসা’ : ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ পেতে বা অনলাইনে টাকা আয়ের জন্য নিজের সন্তানকে ক্যামেরার সামনে এনে নানাভাবে নিষ্ঠুর আচরণ করার অভিযোগে ঢাকার সাভারের সেই ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে আশুলিয়া থানায় শিশু আইনে মামলাটি দায়ের করেন উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জামান।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় বসবাসকারী শারমিন শিলা ওরফে ক্রিম আপা পেশায় একজন বিউটিশিয়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ক্রিম আপা নামে পরিচিত। তিনি মেকআপের জন্য কাজ করাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্রিম তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি নিজের ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করে পোস্ট দেন। গত ৩০ মার্চ নিজের ফেসবুক আইডিতে বিকেল চারটার দিকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যা ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শারমিন শিলা তাঁর মেয়ে শিশুকে (আনুমানিক দুই বছর) জোর করে এক হাতে দিয়ে মুখে চাপ দিয়ে হাঁ করিয়ে মেয়ের অসম্মতিতে কেকজাতীয় কিছু খেতে বাধ্য করছেন। তিনি ভাইরাল হওয়ার জন্য এক বছর ধরে দুই শিশু সন্তানের প্রতি মাতৃসুলভ আচরণ না করে শিশুদের আঘাত, উৎপীড়ন, অবহেলাসহ তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। এ ধরনের আচরণের কারণে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিশু আইনের ৭০ ধারায় শারমিন শিলার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে শিশুকে আঘাত, উৎপীড়ন, ও অশালীনভাবে প্রদর্শন করার অভিযোগ করা হয়েছে। আসামিকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
সম্প্রতি শারমিন শিলা ভিউ পেতে বা অনলাইনে টাকা আয়ের জন্য নিজের সন্তানকে ক্যামেরার সামনে এনে নানাভাবে নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগ ওঠে। গত রোববার ‘একাই এক শ’ নামের শিশুদের সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে সাদাত রহমানসহ অন্যরা ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তিন দিনের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনসন্তানকে ব্যবহার করে ‘ভিউ ব্যবসা’, ‘ক্রিম আপা’র ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রশাসন০৭ এপ্রিল ২০২৫তবে কয়েক দিন ধরে শারমিন শিলা ফেসবুকে লাইভে এসে দাবি করেছেন, তিনি তাঁর সন্তানদের কখনোই নির্যাতন করেননি। নির্যাতন করলে তো ক্যামেরার সামনে করতেন না। অন্যরা হিংসা করে এ ধরনের অভিযোগ দিচ্ছেন। তিনি সন্তানদের নিয়ে ভালো আছেন, ছেলেকে দিয়ে বলানো এমন ভিডিও শেয়ার করেছেন। পরে ওই ভিডিও তিনি ডিলিট বা মুছেও ফেলেছেন।
সাভারের বাইপাইল এলাকায় ‘ক্রিম আপা বিউটি পারলার’ নামে শারমিন শিলার একটি বিউটি পারলার আছে। তিনি ভিডিওতে কীভাবে ক্রিম ব্যবহার করতে হবে, তা জানান। এর বাইরে কী রান্না করছেন, কী খাচ্ছেন—এসব নিয়ে ভিডিও করেন।