শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শ্রম আইন সংশোধন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)। সেই সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সহজ করা, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের তালিকা প্রকাশ ও পুনর্বাসন, সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সম্পাদিত ১৮ দফা সমঝোতা চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে পদক্ষেপের দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি।

দাবি আদায়ে পয়লা মে শ্রমিক দিবসে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে আইবিসি।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) নেতারা গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইবিসির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি তৌহিদুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন স্বপন, শাহাদাত হোসেন, কামরুল হাসান, নুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও চায়না রহমান প্রমুখ।

বাবুল আখতার বলেন, সরকার ঘোষিত ৯ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি এখনো অধিকাংশ কারখানায় কার্যকর হয়নি। ঈদ সামনে রেখে সরকারের নির্দেশনা ছিল মার্চ মাসের ১৫ দিনের মধ্যে মজুরি ও উৎসব ভাতা পরিশোধের। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশনা অমান্য করে।

সংগঠনটির নেতারা আরও বলেন, ‘ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের শ্রম ভবনের সামনে আন্দোলন করতে দেখেছি। জীবিকা না থাকলে তারা কোথায় যাবে।’ তাঁরা আরও জানান, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএয়ের কাছে সব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের তথ্য আছে। তারা চাইলেই কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে এবং কোন শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন, সে তথ্য প্রকাশ করতে পারে। শ্রমিকের জীবিকার ওপর এই আঘাতের দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা আরও বলেন, গত ৮ থেকে ৯ মাসে প্রায় ৮০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন। তাঁদের বেশির ভাগেরই এখনো তালিকা ও পুনর্বাসন করা হয়নি। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও শ্রমিকেরা মজুরি, অন্যান্য সুবিধা, ইনক্রিমেন্ট, চাকরি রক্ষা ইত্যাদি দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামছেন।

সংগঠনটির সভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। এখনো ৫০ টির বেশি ট্রেড ইউনিয়নের আসন অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। শ্রমিক ফেডারেশনগুলো দলীয়করণ হচ্ছে। ফেডারেশনগুলোর কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিতে নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে কমিটি গঠন করতে হবে। এ সময় শ্রম আইনের সমালোচনা করে নেতারা বলেন, শ্রম আইন ও নীতি বর্তমান সময়ের সঙ্গে যুগোপযোগী নয়। আশুলিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানে আইনের কিছুটা বাস্তবায়ন দেখা গেলেও নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের এখনো সব আইন বাস্তবায়িত হয়নি।

শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের ওপর দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে পারে, তাহলে শ্রমিক নেতাদের মামলা কেন প্রত্যাহার করতে পারছে না।

এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়ে সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রশংসা করে নেতারা বলেন, পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হলেও এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে আরও কৌশলী ও জোরালো ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করেন নেতারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স গঠনট আইব স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আলোচনায় রাজি হিজবুল্লাহ

ইসরায়েল দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে এবং আকাশপথে হামলা বন্ধ করলে অস্ত্রসমর্পণের বিষয়ে লেবাননের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় রাজি হিজবুল্লাহ। সশস্ত্র সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ এক নেতা রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে তিনি সংগঠনটির এ অবস্থানের কথা জানান।

মাত্র দুই বছর আগে যখন হিজবুল্লাহ নিজেদের ক্ষমতার চূড়ায় অবস্থান করছিল, তখন সংগঠনটিকে নিরস্ত্র করা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনাই ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধ ঘিরে বিধ্বংসী এক সংঘাতে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে ইসরায়েল রীতিমতো ধসিয়ে দেয়। এতে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার এ আলোচনা সেই পরিবর্তনই তুলে ধরছে।

গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন। ওই সময় তিনি অস্ত্রের ওপর রাষ্ট্রের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হিজবুল্লাহর হাতে থাকা অস্ত্রের বিষয়ে সংগঠনটির সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা পোষণ করেন। লেবাননের তিনটি রাজনৈতিক সূত্র এমনটি জানিয়েছে।

হিজবুল্লাহ ২০২৪ সালের লড়াইয়ে ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা এবং হাজারো যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। তাঁদের রকেটের মজুতের বেশির ভাগই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন হলে আরও চাপে পড়ে হিজবুল্লাহ। ইরান থেকে অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে হিজবুল্লাহর ওই নেতা বলেন, জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলের প্রেক্ষাপটে অস্ত্রের বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত সংগঠনটি। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান নেওয়া ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের ওপর।

হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘পাঁচটি অবস্থান থেকে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করলে এবং লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ করলে নিজেদের অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত হিজবুল্লাহ।’

অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনা নিয়ে হিজবুল্লাহর অবস্থান এর আগে প্রকাশ্যে আসেনি। রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় নাম প্রকাশ করতে চায়নি সূত্রগুলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি হিজবুল্লাহর গণমাধ্যম দপ্তর। প্রেসিডেন্টের দপ্তরও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

যুদ্ধের সময় দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে সেখান থেকে বেশির ভাগ সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে দেশটি জানায়, পাঁচটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান নেওয়া সেনারা সেখানে অবস্থান করবেন।

নভেম্বরে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও হিজবুল্লাহর অবস্থানে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ঠিক একই সময়ে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার দাবি জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় চাপে পড়েছে সংগঠনটি। হিজবুল্লাহকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সমর্থিত সবচেয়ে শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী মনে করা হয়।

গত সোমবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘাত এড়াতে অস্ত্রসমর্পণের বিষয়ে প্রস্তুত আছে বলে প্রথমবারের মতো জানিয়েছে ইরান-সমর্থিত কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।

মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করল হুতিরা

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় আল-জাওফ প্রদেশে যুক্তরাষ্ট্রের একটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে হুতিরা। হুতি-সমর্থিত আল মাসিরাহ টিভি চ্যানেল এ কথা জানিয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে এ ধরনের তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলে খবরে বলা হয়।

অত্যাধুনিক এই ড্রোন ১৫ হাজার ২৪০ মিটার উঁচুতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে পারে। ইয়েমেনে বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই ড্রোন ব্যবহার করে আসছে।

গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি রিপার ড্রোন হামলা চালাতেও সক্ষম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলোচনায় রাজি হিজবুল্লাহ